আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

কোহলি-রাহুল: যে জুটিতে ভারত পেয়েছে অনন্য 'প্রথম'

জশ হ্যাজেলউড-মিচেল স্টার্কের দেওয়া ধাক্কা কাটিয়ে জ্বলে ওঠে বিরাট কোহলি-লোকেশ রাহুল জুটি।

কোহলি-রাহুল: যে জুটিতে ভারত পেয়েছে অনন্য 'প্রথম'

কোহলি-রাহুল জুটি

প্রথম ইনিংসের কাজ শেষ। গোসল সেরে এসে একটু জিরিয়ে নেবেন, নাম্বার যেহেতু তার পাঁচ। আধঘণ্টা বা এক ঘণ্টা, আরাম করে বসে রইবেন। চিন্তাভাবনা এরকমই হয়তো ছিল লোকেশ রাহুলের। কিন্তু কীসের কী! একের পর এক উইকেট যেতে লাগল, তৃতীয় ওভারেই ক্রিজে যেতে হল রাহুলকে।

ভারত ডাগআউটে আরেক রাহুলের কী অবস্থা তখন? ৫ রানের কমে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে দল, এমন পরিস্থিতিতে ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের তো দুশ্চিন্তাই আসবে মনে। তার মনের দরজায় হয়তো একটা দিনও তখন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল। দিনটা ২০০৪ সালের। সেদিন যে এরকমই ভয়াবহ অবস্থায় পড়েছিল ভারত।

জিম্বাবুয়ে ও ভারতকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসেছিল ত্রিদেশীয় সিরিজের মঞ্চ। সে সিরিজেরই এক ম্যাচে ৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দুরবস্থায় পড়তে হয়েছিল ভারতকে। সেখান থেকে দলকে উদ্ধারের কাজে এগিয়ে এসেছিলেন দ্রাবিড়। ভিভিএস লক্ষণের সঙ্গে মিলে ১৩৩ রানের জুটি গড়েছিলেন। লক্ষণ সে ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকালেও দ্রাবিড়ও ফিফটি করে রেখেছিলেন বড় অবদান।

৫ রানের কমে ৩ উইকেট হারিয়েও জেতার একটি ঘটনা এটি। তবে ২ রান বা তার কমে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পরও দল জিতেছে, এমন কিছু চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়া-ভারতের ম্যাচেই হলো প্রথমবার।

রাহুল ক্রিজে আসার পর কোহলি তাকে বলেছিলেন, 'পিচে বল এদিক-সেদিক হচ্ছে, কিছুক্ষণ টেস্ট ক্রিকেটের মতো ভেবে খেলো।'

দুইশ রানের লক্ষ্যে দলকে এই দুর্যোগে দেখা- চাপ, চাপ, চাপ! চাপ হজম করতে কোহলির চেয়ে ভালো কেউ পারে নাকি! লক্ষ্য তাড়ায় কোহলির চেয়ে আর উপযুক্ত কে হতে পারেন! আর রাহুলের ঠাণ্ডা মাথা- এমন পরিস্থিতিতে দরকারই। 'পারফেক্ট' জুটি বনে গেল তাহলে। কিন্ত সামনে অজিরা, ব্যাট হাতে লড়াই এত সহজ হবে?

জশ হ্যাজেলউড-মিচেল স্টার্কের বিপরীতে সলিড ডিফেন্সে স্বস্তিতেই দেখাচ্ছিল কোহলিকে। কিন্ত হুট করেই একটা শটে চেন্নাইয়ের নিঃশ্বাস যেন থেমে গিয়েছিল। অষ্টম ওভারে পুল করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন কোহলি। মিড উইকেট থেকে দৌড়ে আসা মিচেল মার্শের দুই হাত গলে তা কীভাবে যেন বেরিয়ে যায়!

প্রতিপক্ষের পেসারদের দেওয়া ধাক্কা কাটিয়ে ওঠে কোহলি-রাহুল জুটি। দিনের বেলা স্পিনে নাকানি-চোবানি খেয়েছে অজিরা। রাতে স্পিনের বিষ কেমন হয়, সেটাতে নির্ভর করছিল ম্যাচের ভাগ্যও। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে দেখেশুনে প্রথম স্পেলে খেলে দেন কোহলি-রাহুল। অ্যাডাম জ্যাম্পা এসে চাপে ফেলবেন কী, উল্টো তাকেই চাপের গর্তে ঠেলে দেন রাহুল।

১৮তম ওভারে জ্যাম্পাকে প্রথম আনেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। তৃতীয় বলেই ফোর্থ স্টাম্পের বলে কাটে চার। স্লিপ রাখায় শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চল ছিল ফাঁকা। ওই কাটের পর জ্যাম্পার গুগলিতে লেটকাটে আরেকটি চার মারেন রাহুল। নড়বড়ে হয়ে পড়েই কিনা জ্যাম্পা ওভারের শেষ বলটা ফুলটস করে দেন। প্রথম ওভারে ১৩ রান দেওয়ার পর পুরো ম্যাচেই লাইন-লেংথ নিয়ে ভুগেছেন। ব্যাটারদের কোনো চ্যালেঞ্জই জানাতে পারেননি। অনায়াসে স্ট্রাইক বদল করছিলেন তারা।

শেষের দিকে শিশিরও এসেছিল, সেজন্য ব্যাটিংটাও আরেকটু সহজ হয়েছে। তবে আকাশসম চাপের সময়টা কোহলি ও রাহুল মিলে দুর্দান্তভাবে কাটিয়েছিলেন। দেখেশুনে একেবারে নিখুঁতভাবে খেলে যাচ্ছিলেন তারা। ২৫তম ওভারে গিয়ে দলের একশ রানের সঙ্গে কোহলিও ফিফটির দেখা পান। রাহুলও নিজের ফিফটি পেয়ে যান কিছুক্ষণ পরে। এরপর দুজনে শুধু লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হয়েছেন, জয় সময়ের ব্যাপার ছিল।

কোহলির সেঞ্চুরির খাতায় আরেকটি দাগ ফেলার ইচ্ছে পূরণ হয়নি, ৮৫ রানে মিডউইকেটে পুলে আউট হয়ে গেলে। সেঞ্চুরিটা খুব করে চেয়েছিলেন রাহুলও। শেষমেশ এমন অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলেন যে দলের প্রয়োজনের থেকে তার চাহিদা বেশি।

৫ রান যখন ভারতের জিততে দরকার, রাহুলের সেঞ্চুরির জন্য দরকার ছিল ৯ রান। ম্যাচ শেষে তিনি বলেছেনও, চার মেরে পরে ছক্কায় সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে চেয়েছিলেন। কামিন্সকে চারের উদ্দেশ্য শটও মেরেছিলেন, কিন্ত ওটাই ছক্কা হয়ে যায়! রাহুল আটকে যান ৯৭-তেই। ছক্কা হওয়া দেখে সেঞ্চুরির আক্ষেপে ক্রিজেই বসে পড়েন রাহুল!

তবে সেঞ্চুরি না পেলেও যে ইনিংস খেলেছেন, তা রাহুলকে অনেক সেঞ্চুরির থেকেও তো বেশি তৃপ্তি দেবে! আর ২ রান বা তার কমে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে ফেলার পরও যে তারা জিতেছেন! ওয়ানডে ইতিহাসেই যা আগে পারেনি কোনো দল।

অবশ্য আরেক রাহুল অর্থাৎ দ্রাবিড় বলতে পারেন, আমিও তো জিতিয়েছি, যেদিন ৪ রানে ৩ উইকেট পড়ে গিয়েছিল! তাই স্মৃতির ঘরে ঢুঁ মারার ভালো উপলক্ষ পেয়ে গেলেন দুই রাহুলই। আর এমন ম্যাচ তো স্মৃতির ঘরে স্থায়িত্বই পেয়ে যায়!

Comments

The Daily Star  | English

Patent waiver till Nov 2026: Local pharmas may miss window for 15 costly drugs

Bangladesh’s pharmaceutical companies risk losing the chance to produce at least 15 costly biologic drugs royalty-free

9h ago