আক্রমণের পসরা সাজিয়েও কোস্টারিকার কাছে হারল জাপান

costa rica

স্পেনে রীতিমতো বিধ্বস্ত হওয়া কোস্টারিকা সংগ্রাম করল জাপানের বিপক্ষেও। প্রথমার্ধে হাজিমে মরিয়াসুর শিষ্যদের কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা উপহার দিলেও দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় পুরোটা সময় সংগ্রাম করল তারা। ম্যাচের শেষ প্রান্তে হঠাৎ পাওয়া একটি সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগালেন কিশার ফুলার, আর তাতেই জাপান বধ করা হয়ে গেল উত্তর আমেরিকার দলটির।

রোববার আহমদ বিন আলী স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপের 'ই' গ্রুপের ম্যাচে জাপানকে ১-০ গোলে হারিয়েছে কোস্টারিকা। বল দখল থেকে শুরু করে আক্রমণ গড়া সবক্ষেত্রে জাপান এগিয়ে থাকলেও হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো তাদের। জানপ্রাণ দিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ডিফেন্স করল কোস্টারিকা, এদিকে আপ্রাণ চেষ্টা করেও গোল শোধ করতে পারল না এশিয়ান প্রতিনিধিরা।

জাপানের হারে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে জার্মানিও। পরের রাউন্ডে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমীকরণ কিছুটা সহজ হলো চারবারের চ্যাম্পিয়নদের।

একাদশে পাঁচ পরিবর্তন নিয়ে এই ম্যাচে মাঠে নামে এশিয়ার প্রতিনিধিরা। অন্যদিকে গত ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে সাত গোল হজম করে এই ম্যাচে কিছুটা রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করেন কোস্টারিকা কোচ লুইস সুয়ারেজ। পাঁচ জন ডিফেন্ডার খেলান তিনি। মিডফিল্ডে রাখেন চার জনকে, আক্রমণভাগে শুধু রাখেন অ্যান্টনি কন্ট্রেরাসকে। 

ম্যাচের প্রথম মিনিটেই কর্নার আদায় করে নেয় জাপান। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার চেষ্টা চালাতে থাকে তারা। ১৮ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল সামুরাই ব্লুদের সামনে। কিন্তু দাইচি কামাদার থ্রু পাস ক্রসে পরিণত করতে ব্যর্থ হন রাইট ব্যাক মিকি ইয়ামানে। 

২৩ মিনিটে আক্রমণে যায় কোস্টারিকাও, কন্ট্রেরাস দেখান তার গতির ঝলক। লেফট উইং থেকে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন বিপদসীমায়। তবে ক্রসটা ঠিকমতো করতে পারেননিন ২২ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। ৩৫ মিনিটে ফের সুযোগ হারায় আমেরিকার দলটি। ফ্রান্সিসকো ক্যালভোর শট প্রতিহত হলে রিবাউন্ডে বল পান জোয়েল ক্যাম্পবেল, কিন্তু তিনি শট নেন আকাশে।

প্রথমার্ধের শেষদিকে মরিয়া হয়ে গোলের চেষ্টা চালাতে থাকে দুই দল। ৪২ মিনিটে মায়া ইয়োশিদাকে ফাউল করে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন কন্ট্রেরাস। দুই মিনিট বাদে যেন প্রতিশোধ নেয় জাপান, এবার ক্যাম্পবেলকে ফাউল করে রেফারিকে হলুদ কার্ড দেখাতে বাধ্য করেন ইয়ামানে। ৪৫ মিনিটে আবারও বাজে ফাউলের বাঁশি, এবার অসদুপায় অবলম্বন করেন কোস্টারিকার গেরসন টরেস। 

বিরতির পর দেখা মিলে 'নতুন' জাপানের, প্রচণ্ড আগ্রাসী ফুটবল খেলা শুরু করে তারা। শুরুতেই জোড়া বদলী নামান মরিয়াসু। প্রথম ম্যাচের গোলদাতা তাকুমা আসানো ও ডিফেন্ডার হিরোকি ইতো নামেন মাঠে। আর তাতেই যেন উজ্জীবিত হয়ে ওঠে গোটা দল, দ্বিতীয়ার্ধের পাঁচ মিনিট না গড়াতেই দুইবার কর্নার আদায় করে নেয় সামুরাই ব্লুরা।

প্রথম মিনিটেই দুর্দান্ত এক শট নেন হিডেমাসা মরিতা, কেইলর নাভাসের নৈপুণ্যে রক্ষা পায় কোস্টারিকা। দুই মিনিট বাদে আবারও বিপদে পড়তে গিয়েছিল আমেরিকার দলটি, কিন্তু ক্যালভো দারুণ এক স্লাইডে ওয়াতারু এন্ডোর শট ফিরিয়ে দিলে সমতায় (০-০) থাকে স্কোরলাইন।

এদিকে একের পর এক আক্রমণ করেই যাচ্ছিল জাপান, ৫৭ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে দুর্দান্ত ড্রিব্লিংয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন ইউকি সোমা। কিন্তু শট নেন আকাশে, আক্ষেপে পুড়ে সামুরাই ব্লু ভক্তরা। মিনিটের কাঁটা পার না হতেই আবারও লস তিকোস রক্ষণে ত্রাস ছড়ায় এশিয়ার দলটি। 

৬১ মিনিটে অদম্য জাপানকে রুখতে না পেরে ফাউলের আশ্রয় নেয় কোস্টারিকা। বক্সের ঠিক বাইরে সেলসো বোর্হেস ফাউল করেন এন্ডোকে, দেখেন হলুদ কার্ড। বিপদজনক জায়গায় ফ্রি কিক পায় জাপান। তবে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি তারা।

৭০ মিনিটে আবারও দেখা মিলে অনেকটা একই চিত্রের। শেষ ডিফেন্ডার ফ্রান্সিসকো ক্যালভোকেও পার করে ফেলেছিলেন আসানো, কোন উপায় না দেখে ফাউল করে তাকে ফেলে দেন ৩০ বছর বয়সী সেন্টার ব্যাক। ফলে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখে হারান জার্মানির বিপক্ষে মাঠে নামার সুযোগ।

এর আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষেও হলুদ কার্ড দেখেছিলেন ক্যালভো। ৭৭ মিনিটে আবারও গোলের সম্ভাবনা জাগায় জাপান, তবে অনেক উঁচুতে লাফিয়ে উঠেও লব ক্রসকে গন্তব্য দিতে পারেননি কামাদা। 

৮১ মিনিটে জাপানি ভক্তদের স্তব্ধ করে দেয় কোস্টারিকা। নিজেদের অর্ধে বল হারায় জাপান, আর সেটাই বিপদ বয়ে আনে তাদের জন্য। ইয়েলটসিন টেজেডার পাস থেকে বাঁ পায়ের বাঁকানো শটে লক্ষ্যভেদ করেন রাইট ব্যাক ফুলার। এতে ২০২২ বিশ্বকাপে লক্ষ্যে নেওয়া প্রথম শটেই গোলের দেখা পায় উত্তর আমেরিকার দলটি। প্রথম ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে কোন শটই নিতে পারেনি তারা। 

৮৭ মিনিটে সমতা ফেরানোর দারুণ সুযোগ পেয়েছিল জাপান। বাঁ প্রান্ত থেকে কাটব্যাক করেন কাওরু মিতোমা, কামাদার নিচু শট ব্লক করে দেন ব্রায়ান ওভিয়েডো। ডি বক্সে তৈরি হয় বিশৃংখল পরিস্থিতি যার সমাপ্তি ঘটে নাভাসের গ্লাভসে বল ধরা পড়লে। 

যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে আবারও কোস্টারিকা রক্ষণে কাঁপন ধরায় জাপান। তবে সেই যাত্রাও সাফল্য ধরা দেয়নি তাদের হাতে। অবশিষ্ট সময়েও একই থাকে খেলার চিত্র, ফলে জাপানের হতাশার এক হারে শেষ হয় ম্যাচ
 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh races to expand air cargo capacity

In a first move to address the shortfall, Sylhet's Osmani International Airport is set to launch dedicated cargo operations today

10h ago