চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা, মেসির হাতে বিশ্বকাপ

নির্ধারিত সময়ে দুই গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও হয়নি। হয়নি অতিরিক্ত সময়ে এগিয়েও। লিওনেল মেসির জোড়া গোলে লিড ধরে রাখতে পারেনি আর্জেন্টিনা। কিলিয়ান এমবাপের হ্যাটট্রিকে বারবার লড়াইয়ে ফিরে আসে ফ্রান্স। শেষ পর্যন্ত টাই-ব্রেকারে নিষ্পত্তি হয় ম্যাচের। সেখানে ফরাসিদের হারিয়ে অবশেষে শিরোপায় চুমু দেন মেসি। কাতার বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো আলবিসেলেস্তেরা।

রোববার কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে টাই-ব্রেকারে গড়ানো ম্যাচে ফ্রান্সকে ৪-২ ব্যবধানে হারায় আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ ব্যবধানে অমীমাংসিত থাকায় অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচটি। সেখানে দুই দলই একটি করে গোল পেলে শেষ পর্যন্ত ৩-৩ গোলের সমতায় শেষ হয় ম্যাচ। ফ্রান্সের হয়ে ম্যাচের তিনটি গোলই করেন এমবাপে। আর্জেন্টিনার হয়ে মেসির জোড়া গোলের সঙ্গে একটি গোল পান আনহেল দি মারিয়া।

টাই-ব্রেকারে ফ্রান্সের কিংসলে কোমানের শট ঠেকান এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। আর চুয়ামিনি মারেন বাইরে। ফলে এমবাপে ও কোলো মুয়ানির শট লক্ষ্যভেদ করলেও লাভ হয়নি। মাথা ঠাণ্ডা রেখে টানা চারটি শটে লক্ষ্যভেদ করেন মেসি, পাওলো দিবালা, লিয়েন্দ্রো পারাদেস ও গনসালো মার্তিনেজ। তাতেই শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যায় আর্জেন্টিনার।  

এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে টাই-ব্রেকারে হারল ফ্রান্স। এর আগে ২০০৬ সালের ফাইনালে ইতালির কাছে হেরেছিল তারা। অন্যদিকে টাই-ব্রেকারে আরও একবার দুর্দান্ত আর্জেন্টিনা। এখন পর্যন্ত সাত বার এ ভাগ্য পরীক্ষায় লড়াই করে একবার হেরেছিল আলবিসেলেস্তেরা। সেটাও সেই ২০০৬ সালে কোয়ার্টার-ফাইনালে জার্মানির কাছে হারে তারা।

একই সঙ্গে মধুর প্রতিশোধ নিল আর্জেন্টিনা। রাশিয়ায় গত আসরে শেষ ষোলোতে এই ফ্রান্সের কাছেই হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। সেবার ৪-৩ গোলে জয় পেয়েছিল ফ্রান্স।

এবারের বিশ্বকাপে ৩৫ ম্যাচ অপরাজিত থেকে এসেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু আসরের প্রথম ম্যাচেই খায় বড় ধাক্কা। অপেক্ষাকৃত দুর্বল সৌদি আরবের কাছে হেরে যায় দলটি। তখন শঙ্কা ছিল গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়ার। এরপর টানা ছয় ম্যাচ (টাই-ব্রেকার সহ) জিতে শিরোপা জিতে নিল মেসিরা। এর আগে ২০১০ সালে সুইজারল্যান্ডের কাছে প্রথম ম্যাচ হেরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্পেন।

এদিন ম্যাচের প্রথমার্ধ তো বটেই দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় অর্ধেক সময় আধিপত্য ছিল আর্জেন্টিনার। ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে লক্ষ্যে প্রথম শট নেয় আর্জেন্টিনা। তবে অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্তারের দূরপাল্লার শট ধরতে বেগ পেতে হয়নি ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিসকে। তিন মিনিট পর রদ্রিগো দি পলের শট ব্লক করে দেন রাফায়েল ভারানে।

১৭তম মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল আর্জেন্টিনার সামনে। মেসির সঙ্গে দারুণ ওয়ান টু খেলে ডানপ্রান্ত থেকে ক্রস করেন দি পল। একেবারে ফাঁকায় বল পেয়ে আকাশে উড়িয়ে মারেন দি মারিয়া। তিন মিনিট পর আঁতোয়ান গ্রিজমানের ফ্রি কিক থেকে লাফিয়ে উঠে দারুণ এক হেড করেন অলিভিয়ের জিরু। কিন্তু বারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায় তার চেষ্টা।

২৩তম মিনিটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। আলভারেজের বাড়ানো বল ধরে বাঁ প্রান্ত দিয়ে দারুণ ড্রিবলিং ঝলকে উসমানে দেম্বেলেকে বোকা বানিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে যান দি মারিয়া। পেছন থেকে মেজাজ হারিয়ে তাকে ফাউল করে বসেন বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড। ফলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সফল স্পটকিক থেকে দলকে এগিয়ে দেন মেসি।

৩৬তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আর্জেন্টিনা। আলভারেজের পাস ধরে মেসি বল ঠেলে দেন সামনে থাকা ম্যাক অ্যালিস্তারকে। চাইলে নিজেই শট নিতে পারতেন ব্রাইটন তারকা, কিন্তু তা না করে নিখুঁত এক পাস বাড়িয়ে দেন দি মারিয়াকে। বল জালে জড়াতে কোন ভুল করেননি জুভেন্তাস তারকা।

৪১ মিনিটে দুইজন বদলী খেলোয়াড়কে মাঠে নামান ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশম। দেম্বেলের বদলে মাঠে নামেন মরক্কোর বিপক্ষে গোল করা হন্দাল কোলো মুয়ানি এবং জিরুর বদলী হিসেবে নামেন মার্কাস থুরাম। যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে ফরাসি বিপদসীমায় ঢুকে পরেছিলেন আলভারেজ, শেষ মুহূর্তে ক্লিয়ার করে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন ভারানে।

৪৯তম মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে আবারও ক্রস করেন দি মারিয়া। ভারসাম্য হারিয়েও ভলিতে চেষ্টা চালান দি পল। তবে সেটা সহজেই লুফে নেন লরিস। ১০ মিনিট পর গতির ঝলকে ডি-বক্সে ঢুকে দুরূহ কোণ থেকে শট নেন আলভারেজ। ডাইভ দিয়ে দলকে বাঁচান লরিস।

এর পরের মিনিটে আবারও ড্রিবলিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন দি মারিয়া। জুলস কুন্দেকে রীতিমতো হতাশ করে বল ঢেলে দেন মাঝখানে। পিছনে মেসি থাকায় তার জন্য বল ছেড়ে দেন আলভারেজ। কিন্তু তার শট ছিল না লক্ষ্যে।

৬৪ মিনিটে দারুণ খেলতে থাকা দি মারিয়াকে উঠিয়ে রক্ষণের শক্তি বাড়ান স্কালোনি। মাঠে নামেন মার্কোস আকুনিয়াকে। ৭১তম মিনিটে দুই ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে বক্সে ঢুকে শট নেন এমবাপে। তবে লক্ষ্যে থাকেনি।

পরের মিনিটে স্বভাবসুলভ ড্রিবলিং ঝলকে ডি-বক্সে ঢুকে ফার্নান্দেজকে পাস ছাড়েন মেসি, কিন্তু বেনফিকার তরুণের শটে ছিল না পর্যাপ্ত জোর। ৭৯তম মিনিটে ব্যবধান কমায় ফ্রান্স। সফল স্পটকিক থেকে গোল করেন এমবাপে। কোলো মুয়ানিকে ডি-বক্সের মধ্যে নিকোলাস ওতামেন্দি ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।

দুই মিনিট পর সমতায় ফেরে ফরাসিরা। থুরামের ক্রস থেকে নিঁখুত ভলিতে লক্ষ্যভেদ করেন এমবাপে। আসরে এটা তার সপ্তম গোল। গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে ছাড়িয়ে যান মেসিকে। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে কামাভিঙ্গার পাস ধরে গতিময় ড্রিবলিংয়ে বক্সে ঢুকে আবারও শট নেন এমবাপে। কোনোমতে পা ছুঁইয়ে বলের গতিপথ বদলে দিতে সক্ষম হন ওতামেন্দি। পরের মিনিটে

কোলা মুয়ানির শট লুফে নিয়ে দলকে উদ্ধার করেন মার্তিনেজ। সপ্তম মিনিটে আকুনিয়ার পাস ধরে বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নেন মেসি, কোনোমতে সেটা গোলবারের উপর ঠেলে দিয়ে দলকে রক্ষা করেন লরিস।

১০৫তম মিনিটে লাউতারোকে ফাঁকায় পাস দেন মেসি, অতিমানবীয় স্লাইডে তার শট ব্লক করেন উপামেকানো। তবে বিপদ তখনও পিছু ছাড়েনি ফ্রান্সের, বল পেয়ে যান মন্তিয়েল। দারুণ ভলি করেন তিনিও, লাফিয়ে উঠে হেড করে নিশ্চিত গোল হজমের হাত থেকে ফ্রান্সকে রক্ষা করেন ভারানে। পরের মিনিটে ফের একেবারে ফাঁকায় পেয়েছিলেন মার্তিনেজ। উপামেকানো আবারও আবির্ভূত হন ত্রাতা রূপে।

১০৯তম মিনিটে ফের এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। লাউতারোর জোরালো শট প্রথম দফায় ঠেকিয়ে দিলেও মেসির ফিরতি শট আর রুখতে পারেননি লরিস। আলবিসেলেস্তে ভক্তদের গর্জনে ফের কেঁপে ওঠে গ্যালারি। চলতি বিশ্বকাপে এটা তার সপ্তম গোল। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপ গোলসংখ্যা ১৩টি। 

তবে ছয় মিনিট পরই সমতায় ফেরে ফ্রান্স। কোমানের শট ব্লক করতে লাফিয়ে উঠেন মন্তিয়েল কিন্তু তার হাতে গিয়ে লাগে বল। বক্সের ভিতর এই ঘটনা ঘটায় পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সেখান থেকে আরও একটি সফল স্পটকিকে লক্ষ্যভেদ করেন এমবাপে। আসরে এটা অষ্টম গোল তার। তাতেই গোল্ডেন বল নিশ্চিত হয়ে যায় এ ফরাসি তরুণের।

ম্যাচের যোগ করা সময়ে শেষ দিকে অবিশ্বাস্য এক সেভ করেন মার্তিনেজ। অন্যথায় তখনই হেরে যেতে পারতো আর্জেন্টিনা। কোলা মুয়ানির জোরালো শট রুখে আর্জেন্টিনাকে ম্যাচে রাখেন মার্তিনেজ। সময় নষ্ট না করে পাল্টা আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। মন্তিয়েলের ক্রস থেকে লাউতারো হেড করলেও সেটি ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট।

Comments

The Daily Star  | English
Banks income from investment in bonds

Bond boom contributes half of bank income

The 50 banks collectively earned Tk 39,958 crore from treasury bonds in 2024, up from Tk 27,626 crore in the previous year, according to an analysis of their audited financial statements.

14h ago