সুযোগ হাতছাড়ার মহড়া দিয়ে বেলজিয়ামের কাছে হারল কানাডা

ছবি: এএফপি

ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে বেলজিয়ামের অবস্থান দুইয়ে, কানাডা রয়েছে ৪১ নম্বরে। কিন্তু দুই দলের মধ্যকার শক্তি ও অভিজ্ঞতার বিস্তর ব্যবধান যেন উল্টো হয়ে দেখা দিল মাঠের লড়াইয়ে! ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপে ফেরা কানাডা আক্রমণের বন্যা বইয়ে দিলেও ফরোয়ার্ডরা করলেন ভীষণভাবে হতাশ। গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়ার বীরত্বের পাশাপাশি মিচি বাতশুয়াইর লক্ষ্যভেদে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল বেলজিয়াম।

বুধবার রাতে কাতার বিশ্বকাপের 'এফ' গ্রুপের ম্যাচে সুযোগ নষ্টের মহড়া দিয়েছে কানাডিয়ানরা। আল রাইয়ানের আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে তারা বেলজিয়ানদের কাছে হার মেনেছে ১-০ গোলে। গত রাশিয়া বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান পাওয়া রেড ডেভিলদের পক্ষে প্রথমার্ধের শেষদিকে জয়সূচক গোলটি করেন স্ট্রাইকার বাতশুয়াই। এর আগে আলফনসো ডেভিসের পেনাল্টি কিক রুখে দেন কর্তোয়া। ফলে সৌভাগ্যক্রমে পাওয়া জয়ে আসরে শুভ সূচনা করেছে রবার্তো মার্তিনেজের শিষ্যরা।

বল দখলে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের দলটি ম্যাচে কতটা দাপট দেখিয়েছে তা ফুটে ওঠে পরিসংখ্যানে। প্রতিপক্ষের গোলমুখে তারা নেয় ২১টি শট। তবে আক্রমণভাগের ফুটবলারদের ব্যর্থতায় মাত্র তিনটি শট লক্ষ্যে রাখতে পারে তারা। অন্যদিকে, নিজেদের ছায়া হয়ে থাকা বেলজিয়ামও তিনটি শট রাখে লক্ষ্যে। কিন্তু তারা প্রতিপক্ষের গোলমুখে নিতে পারে কেবল নয়টি শট।

অতীতে একবারই বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা গিয়েছিল কানাডাকে। মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ১৯৮৬ সালের আসরে তারা বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকে। তিন ম্যাচ খেলে কোনো গোল করতেও ব্যর্থ হয়েছিল তারা। এবার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও সেই ধারার ইতি টানতে পারল না দলটি। অসফল স্পট-কিকে আক্ষেপ তৈরি করেন কানাডার সবচেয়ে বড় তারকা ও বায়ার্ন মিউনিখের ডিফেন্ডার ডেভিস।

চাপের মুখেও গোলপোস্ট অক্ষত রেখে বেলজিয়াম গড়েছে দারুণ এক কীর্তি। তারা ভাগ বসিয়েছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের একটি রেকর্ডে। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে এই নিয়ে তারা টানা আট ম্যাচ জিতল। তাদের এই অপ্রতিরোধ্য যাত্রার শুরুটা হয়েছিল ২০০২ বিশ্বকাপে। সেবার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে রাশিয়াকে হারায় তারা। পরের দুই বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেনি বেলজিয়াম। এরপর ২০১৪ সালে প্রথম রাউন্ডে আলজেরিয়া, রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জেতে তারা। আর গত আসরে তাদের কাছে পরাস্ত হয় পানামা, তিউনিসিয়া ও ইংল্যান্ড।

ম্যাচের প্রথম মিনিটেই কানাডার গোলরক্ষকের পরীক্ষা নেন তুরস্কের ক্লাব ফেনারবাচের বাতশুয়াই। তার দূরপাল্লার শট অবশ্য সহজেই আটকে দেন মিলান বোরিয়ান। তখন মনে হচ্ছিল, প্রত্যাশা অনুসারে বেলজিয়ামই আধিপত্য দেখাবে। কিন্তু বিস্ময় জাগিয়ে আক্রমণের ঝাপটা সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয় কর্তোয়ার পাশাপাশি ডিফেন্ডার লেয়ান্ডার ডেনডনকার, ইয়ান ভেরটনগেন, টবি অ্যালডারভেইরেল্ডদের।

নবম মিনিটে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে কানাডার পক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। জুনিয়র হয়লেটের কর্নারে টাইয়ন বুকাননের শট ডি-বক্সের ভেতরে লেগেছিল ইয়ান্নিক কারাসকোর হাতে। ডেভিসের স্পট-কিক অসাধারণ দক্ষতায় ডানদিকে ঝাঁপিয়ে ফিরিয়ে দেন রিয়াল মাদ্রিদের কর্তোয়া। ফিরতি বলে ডেভিস আবার শট নিলেও বল থাকেনি লক্ষ্যের ধারেকাছে।

এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়ার দুই মিনিট পর রিচি লারিয়ার গড়ানো শট বাইরে চলে যায়। ১৬তম মিনিটে সতীর্থের উঁচু করে বাড়ানো বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সের ভেতর থেকে চেষ্টা চালান উইঙ্গার জুনিয়র হয়লেট। তার বাম পায়ের কোণাকুণি শট লক্ষ্যে থাকেনি। এসময় কানাডার আরও বেশ কিছু শট ব্লক করে বেলজিয়ানরা।

২৭তম মিনিটে ডেভিসের পাসে ডি-বক্সের বাইরে থেকে অধিনায়ক আটিবা হাচিনসনের শট কর্তোয়াকে চিন্তায় ফেলতে পারেনি। তবে দুই মিনিট পর ঠিকই দলকে বাঁচাতে হয় কর্তোয়ার। অ্যালিস্টার জন্সটনের কোণাকুণি শট রুখে দেন তিনি। ৩৩তম মিনিটে লিলের স্ট্রাইকার জোনাথান ডেভিডের হেড চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে। এরপরই জোর ধাক্কা খেতে হয় জন হার্ডম্যানের শিষ্যদের।

৪৪তম মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে উঁচু করে বল বাড়ান অ্যালডারভেইরেল্ড। কানাডার রক্ষণভাগ তা বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হয়। ডি-বক্সের ভেতরে ঢুকে প্রথম ছোঁয়ায় বাম পায়ে জোরালো শট নেন বাতশুয়াই। সেটা ঠেকিয়ে দেওয়ার কোনো উপায় ছিল না বোরিয়ানের। জাতীয় দলের জার্সিতে এটি ২৯ বছর বয়সী বাতশুয়াইর ৪৯ ম্যাচে ২৭তম গোল। ফলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বেলজিয়াম।

দ্বিতীয়ার্ধেও কানাডা উপহার দেয় উজ্জীবিত ফুটবল আর বেলজিয়াম গোল হজম করা থেকে বাঁচতে প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। ৪৮তম মিনিটে স্টিফেন ইস্টাকিয়োর ক্রসে ডেভিডের হেড ফের লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দুই মিনিট পর মিডফিল্ডার ইস্টাকিয়ো নিজেই দূর থেকে নেন শট। কিন্তু বল গোলপোস্টের অনেকটা দূর দিয়ে চলে যায় মাঠের বাইরে।

রিয়াল মাদ্রিদের ফরোয়ার্ড এডেন হ্যাজার্ড কয়েকবার প্রতিপক্ষের রক্ষণে হানা দিলেও সফল হননি। ৬২তম মিনিটে তাকে উঠিয়ে নামানো হয় লেয়ান্দ্রো ট্রোসার্ডকে। ছয় মিনিট পর বেলজিয়ামের আরেক কাণ্ডারি কেভিন ডি ব্রুইনা ডি-বক্সে ফাঁকায় খুঁজে নেন বাতশুয়াইকে। তবে তিনি শট নিতে দেরি করে ফেলায় লারিয়া গুরুত্বপূর্ণ ব্লক করতে সক্ষম হন।

৮০তম মিনিটে ফের ত্রাণকর্তার রূপে নিজেকে মেলে ধরেন কর্তোয়া। ডেভিডের হেড ঝাঁপিয়ে লুফে নেন তিনি। পাঁচ মিনিট পর ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার ডি ব্রুইনার ফ্রি-কিকে ডেনডনকারের হেড চলে যায় অনেক উপর দিয়ে। বাকিটা সময়ে আর ব্যবধান বাড়ানো সম্ভব হয়নি বেলজিয়ামের পক্ষে। অন্যদিকে, নিজেদের নিংড়ে দিয়েও দুর্বল ফিনিশিংয়ে কানাডা পারেনি সমতায় ফিরতে।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus promises election on time

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday reaffirmed his commitment to holding the 13th national election in the first half of February next year.

7h ago