অদম্য সৌদির কাছে অঘটনের শিকার শিরোপাপ্রত্যাশী আর্জেন্টিনা

বিরতির পর পাল্টে গেল লড়াইয়ের মোড়। সৌদি আরব অদম্য মানসিকতার পরিচয় দিয়ে ঘুরে দাঁড়াল দারুণভাবে।
ছবি: এএফপি

লিওনেল মেসি শুরুতেই সফল পেনাল্টিতে এগিয়ে দিলেন আর্জেন্টিনাকে। বিরতির আগে আরও তিনবার দলটি বল জালে পাঠালেও সবগুলো বাতিল হলো অফসাইডের কারণে। দ্বিতীয়ার্ধে পাল্টে গেল লড়াইয়ের মোড়। সৌদি আরব অদম্য মানসিকতার পরিচয় দিয়ে ঘুরে দাঁড়াল দারুণভাবে। পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে দুবার জালের ঠিকানা খুঁজে নিল তারা। সেই লিড দলটি ধরে রাখল শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত। অনেক চেষ্টা করেও আর সমতায় ফিরতে পারল না আলবিসেলেস্তেরা। অঘটনের শিকার হয়ে হার দিয়ে কাতার বিশ্বকাপ শুরু করল শিরোপাপ্রত্যাশী আর্জেন্টিনা।

লুসাইল স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার 'সি' গ্রুপের ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে ২-১ গোলে হেরেছে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধের শুরুর দিকে মেসির স্পট-কিকে লিড নেয় লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা। দ্বিতীয়ার্ধে এশিয়ার দল সৌদি আরব দেখায় অসাধারণ নৈপুণ্য। সালেহ আল শেহরির লক্ষ্যভেদে সমতায় ফেরার পর তাদের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন সালেম আল দাওসারি। আর্জেন্টাইনদের হতাশ করতে এরপর চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স উপহার দেন সৌদির গোলরক্ষক মোহাম্মেদ আল ওয়াইস ও ডিফেন্ডাররা।

এই হারে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের অভিযানে লাগল জোর ধাক্কা। পাশাপাশি থামল তাদের টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার যাত্রাও। সবশেষ ২০১৯ সালে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের কাছে হেরেছিল তারা। মেসিরা পরাস্ত হওয়ায় টিকে গেলে ইতালির কীর্তি। টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার বিশ্ব রেকর্ড তাদের দখলে।

ছবি: এএফপি

বল দখলে বরাবরের মতো এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। ৬৯ শতাংশ সময় তাদের দখলে ছিল বল। তারা প্রতিপক্ষের গোলমুখে ১৫টি শট নিয়ে ছয়টি রাখে লক্ষ্যে। অন্যদিকে, সৌদির তিনটি শটের দুটি ছিল লক্ষ্যে।

ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই সৌদির রক্ষণে ভীতি ছড়ায় আর্জেন্টিনা। ১২ গজ দূর থেকে মেসির নেওয়া নিচু শট ফিরিয়ে দেন আল ওয়াইস। ছয় মিনিট পর ডি-বক্সে লেয়ান্দ্র পারেদেসকে আলি আল বুলাইহি ফাউল করলে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে ভুল করেননি রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি'অর জয়ী মেসি। ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে পাঠান তিনি। এতে বিশ্বকাপের দুটি রেকর্ডে নাম লেখান ৩৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে পঞ্চম বিশ্বকাপে খেলছেন তিনি। এছাড়া, পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে চারটি বিশ্বকাপে গোল দেওয়ার কীর্তি গড়েন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।

এরপর আর্জেন্টিনার তিনটি গোল বাতিল হয় অফসাইডের কারণে। ম্যাচের ২২তম মিনিটে মেসি নিশানা ভেদ করলেও তা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। আর ২৮ ও ৩৪তম মিনিটে স্ট্রাইকার লাউতারো মার্তিনেজ আল ওয়াইসকে পরাস্ত করলেও সেগুলো স্কোরলাইনে কোনো বদল আনেনি। ফলে লিডের স্বস্তি নিয়েই বিরতিতে যায় স্কালোনির দল।

দ্বিতীয়ার্ধে আবার খেলা শুরু হলে সৌদিদের দেখা যায় ভিন্ন মেজাজে। হাই ব্যাক-লাইন ও পাল্টা-আক্রমণ নির্ভর কৌশল বজায় রেখে প্রথম থেকেই সমতায় ফেরার প্রয়াসে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে তারা। ম্যাচের ৪৮তম মিনিটে আর্জেন্টিনাকে বিস্মিত করে দেয় দলটি। ডি-বক্সে পায়ের কারুকাজে ডিফেন্ডার ক্রিস্টিয়ান রোমেরোকে এড়িয়ে কোণাকুণি শটে স্কোরলাইন ১-১ করেন আল শেহরি।

পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে আবার গোলের উৎসব করে সৌদি। আর্জেন্টাইন শিবিরে নেমে আসে রাজ্যের হতাশা। ডি-বক্সের প্রান্ত থেকে অসাধারণ বাঁকানো শটে জাল খুঁজে নেন আল দাওসারি। গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ হাওয়ায় ভেসে বলে হাত ছোঁয়ালেও তা গোললাইন অতিক্রম করা থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হন।

ধাক্কা সামলে সমতা টানতে আর্জেন্টিনা জোর চেষ্টা চালাতে থাকে। ৬৩তম মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে সতীর্থের বিপজ্জনক ক্রসে মাথা ছোঁয়াতে পারেননি লাউতারো। নয় মিনিট পর উইঙ্গার আনহেল দি মারিয়ার দুর্বল শট লুফে নিতে বেগ পেতে হয়নি আল ওয়াইসের।

৮৪তম মিনিটে দি মারিয়ার ক্রসে খুব কাছ থেকে হেড করেছিলেন মেসি। কিন্তু তার হেডে জোর না থাকায় বিপদ ঘটার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ফুটবলারদের চোট, বদলি খেলোয়াড় নামানোসহ নানা কারণে অতিরিক্ত আট মিনিট যোগ করা হয়। হন্যে হয়ে গোলের খোঁজ করতে থাকলেও সফল হয়নি আর্জেন্টাইনরা। বদলি নামা হুলিয়ান আলভারেজ যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন। তার শট গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন সৌদির ডিফেন্ডার আব্দুলেলাহ আল আমরি। ছয় মিনিট পর আলভারেজের হেড ফাঁকি দিতে পারেনি আল ওয়াইসকে।

সৌদির কাছে হার মানায় আর্জেন্টিনার গ্রুপ পর্বের বাধা পেরোনো নিয়ে দেখা দিল শঙ্কা। পরের দুই ম্যাচে মেসিদের প্রতিপক্ষ যথাক্রমে মেক্সিকো ও পোল্যান্ড। অন্যদিকে, চমক দেখানো সৌদি আরবের বিশ্বকাপ শুরু হলো স্বপ্নের মতো।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago