টাই-ব্রেকারে জাপানকে হারিয়ে শেষ আটে ক্রোয়েশিয়া

গ্রুপ পর্বের মতো নকআউটেও দেখা মিলল এক 'অদম্য' জাপানের। শক্তির বিচারে সমকক্ষ না হলেও সমানতালে লড়ল তারা। টানা আক্রমণে আদায় করে নিলো গোলও। অন্যদিকে আপ্রাণ চেষ্টা করল ক্রোয়েশিয়াও, পিছিয়ে পড়েও ম্যাচে ফিরল তারা। তবে ৯০ মিনিট যথেষ্ট ছিল না এই দুই দলকে আলাদা করার জন্য। প্রথম অতিরিক্ত সময় ও পেনাল্টি শুটআউটের দেখা মিলল কাতার বিশ্বকাপে। তাতে শেষ হাসি হাসল রাশিয়া আসরের রানার্স আপরা।

সোমবার আল জানুব স্টেডিয়ামে শেষ ষোলোর ম্যাচে টাইব্রেকারে জাপানকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। গোটা ম্যাচ ও পেনাল্টিতে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন ডমিনিক লিভাকোভিচ। ম্যাচের প্রথম গোল করে হাজিমে মরিয়াসুর শিষ্যরাই। প্রথমার্ধের শেষভাগে জাপানকে এগিয়ে নেন ডাইজেন মায়াদা। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ক্রোয়েশিয়ার হয়ে সমতা ফেরান ইভান পেরিসিচ। এরপর একাধিক আক্রমণ গড়েও নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোল আদায় করে নিতে পারেনি দুই দল। অতিরিক্ত সময়েও সমতা না ভাঙলে পেনাল্টিতে গড়ায় খেলা।

শুরু থেকেই স্বভাবসুলব আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে জাপান। ম্যাচের প্রথম কর্নার আদায় করে নেয় তারাই। তৃতীয় মিনিটে দারুণ এক হেড করেন শোগো তানিগুচি, গোলবারের সামান্য বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায় বল। নবম মিনিটে সুযোগ এসেছিল ক্রোয়েশিয়ারও, তাকেহিরো তোমিয়াসুর ভুলে বল পেয়ে যান পেরিসিচ। তবে সময় নিয়েও জাপান গোলরক্ষক শুইচি গোন্ডাকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন টটেনহাম হটস্পার ফরোয়ার্ড।

১২ মিনিটে আবারও সুযোগ তৈরি করে জাপান। জুনিয়া ইতো ডানপ্রান্ত থেকে করেন নিঁখুত এক ক্রস। পা বাড়িয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করেও সেটাকে গোলে রূপ দিতে পারেননি ইউতো নাগাতোমো। খানিক বাদে আবারও আক্রমণে যায় হাজিমে মরিয়াসুর শিষ্যরা। এবার ক্রসের যোগান দেন নাগাতোমো, তবে লাফিয়ে উঠেও হেড করতে ব্যর্থ হন মায়েদা। কাঙ্খিত গোলের দেখা না মিললেও আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখে এশিয়ানরা। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পরীক্ষা নিতে থাকে ক্রোয়েশিয়া রক্ষণের।

দুই দলই একাধিক আক্রমণ শানায়, তবে ফিনিশিং ব্যর্থতায় এগিয়ে যেতে পারছিল না কেউই। ২৬ মিনিটে আরেকটি সুযোগ নষ্ট করে জ্লাতকো দালিকের শিষ্যরা। ৪১ মিনিতে ক্রোয়াশিয়ার বক্সে আধিপত্য বিস্তার করে জাপান। গোলের সুবর্ণ সুযোগ ছিল তাদের সামনে, কিন্তু দাইচি কামাদা চোখ জুড়ানো নৈপুণ্য দেখালেও নেন লক্ষ্যহীন শট। ৪৩ মিনিটে পরিশ্রমের ফসল ধরা দেয় জাপানের হাতে। শর্ট কর্নার থেকে ক্রস করেন রিৎসু দোয়ান। মায়া ইয়োশিদা হেড করলেও বল ছিল গোললাইনের বাইরে। জটলার মধ্যে থেকে মাইদা জালে জড়ান বল।

গোল হজম করে মরিয়া হয়ে উঠে ক্রোয়েশিয়া। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ফের আক্রমণ শানায় তারা। তবে জাপানি রক্ষণ ভাঙতে পারেনি লুকা মদ্রিচ বাহিনী। ফলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় ক্রোয়েশিয়া। দ্বিতীয়ার্ধেও খেলার ধরণ একই রাখে জাপান। মিনিটের কাঁটা না গড়াতেই শট নেন কামাদা। তবে তার দূরপাল্লার চেষ্টা অল্পের জন্য হয় লক্ষ্যচ্যুত।

৫৫ মিনিটে সমতা ফেরায় ক্রোয়েশিয়া, ডেজান লোভরেনের ক্রস থেকে দারুণ এক হেডে গোল করেন পেরিসিচ। তিন মিনিট বাদে ফের এগিয়ে যেতে পারত জাপান। কোনমতে বারের ওপর ঠেলে দেন লিভাকোভিচ। দুই মিনিট বাদে ওয়াতারু এন্ডো বক্সের বাইরে থেকে নেন জোরালো শট, তবে কোন বিপদ ঘটতে দেননি লিভাকোভিচ। ৫৯ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে যায় ক্রোয়েশিয়া, গতির ঝলকে বাঁ প্রান্ত থেকে বক্সে ঢুকে পড়েন পেরিসিচ। তোমিয়াসু-ইতোদের পরাস্ত করলেও শট আর নিতে পারেননি।

৬৩ মিনিটে দারুণ এক লং শট নেন লুকা মদ্রিচ। গোন্ডার কল্যাণে রক্ষা পায় জাপান। চার মিনিট বাদে আবারও গোলের সম্ভাবনা তৈরি করে দ্য ভাতরেনিরা। আন্দ্রেজ ক্রামারিচের ক্রস কাজে লাগাতে পারেননি আন্তে বুদিমির, গোলবারের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় তার হেড। ৭৭ মিনিটে পেরিসিচের জোরালো শটের গতিপথ বদলে পিছিয়ে পড়ার হাত থেকে দলকে রক্ষা করেন ইয়োশিদা।

৯০ মিনিট পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা করেও জয়সূচক গোল আদায় করে নিতে পারেনি কোন পক্ষ। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ৯৯ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার প্রাণভোমরা মদ্রিচকে উঠিয়ে নেন দালিক। ১০৫ মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে দুর্দান্ত ড্রিবলিংয়ে একক প্রচেষ্টায় বল টেনে নিয়ে যান কাওরু মিতোমা। শটটাও নেন জোরালো, আবারও ত্রাতা হয়ে দলকে বাঁচান লিভাকোভিচ। অতিরিক্ত সময়ের শেষেও একই থাকে স্কোরলাইন। ফলে পেনাল্টি শুটআউটে গড়ায় খেলা।

জাপানের হয়ে প্রথম শট নিতে আসেন তাকুমি মিনামিনো। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন লিভাকোভিচ। তবে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে প্রথম শটে ঠিকই গোল করেন নিকোলা ভ্লাসিচ। দ্বিতীয় পেনাল্টিতেও আক্ষেপে পুড়ে জাপান। মিতোমা শট নেন বাঁদিকে, সেটাও ফিরিয়ে দেন লিভাকোভিচ। এরপর মার্সেলো ব্রোজোভিচ গোল করে ক্রোয়েশিয়ার পক্ষে বাড়ান ব্যবধান। তৃতীয় শটে গোল করেন তাকুমা আসানো, বেঁচে থাকে জাপানের স্বপ্ন।

মার্কো লিভাজার পরবর্তী শট আটকে যায় গোলবারে। সমতায় ফেরার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ইয়োশিদা, তার শটও রুখে দেন লিভাকোভিচ। জাপানের সকল স্বপ্ন তখন টিকে ছিল গোলরক্ষক গোন্ডার ওপর। তবে ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি তার, মারিও প্যাসালিচ গোল করে জয়ের উল্লাসে মাতান ক্রোয়েশিয়াকে। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় অদম্য জাপান।

Comments

The Daily Star  | English

NBR officials end strike after govt warning

Following a stern government warning and mounting pressure from the country’s top business leaders, officials of the National Board of Revenue have withdrawn their shutdown.

7h ago