ফ্রান্স: মরুর বুকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পারবেন কি এমবাপে?

কাতার বিশ্বকাপের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। আর কয়েকদিন বাদেই মরুর বুকে পর্দা উঠবে ফুটবলের মহাযুদ্ধের, দেশকে শিরোপা এনে দেওয়ার স্বপ্নে বুঁদ হয়ে মাঠে নামবেন খেলোয়াড়রা। এবারও অন্যতম ফেবারিট ২০১৮ আসরের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। সব বিভাগেই তারকার ছড়াছড়ি তাদের। তবে বিশ্বকাপ জিততে হলে কিলিয়ান এমবাপেকে নিতে হবে গুরুদায়িত্ব, প্রতিভার সবটুকু ঢেলে দিতে হবে পিএসজি তারকাকে।

মাত্র ১৯ বছর বয়সে সর্বোচ্চ মর্যাদার ট্রফিতে চুমু খাওয়া এমবাপে যে দায়িত্ব নিতে ভালোবাসেন সেই প্রমাণ আগেই দিয়েছেন তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে তার একমাত্র গোলেই পেরুকে হারিয়েছিল ফ্রান্স। শেষ ষোল থেকে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে ছিটকে দেওয়ার ম্যাচেও করেছিলেন জোড়া গোল। ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে গৌরব অর্জনের পথেও ছিল তার এক গোল।

ক্লাব ফুটবলে দুরন্ত পথচলার কারণে প্রত্যাশার চাপটাও বেশি থাকবে ফরাসি তারকার ওপর। মেসি-রোনালদো পরবর্তী যুগে সেরার দৌড়ে থাকার ইঙ্গিত বারবারই দিয়েছেন তিনি। চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও লিগ ওয়ান মিলিয়ে ১৯ ম্যাচ খেলে ১৮ গোল করেছেন এমবাপে। মরুর বুকেও এই দুরন্ত ফর্ম ধরে রাখবেন তিনি, এমনটাই প্রত্যাশা ফ্রান্স ভক্তদের।

পিএসজির তুলনায় জাতীয় দলে স্বাধীনতাটাও যে বেশি পেয়ে থাকেন সেকথা নিজেই স্বীকার করেছেন এমবাপে। রয়টার্সকে একবার তিনি বলেছিলেন, 'আমি এখানে অনেক বেশি স্বাধীনতা পেয়ে থাকি (পিএসজির তুলনায়)। কোচ জানে এখানে অলিভিয়েরের (জিরুদ) মতো নয় নম্বর আছে যে (প্রতিপক্ষ) রক্ষণকে ব্যস্ত রাখে। আমি ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াতে পারি, খালি জায়গায় যেতে পারি, বল চাইতে পারি।'

উয়েফা নেশন্স লিগে ফ্রান্সের শেষ দুই ম্যাচে ইনজুরির কারণে ছিলেন না করিম বেনজেমা। অস্ট্রিয়া ও ডেনমার্কের বিপক্ষে সেই দুই ম্যাচে ৩৬ বয়স বয়সী জিরুদের সঙ্গে দারুণ উপভোগ করেছিলেন এমবাপে। একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতে বেশ পছন্দ করেন সাবেক আর্সেনাল ফরোয়ার্ড, ফলে জায়গা নিয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তার অনুজ সতীর্থ।

তবে ২০২২ ব্যালন ডি'অর জয়ী বেনজেমা ইনজুরি কাটিয়ে ফেরায় কাতারে বেঞ্চেই বেশি সময় কাটাতে হতে পারে জিরুদকে। তিনি ছাড়াও আক্রমণভাগে ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশমের হাতে অস্ত্রের নেই কোন অভাব, কিংসলে কোমান-উসমান দেম্বেলে-ক্রিস্টোফার এনকুঙ্কুর মতো গতিশীল ফরোয়ার্ডরাও আছেন দলে। চাইলে আঁতোয়া গ্রিজম্যানের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাতে পারবেন ফরাসি কোচ। ফলে আক্রমণভাগ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই তার।

তবে বিশ্বকাপের আগে দুই তারকা মিডফিল্ডার এনগোলো কান্তে ও পল পগবার ইনজুরি মূল আসরে ভোগাতে পারে ফ্রান্সকে। অরেলিয়ান চুয়ামেনি, এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গারা সাম্প্রতিক সময়ে আলো ছড়ালেও বড় মঞ্চের চাপ কতোটা সামলে উঠতে পারবেন থাকছে সেই শঙ্কাও। এদিকে রক্ষণেও আছে ইনজুরি সমস্যা, তারকা ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানে ভুগছেন চোটে। তবে প্রেসনেল কিম্পেম্বে, ডাওট উপমেকানোরা থাকায় বড় ধরণের ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে না ফরাসিদের।

সার্বিক বিবেচনায় মরুর বুকে মূল দায়িত্বটা নিতে হবে তারকাখচিত ফরাসি আক্রমণভাগকেই। এমবাপে-বেনজেমা জুটি জ্বলে উঠলে কঠিন দিন কাটাতে হতে পারে যেকোনো প্রতিপক্ষ রক্ষণকেই। এদিকে ২০২০ ইউরোর শেষ ষোলতে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি মিসের আক্ষেপ ঘুচাতে নিশ্চিতভাবেই মুখিয়ে থাকবেন এমবাপে। সেবার ফ্রান্সকে তার ভুলের মাসুল দিতে হয়েছিল আসর থেকে ছিটকে গিয়ে।

কাতারে শিরোপা ধরে রাখতে নিজ স্বার্থের তুলনায় দলীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দিতে হবে এমবাপেকে। ফরাসি কিংবদন্তি থিয়েরি অঁরিও একই আর্জি রেখেছেন পিএসজি তারকার কাছে। ভক্তদেরও থাকবে একই প্রত্যাশাও, ২৪ বছর আগে জিনেদিন জিদানের হাত ধরে প্রথম শিরোপা পাওয়া ফরাসিরা মরুর বুকে আরও একবার মাততে চায় ট্রফি জয়ের উল্লাসে। 

২০২২ বিশ্বকাপে ডি গ্রুপে লড়বে লড়বে ফ্রান্স। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও তিউনিসিয়া। কোন দুর্ঘটনা না ঘটলে শক্তির বিচারে বাকিদের চেয়ে এগিয়ে থাকা ফরাসিদের নকআউট পর্বে যাত্রা অনুমিত। তবু সতর্ক থাকতে হবে এমবাপে-বেনজেমাদের, পা হড়কালেই ডুবতে হবে লজ্জায়।     

অতীত বিশ্বকাপগুলোতে ফ্রান্স

মোট ১৫বার বিশ্বকাপ খেলার সৌভাগ্য হয়েছে ফ্রান্সের। সর্বশেষ ছয়টি আসরেই খেলেছে তারা। ১৯৯৮ ও ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জয় এই প্রতিযোগিতায় তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য। ২৪ বছর আগে ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে এই কীর্তি গড়ে ফরাসিরা, ২০১৮ সালে ক্রোয়েশিয়াকে হারায় ৪-২ ব্যবধানে।

যেভাবে ২০২২ বিশ্বকাপে ফ্রান্স

বাছাইপর্বে পাঁচ জয় ও তিন ড্র নিয়ে দাপটের সঙ্গে মূল আসরে জায়গা করে নিয়েছে ফ্রান্স। ১৮বার তারা খুঁজে নিয়েছে প্রতিপক্ষের জাল, বিপরীতে হজম করেছে মাত্র তিন গোল। তবে সাম্প্রতিক ফর্ম খুব একটা ভালো নয় দলটির, উয়েফা নেশন্স লিগের ডেনমার্কের বিপক্ষে দুইবার ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে একবার হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছে তাদের।

ফ্রান্সের বিশ্বকাপ স্কোয়াড

গোলরক্ষক: হুগো লরিস (টটেনহ্যাম হটস্পার), আলফোনসে আরেওলা (ওয়েস্টহ্যাম), স্টিভ মান্দান্ডা (রেনেঁ)

ডিফেন্ডার: উইলিয়াম সালিবা (আর্সেনাল), ইব্রাহিমা কোনাতে (লিভারপুল), ডাওট উপমেকানো (বায়ার্ন মিউনিখ), রাফায়েল ভারানে (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), লুকাস হার্নান্দেজ (বায়ার্ন মিউনিখ), থিও হার্নান্দেজ (এসি মিলান), প্রেসনেল কিম্পেম্বে (পিএসজি), বেঞ্জামিন পাভার্ড (বায়ার্ন মিউনিখ), জুলস কুন্ডে (বার্সেলোনা)

মিডফিল্ডার: ইউসুফ ফোফানা (মোনাকো), ম্যাটিও গুয়েনডোজি (মার্সেই), অ্যাড্রিয়েন রাবিওট (জুভেন্টাস), অরেলিয়ান চুয়ামেনি (রিয়াল মাদ্রিদ), এডুয়ার্ডো কামাভিঙ্গা (রিয়াল মাদ্রিদ), জর্ডান ভেরেটআউট (মার্সেই)

ফরোয়ার্ড: করিম বেনজেমা (রিয়াল মাদ্রিদ), কিংসলে কোমান (বায়ার্ন মিউনিখ), উসমানে দেম্বেলে (বার্সেলোনা), অলিভিয়ের জিরুদ (এসি মিলান), আতোঁয়া গ্রিজমান (অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ), কিলিয়ান এমবাপে (পিএসজি), ক্রিস্টোফার এনকুঙ্কু (লাইপজিগ)।

Comments

The Daily Star  | English
Ishraque Demands Advisers Asif, Mahfuj Alam Resign

Protests continue as Ishraque vows to stay on streets until advisers resign

Protests rolled into this morning as BNP activists and leaders held their ground in front of the mosque, demanding that Ishraque be allowed to take the oath as mayor

2h ago