দুর্দান্ত ইরানের শেষ সময়ের জাদুতে পরাস্ত বেলের ওয়েলস

কাগজে-কলমে ওয়েলসের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও ইরান মাঠের লড়াইয়ে  দেখাল ভিন্ন চিত্র।
ছবি: এএফপি

কাগজে-কলমে ওয়েলসের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও ইরান মাঠের লড়াইয়ে  দেখাল ভিন্ন চিত্র। তাদের একের পর এক আক্রমণে ম্যাচের অধিকাংশ সময় রক্ষণ সামলাতে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হলো ড্রাগনসদের। তবে ভাগ্য সঙ্গ দিচ্ছিল না এশিয়ার পরাশক্তিদের। দুবার তাদের নিশ্চিত গোল প্রতিহত হলো পোস্টে লেগে। কিন্তু শেষদিকে ওয়েলস গোলরক্ষক ওয়েইন হেনেসি লাল কার্ড দেখলে বাড়তি খেলোয়াড়ের সুবিধা পুরোপুরি আদায় করে নিল ইরান। ঘটনাবহুল ম্যাচে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে গেল কার্লোস কুইরোজের শিষ্যরা। যোগ করা সময়ে দুর্দান্ত দুই গোলে দুর্দান্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল তারা।    

শুক্রবার আল রাইয়ানের আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপের 'বি' গ্রুপের ম্যাচে গ্যারেথ বেলের ওয়েলসকে ২-০ গোলে হারাল ইরান। শুরু থেকে ইউরোপিয়ান দলটি পজিশনিং ফুটবলে মনোযোগী হলেও পাল্টা-আক্রমণে পারদর্শিতা দেখায় ইরান। তবে দুর্ভাগ্যের কবলে পরে তারা। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ৫২তম মিনিটে দুবার পোস্টে বাধা পায় তাদের চেষ্টা। তবে আশা হারায়নি এশিয়ার দলটি। যোগ করা সময়ের অষ্টম ও একাদশ মিনিটে রুজবেহ চেশমি ও রামিন রেজাইয়ানের লক্ষ্যভেদে ওয়েলস বধের স্বাদ পায় ইরান।

আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে ম্যাচ শুরু করে দুই দল। ওয়েলস বলের দখলে শুরুর দিকে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও সুযোগ পাওয়া মাত্র আক্রমণে ওঠে কুইরোজের শিষ্যরা। তৃতীয় মিনিটে ম্যাচের প্রথম শট নেয় ওয়েলস। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া নিকো উইলিয়ামসের শট বারের সামান্য উপর দিয়ে চলে যায়।

১২তম মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার ভালো সুযোগ পেয়েছিল ড্রাগনসরা। কনর রবার্টসের ক্রস ধরে কিফার মুর গোলমুখে পাঠিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু সেই যাত্রা ইরানকে বাঁচিয়ে দেন গোলরক্ষক সৈয়দ হোসেন হোসেইনি। 

চার মিনিট বাদে দারুণ পাসিং ফুটবলে গোলের দেখা পেয়ে গিয়েছিল পারস্যের সিংহরা। কিন্তু ভিএআর প্রযুক্তিতে অফসাইডের ফাঁদে পড়েন সর্দার আজমাউনের পাস ধরে ফিনিশ করা আলি গোলিজাদেহ। হতাশায় আচ্ছন্ন হয় ইরান।

২৩তম মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে হেড করেন আজমাউন। কিন্তু বারের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায় বল। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আরেকটি মোক্ষম সুযোগ পেয়েছিল ইরান। ডান প্রান্ত থেকে করা আহমাদ নুরোল্লাহির ক্রসে আজমাউন কেবল ঠিকঠাক পা ছোঁয়ালেই জালে জড়িয়ে যেত বল। কিন্তু বিধি বাম। সেটা করতে পারেননি বায়ার লেভারকুসেন ফরোয়ার্ড। পরের মিনিটে মেহেদি তারেমিকে ফাউল করে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন ওয়েলস ডিফেন্ডার জো রোডন। এর পরপরই বিরতির বাঁশি বাজান রেফারি।

৫২তম মিনিটে চরম দুর্ভাগ্যের শিকার হয় ইরান। বল পেয়ে দ্রুত গতিতে ওয়েলস গোলমুখে ধেয়ে যান আজমাউন। কাছাকাছি পৌঁছে শটও নেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় গোলপোস্ট। গোলিজাদেহের পায়ে চলে যায় বল। বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক শট নেন তিনি। কিন্তু সেটাও আটকে যায় ক্রসবারে। বল পেয়ে তৃতীয় দফায় চেষ্টা চালায় ইরান। কিন্তু আজমাউনের শট ধরে ফেলেন হেনেসি।

পরের মিনিটে পাল্টা-আক্রমণে ওঠে ওয়েলসও। কিন্তু আলোর মুখ দেখেনি তাদের চেষ্টা। ৬৮তম মিনিটে আজমাউনকে উঠিয়ে নেন কুইরোজ। পাঁচ মিনিট পর আবারও গোলের সম্ভাবনা জাগায় এশিয়ার পরাশক্তিরা। সাইদ এজাতোলাহি নেন মাটি কামড়ানো শট। বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে তা রুখে দেন হেনেসি।  

৮৪তম মিনিটে দারুণ গুছিয়ে আক্রমণে উঠে ইরানের রক্ষণে ত্রাস ছড়ায় ওয়েলস। বেন ডেভিসের শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক হোসেইনি। পরের মিনিটে দারুণ এক থ্রু পাসে সম্ভাবনা তৈরি হয় ইরানের। প্রতিপক্ষ রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে মেহদি তারেমি পৌঁছে গিয়েছিলেন বিপদসীমার কাছাকাছি। অনেকটা বাধ্য হয়েই ডি-বক্স ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হয় হেনেসিকে। বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে এফসি পোর্তো ফরোয়ার্ড তারেমিকে ফাউল করে বসেন হেনেসি।

প্রথম দফায় হেনেসিকে হলুদ কার্ড দিলেও পরবর্তীতে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে তাকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। ক্ষোভে ফেটে পড়েন বেলরা। ১০ জনের দলে পরিণত হয় ওয়েলস। ৮৯তম মিনিটে বদলি খেলোয়াড় মেহেদি তোরাবির শট একটুর জন্য বেরিয়ে যায় বাইরে দিয়ে।

যোগ করা সময়ের অষ্টম মিনিটে আপ্রাণ চেষ্টার ফসল ধরা দেয় ইরানের হাতে। বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শট নেন চেশমি। ওয়েলসের বদলি গোলরক্ষক ড্যানি ওয়ার্ডকেকে ফাঁকি দিয়ে বল জড়ায় জালে। তিন মিনিট বাদে আবারও পাল্টা-আক্রমণে ওঠে ইরান। গোল শোধে মরিয়া ওয়েলস ফলে আবারও পড়ে বিপদে। তারেমির ঠাণ্ডা মাথার অ্যাসিস্ট থেকে চিপ করে জালে পাঠিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রেজাইয়ান। পরের মিনিটে শেষ বাঁশি বাজলে বুনো উল্লাসে মাতে ইরানিরা।

Comments

The Daily Star  | English

NBR suspends Abdul Monem Group's import, export

It also instructs banks to freeze the Group's bank accounts

1h ago