দেখুন সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারে নির্মিত কাতারের স্টেডিয়ামগুলো
ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নামবে ৩২টি দল। ৬৪টি ম্যাচ হবে আটটি স্টেডিয়ামে। যার প্রতিটিতে আছে আধুনিক সমস্ত উপকরণ আর নান্দনিকতার ছোঁয়া।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে কাতারে বসতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের আসর। অভিবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার রক্ষা না হওয়াসহ নানা অভিযোগ থাকলেও আয়োজনে কোনো ত্রুটি রাখেনি তেলসমৃদ্ধ দেশটি।
স্টেডিয়ামগুলোর সাজসজ্জায় প্রাধান্য পেয়েছে কাতারের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। কোনোটি দেখতে নৌকার মতো, কোনোটি আবার বানানো হয়েছে শিপিং কন্টেইনার দিয়ে। সব স্টেডিয়ামেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সৌরবিদ্যুৎ-চালিত কুলিং প্রযুক্তি থাকবে।
আটটি স্টেডিয়ামের সাতটি নতুন করে নির্মাণ করেছে কাতার। সেজন্য সব মিলিয়ে ৬.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। তবে বিশ্বকাপের পর মাত্র ২৮ লাখ লোকের দেশে এতগুলো স্টেডিয়ামের দরকার পড়বে না। তাই পরবর্তীতে ভেঙে ফেলা, আসন কমানোসহ বিভিন্নভাবে সেগুলোকে কাজে লাগানো হবে।
ছোট আকারের দেশ কাতারে দুটি স্টেডিয়ামের মধ্যে সর্বোচ্চ দূরত্ব মাত্র ৩৪ মাইল, আর সর্বনিম্ন দূরত্ব মোটে ৪ মাইল। ফলে দর্শকদের একদিনে একাধিক ম্যাচ উপভোগের সুযোগ রয়েছে। সেজন্য অভ্যন্তরীণ বিমানে চড়ারও প্রয়োজন পড়বে না, মেট্রোতেই তারা যাতায়াত করা যাবে।
কাতার বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামসমূহ:
লুসাইল স্টেডিয়াম, লুসাইল
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৮০ হাজার
এটি কাতারের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। বিশ্বকাপের ফাইনালসহ সর্বোচ্চ ১০টি ম্যাচ হবে এখানে। বিশ্বকাপ শেষে স্টেডিয়ামটি একটি কমিউনিটিতে রূপান্তরিত হবে যেখানে থাকবে স্কুল, দোকান, ক্যাফে, খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা ও ক্লিনিক।
আল বাইত স্টেডিয়াম, আল খোর
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৬০ হাজার
একটি বিশাল তাঁবুর আকৃতির কাঠামো রয়েছে স্টেডিয়াম জুড়ে। এটির নামকরণ করা হয়েছে বাইত আল শা'আ নামক তাবু অনুসারে যা মূলত কাতার ও উপসাগরীয় অঞ্চলের যাযাবর মানুষদের ঐতিহাসিকভাবে ব্যবহৃত তাঁবু। বিশ্বকাপ শেষে স্টেডিয়ামের উপরের অংশটি ভেঙে ফেলা হবে। এখানে আসরের উদ্বোধনী ম্যাচসহ নয়টি ম্যাচ হবে।
আল থুমামা স্টেডিয়াম, দোহা
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৪০ হাজার
আল থুমামা স্টেডিয়ামটি 'গাহফিয়া' টুপির নকশায় অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা। এটি আরব বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের অংশ। বিশ্বকাপের পর স্টেডিয়ামটির ধারণক্ষমতা ২০ হাজার আসনে নামিয়ে আনা হবে। আটটি ম্যাচ হবে এই ভেন্যুতে।
আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়াম, আল রাইয়ান
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৪০ হাজার
এখানে অনুষ্ঠিত হবে সাতটি ম্যাচ। স্টেডিয়ামটিতে কাতারের সংস্কৃতির প্রতিফলন ফুটে উঠেছে। বিশ্বকাপ শেষে প্রায় ২০ হাজার আসন কমানো হবে এবং আসনগুলি বিদেশে ফুটবল উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে দেওয়া হবে।
আল জানোব স্টেডিয়াম, আল ওয়াকরা
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৪০ হাজার
মাছ ধরা ও মুক্তা সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী 'ধো' নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে স্টেডিয়ামটি। এখানে ম্যাচ হবে সাতটি। এটি একটি বিস্তৃত ক্রীড়া কমপ্লেক্সের অংশ যেখানে সাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে রেস্তোরা রয়েছে।
খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, আল রাইয়ান
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৪৫ হাজার ৫০০
১৯৭৬ সালে প্রথমবার নির্মাণের পর এটির অবকাঠামোগত পরিবর্তন করা হয়েছে। স্টেডিয়ামটিতে আংশিকভাবে ঢেকে দেওয়া গ্যালারি আছে। এটির খুব কাছেই অবস্থিত ৩-২-১ কাতার অলিম্পিক ও স্পোর্টস মিউজিয়ামে। এখানে গড়াবে আটটি ম্যাচ।
এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম, আল রাইয়ান
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৪০ হাজার
স্টেডিয়ামটির চারপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি বিশ্ব-মানের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। হীরার আদলে নির্মিত স্টেডিয়ামটির আসন সংখ্যা বিশ্বকাপের পর ২৫ হাজারে নামিয়ে আনা হবে এবং অতিরিক্ত আসনগুলো দান করা হবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। এই মাঠে ম্যাচ হবে আটটি।
স্টেডিয়াম ৯৭৪, দোহা
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৪০ হাজার
বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটিই প্রথম পুরোপুরি অপসারণযোগ্য ভেন্যু। এটি তৈরি করা হয়েছে শিপিং কন্টেইনার দিয়ে। বিশ্বকাপের পর স্টেডিয়ামটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলা হবে এবং উপকরণগুলো ফের ব্যবহার করা হবে। এখানে অনুষ্ঠিত হবে সাতটি ম্যাচ।
Comments