অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু ফ্রান্সের
দলের এক ঝাঁক সেরা তারকা ছিটকে গেছেন ইনজুরির কারণে। কিন্তু মাঠে তার এতটুকু অভাব টের পায়নি ফ্রান্স। অলিভার জিরুদ, কিলিয়ান এমবাপে, আদ্রিয়ান রাবিউতরা জ্বলে উঠলেন স্বরূপে। তাতে পাত্তাই পায়নি অস্ট্রেলিয়া। বড় ব্যবধানে জিতেই বিশ্বকাপ ধরে রাখার মিশন শুরু করল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
মঙ্গলবার রাতে আল ওয়াকরাহর আল জানোব স্টেডিয়ামে ফিফা বিশ্বকাপের 'ডি' গ্রুপের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছে ফ্রান্স। দলের হয়ে জোড়া গোল করেছেন জিরুদ। একটি করে গোল পেয়েছেন এমবাপে ও রাবিউত। রাশিয়ায় গত আসরেও একই গ্রুপে পড়েছিল দলদুটি। সেবার সকারুদের ২-১ গোলে হারিয়েছিল তারা।
এর আগে বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট হিসেবে খেলতে গিয়ে দুইবারই গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে হেরেছিল ফ্রান্স। ২০০২ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচে সেনেগালের কাছে এবং ২০১০ সালে আগের বারের রানার্সআপ হয়ে খেলতে গিয়ে মেক্সিকোর কাছে হেরেছিল দলটি।
দেশের হয়ে এদিন গোলের নতুন এক রেকর্ড গড়েছেন জিরুদ। ছুঁয়ে ফেলেছেন কিংবদন্তি থিয়েরি অরিঁকে। ফ্রান্সের হয়ে এতো দিন ৫১টি গোল দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন তিনি। এদিন জোড়া গোল করে তাকে স্পর্শ করেন এ ফরোয়ার্ড। অথচ করিম বেনজেমা সুস্থ থাকলে প্রথম একাদশে নামাই হতো না এ মিলান ফরোয়ার্ডের।
ম্যাচের শুরুতে নিজেদের গোছাতে পারেনি ফরাসিরা। সে সুযোগে তাদের চমকে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে পিছিয়ে পড়ার পর নিজেদের ধীরে ধীরে গুছিয়ে নেয় দলটি। এরপর আধিপত্য বিস্তার করে ৬৩ শতাংশ সময় বল দখলে রাখে তারা। ২৩টি শট নিয়ে ৭টি লক্ষ্যে রাখে দলটি। অন্যদিকে ৪টি শটের মাত্র একটি লক্ষ্যে রাখতে পারে অস্ট্রেলিয়া।
ম্যাচের নবম মিনিটে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের স্তব্ধ করে দেয় অস্ট্রেলিয়া। নিজের অর্ধ থেকে হ্যারি সাউটারের বাড়ানো বল ডান প্রান্তে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোলমুখে ক্রস করেন ম্যাথিউ লাকি। একে বাড়ে ফাঁকায় পেয়ে যান ক্রেইগ গুডউইন। বল পেয়ে জোরালো এক শটে জাল খুঁজে নেন এ ফরোয়ার্ড।
গোল হজমের সঙ্গে সঙ্গে আরও একটি ধাক্কা খায় ফ্রান্স। লাকির সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে ইনজুরিতে পড়েন ডিফেন্ডার লুকাস হার্নান্দেজ। ফলে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
২১তম মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া মিচেল ডিউকের জোরালো শট প্রায় বারপোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পাঁচ মিনিট পর ম্যাচে ফিরে আসে ফরাসিরা। কর্নার থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সে ক্রস করেন বদলি খেলোয়াড় থিও হার্নান্দেজ। দারুণ এক হেডে দিক বদলে বল জালে পাঠান রাবিউত।
এর পাঁচ মিনিট গোল উপহার পায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। নিজেদের অর্ধে বিপজ্জনক জায়গায় বল হারান নাথানিয়েল অ্যাটকিনসন। বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে ফাঁকায় থাকা জিরুদকে খুঁজে নেন রাবিউত। গোল মুখে বল পেয়ে আলতো টোকায় জালে পাঠাতে কোনো ভুল হয়নি এ মিলান ফরোয়ার্ডের।
এরপর ৩৫তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলেন জিরুদ। কিন্তু উড়িয়ে মারেন তিনি। পাঁচ মিনিট পর দেম্বেলেও ফাঁকায় পেয়ে উড়িয়ে মারেন। ৪২তম মিনিটে এমবাপের ব্যাকপাস থেকে বল পেয়ে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন গ্রিজমান। কিন্তু অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৪৫তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ এ সুযোগ নষ্ট করেন এমবাপে। নিজেদের অর্ধ থেকে সতীর্থের বাড়ানো থ্রু পাস ডান প্রান্তে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোলমুখে রেখেছিলেন গ্রিজমান। একেবারে ফাঁকায় হাওয়ায় ভাসা বলে ভলি করেছিলেন এমবাপে। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে বারপোস্টের উপর দিয়ে গেলে ব্যবধান বাড়েনি।
তবে পরের মিনিটে সমতায় ফিরতে পারতো অস্ট্রেলিয়া। বড় বাঁচা বেঁচে যায় ফ্রান্স। বাঁ প্রান্ত থেকে নেওয়া রিলে ম্যাকগ্রির কাটব্যাক থেকে দারুণ এক হেড দিয়েছিলেন জ্যাকসন আরভিন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার বার পোস্টে লেগে বেরিয়ে গেলে হতাশ হতে হয় সকারুদের।
৫০তম মিনিটে হার্নান্দেজের কাটব্যাক থেকে দারুণ এক বাই সাইকেল কিক নিয়েছিলেন জিরুদ। কিন্তু অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। ১৬ মিনিট পর গ্রিজমানের গড়ানো শট গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারলেও একেবারে গোলমুখ থেকে ঠেকান এক ডিফেন্ডার। তবে পরের মিনিটেই ব্যবধান বাড়ায় ফ্রান্স। ডান প্রান্ত থেকে উসমান দেম্বেলের নিখুঁত এক ক্রস থেকে দারুণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন এমবাপে।
৭২তম মিনিটে এবার গোল করান এমবাপে। বাঁ প্রান্ত থেকে এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে ডি-বক্সের সামান্য বাইরে থেকে নেওয়া কাটব্যাক থেকে লাফিয়ে উঠে দারুণ এক হেডে বল জালে পাঠান জিরুদ। নির্ধারিত সময়ে শেষ মিনিটে কোনাতের হেড অস্ট্রেলিয়ান গোলরক্ষক ম্যাট রায়ান ঝাঁপিয়ে না ঠেকালে ব্যবধানটা বাড়তে পারতো আরও।
Comments