ব্যাটিং অর্ডারে অপ্রয়োজনীয় ওলট-পালট, মুশফিক ছাড়া ম্লান বাকিরা

এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং অর্ডার যেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মঞ্চ। তিনে সফল নাজমুল হোসেন শান্ত হুট করেই চারে, পাঁচে সফল তাওহিদ হৃদয়কে নামিয়ে দেওয়া হলো সাতে। এমন ফাটকায় লাভ হলো না। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুশফিকুর রহিম ছাড়া আর কেউই মেটাতে পারলেন না দলের চাহিদা।
চেন্নাইর চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে আগে ব্যাটিং পেয়ে বাংলাদেশ করতে পারল না আড়াইশো রানও। ইনিংস থামল ২৪৫ রানে। এই রানও হতো না, যদি না মুশফিক ৭৫ বলে ৬৫ করতেন। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকেও আসে ৫১ বলে ৪০ রান। তবে ভুল সময়ে আউট হয়ে তিনি বাড়ান বিপদ। শেষ দিকে ৪৯ বলে মাহমুদউল্লাহ ৪১ করে অপরাজিত থাকলেও আটে নামা কারো কাছ থেকে আরও আগ্রাসী ইনিংস প্রত্যাশিত ছিলো।
এদিন ম্যাচের শুরুতেই বিপদ ডেকে আনেন লিটন দাস। নিজের 'অফিসিয়াল' জন্মদিন রাঙানোর মঞ্চ ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ম্যাচে রান পাওয়া ব্যাটারের। হেলায় সেটায় হারান তিনি। ইনিংসের একদম প্রথম বলে আলতো ভঙিতে খেলতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দেন বাংলাদেশের ওপেনার।
ফাইন লেগের দিকে বাউন্ডারি ছিল ৫৯ মিটার। তবে তিনি শটটা খেলতে চেয়েছিলেন স্কয়ার লেগের দিকে। একটু বেশি ভেতরে খেলায় বল জায়গা মতো যায়নি।
ফ্লিকে কাবু আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমও। তার শুরুটা আগের দুই ম্যাচের তুলনায় ভালো। তবে সেটা টেনে নিতে হবে তো! প্রথম চেঞ্জে লকি ফার্গুসন আসতেই হয়ে গেল গড়বড়। ফ্লিক করতে গিয়ে তানজিদ ডুবলেন। গত কদিন ধরে পুরো ব্যাটার বনে যাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ থিতু হয়েও দিলেন আত্মাহুতি। পুল শটে সেই ফাইন লেগেই ধরা।
অফ স্পিনার গ্লেন ফিলিপসের বলে নাজমুল হোসেন শান্ত উইকেটের বাউন্স, পেস বুঝতে পারলে না। কিছুটা লাফিয়ে উঠা বলে ব্যাট লাগিয়ে ধরা দিলেন মিড উইকেটে। ১২.১ ওভারে ৫৬ রানে নেই ৪ উইকেট!
চরম বিপদে দলের হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ মুশফিক-সাকিব। সাকিব থিতু হতে ভুগছিলেন, মুশফিক শুরু থেকেই ছিলেন চনমনে। মুশফিকের ব্যাটে দলের রানের চাকা থাকে সচল। পঞ্চম উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে দলকে খেলায় ফেরান তারা। জড়সড়ো না থেকে প্রবল চাপে মুশফিকের ইতিবাচক মেজাজ সাকিবকেও দেয় ভরসা।
এই জুটি যখন বাংলাদেশকে দিচ্ছিল বড় রানের আভাস, তখনই সাকিব উইকেট ছুঁড়ে দেন। ফার্গুসনের বাউন্সারে হকচকিয়ে ব্যাট লাগিয়ে এক ছক্কা পাওয়ার পরও আরেকটি শর্ট বল উড়াতে গিয়ে দেন ক্যাচ। তার আগের ওভারে পায়ে টান পড়ায় কিছুটা অস্বস্তিতে ভুগছিলেন তিনি।
৫১ বলে ৪০ রান করে সাকিবের বিদায়ের পর মুশফিকই ছিলেন দলের ভরসা। দলের চাহিদা মেনে খেলছিলেনও তিনি। মুশফিকের বিদায় বড় দুর্ভাগ্যজনক পথে। হেনরির আচমকা নিচু হওয়া বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। তার ৭৫ বলে ৬৫ রানের ইনিংস থামতে উল্টো স্রোতে হাঁটা শুরু বাংলাদেশের।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকে পাঁচে খেলে দারুণ সফল তাওহিদ হৃদয়ে গত ক'ম্যাচ ধরে নামানো হচ্ছে সাতে। মিরাজকে উপরে খেলিয়ে তাকে সাতে পাঠানোর চিন্তা আবারও করল ব্যাকফায়ার। হৃদয় সাতের ভাষা বুঝতে পারলেন না। আড়ষ্ট হয়ে গিয়ে ক্যাচ দেন বোল্টের বলে। ২৫ করে ফেরেন ১৩ রান করে।
শেষ দিকে পরিস্থিতির দাবি মেটানোর সুযোগ ছিল মাহমুদউল্লাহর। পরিসংখ্যান বলবে তিনি ৪১ রানে অপরাজিত থেকে অবদান রেখেছেন। তবে খেলার ছবি বলছে ভিন্ন কথা। টেল এন্ডারদের আগলে রাখার বদলে তাদের ওভারের প্রথম বলেই স্ট্রাইক দিয়ে গেছেন তিনি। শেষ দুই ওভারে দুই ছক্কায় রান বাড়ালেও দলকে নিতে পারেননি শক্ত পুঁজিতে। আড়াইশরো নিচে পুঁজি নিয়ে জিততে হলে এবার বোলারদের রাখতে হবে বিশেষ ভূমিকা।
Comments