রিচার্লিসনের নৈপুণ্যে রোমাঞ্চিত তিতে

সার্বিয়ার বিপক্ষে রিচার্লিসনের দ্বিতীয় গোলটা অনেকদিন মনে থাকার কথা ভক্তদের। এখন পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপে এটিই সবচেয়ে সুন্দর গোল বলাতেও দ্বিমত করার লোক নেই। ব্রাজিলের আক্রমণভাগের সৃষ্টিশীল ঐতিহ্যর সঙ্গেও যেন মাননসই তা। রিচার্লিসনের নৈপুণ্যে তাই মুগ্ধ কোচ তিতে। বিশ্বকাপ স্কোয়াড নির্বাচনে টটেনহ্যাম হটস্পারের এই ফরোয়ার্ডকে দলে নেওয়ার স্বস্তিতে ভাসছেন তিনি।
৬২ মিনিটে সুযোগ সন্ধানী এক গোলে ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন রিচার্লিসন। চোখ ধাঁধানো মুহূর্তটি আসে আরও ১১ মিনিট পর। বা দিক থেকে ভিনিসিউস জুনিয়রের ডিফেন্স চেরা পাস যায় বক্সের ভেতর থাকা রিচার্লিসনের কাছে। উল্টো ঘুরে থাকা এই ফরোয়ার্ড টোকা মেরে বলটি হালকা উপরে তুলে অ্যাক্রোবেটিক স্টাইলে করেন ভলি। দারুণ সেই শট জালে জড়িয়ে যেতেই উল্লাসে মাতে ব্রাজিল। লাফ দিয়ে উঠেন কোচ। ওই দুই গোলেই ম্যাচ জিতে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
ম্যাচ শেষে ২৫ বছর বয়েসী ফরোয়ার্ড জানান এটা তার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত, 'এটা খুব সুন্দর গোল। সম্ভবত আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সুন্দর গোল।'
'এটা বিশ্বকাপের গোল, এটা কঠিন ম্যাচ ছিল। আমার করা সবচেয়ে সুন্দর গোলের মধ্যে এটা অন্যতম।'
সংবাদ সম্মেলনে কোচ তিতে রিচার্লিসনের নৈপুণ্যে প্রশংসা করে জানান, অনেক বিকল্পের মধ্য থেকে স্ট্রাইকার বেছে নেওয়া সহজ ছিল না তাদের, 'বলতেই হচ্ছে, আমার সাতে স্ট্রাইকারের জন্য ৬-৭টা বিকল্প ছিল। যাকেই দলে নিতাম, আমাদের দারুণ দল হতো।'
'আমরা পেদ্রো, রিচার্লিসন ও গ্যাব্রিয়েলকে (জেসুস) নিয়ে এসেছি। আমরা (গ্যাব্রিয়েল) বারবোসাকে আনতে পারতাম, ফিরমিনোকে আনতে পারতাম কিংবা (ম্যাথুউস) কুনহা বা হালকেও আনতে পারতাম। আমাদের অনেক বিকল্প ছিল তার থেকে একজনকে নিতে হয়েছে।'
প্রথমার্ধে খুব একটা কিছু করতে পারছিলেন না রিচার্লিসন। বিরতির পর তাকে পাওয়া যায় ভিন্ন রূপে। সতীর্থদের সঙ্গে বোঝাপড়ায় পজিশন তৈরি করছিলেন, স্পেস পাচ্ছিলেন অনেক। তিতের মধ্যে গোটা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে এই ফরোয়ার্ড দেখিয়েছেন কীভাবে ছন্দের সঙ্গে ছুটতে হয়, 'রিচার্লিসন ছিল দুর্দান্ত। আমরা দেখেছি সে কীভাবে বল নিয়ন্ত্রণ করে। বিরতির পর সে অনেক তীব্রতা বাড়িয়েছে, সে মানিয়ে নিয়েও নিখুঁত পাস দিয়েছে।'
'বলে প্রথম স্পর্শটা গুরুত্বপূর্ণ। এরপর ফ্লোতে যেতে হয়। এরপরই তীব্রতার সঙ্গে খেলা এগিয়ে যায়।'
ইউরোপের দল সার্বিয়া বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে পর্তুগালকে পেছনে ফেলেছিল। উচ্চতার সুবিধা নিয়ে সব সময় বিপদজনক দল তারা। ব্রাজিল কোচ জানান বিশ্বকাপের সূচি হওয়ার পর থেকে তারা জানতেন প্রথম ম্যাচটাতে হবে বড় পরীক্ষা, 'সার্বিয়া খুব খুব ভালো দল। প্রথমার্ধে তারা খুব দ্রুত খেলেছে। খুব ভালো কৌশল আর দক্ষতায় দ্রুত প্রথমার্ধ শেষ করেছে। আমরা তাদের ধীর করতে পারছিলাম না।'
গোটা ম্যাচে গোলমুখে ২২ শট নিয়ে ৮টি লক্ষ্যে রাখে ব্রাজিল। প্রতিপক্ষের ৫ শটের একটিও থাকেনি লক্ষ্যে। এই পরিসংখ্যান জানিয়ে দেয় ব্রাজিলের দাপট। তিতে বলেন, বিরতির পর কিছু জিনিস ঠিকঠাক করে নেওয়ায় দুরন্ত ছন্দে ছুটেছে তার দল, 'তারা পর্তুগালের মতো দলকে টপকে বিশ্বকাপে এসেছে, ওইসব প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ধারাবাহিক ভালো খেলেছে। তারা খুব ভালো দল, আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। বিরতির পর ফাইন টিউনিং করে আমরা তাদের উপর দাপট দেখিয়েছি।'
আগামী সোমবার সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচে নামবে ব্রাজিল। ২ ডিসেম্বর গ্রুপের শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ক্যামেরুন।
Comments