আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

অস্ট্রেলিয়ান স্কট এডওয়ার্ডসের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারিগর অজিরাই!

একটা টি-শার্ট। সামনে নেদারল্যান্ডসের জার্সির অংশ, পেছনে অস্ট্রেলিয়ার জার্সির। দুই দেশকেই একসঙ্গে ধরে রাখার চেষ্টায়, টি-শার্টটা বানিয়েছেন ইয়াং নামের এক ভদ্রলোক।

অস্ট্রেলিয়ান স্কট এডওয়ার্ডসের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারিগর অজিরাই!

scott edwards

একটা টি-শার্ট। সামনে নেদারল্যান্ডসের জার্সির অংশ, পেছনে অস্ট্রেলিয়ার জার্সির। দুই দেশকেই একসঙ্গে ধরে রাখার চেষ্টায়, টি-শার্টটা বানিয়েছেন শ্যানন ইয়াং নামের এক ভদ্রলোক। মজা করতে কিংবা দুই দেশকে সমর্থন করেন বলে নয়। ইয়াং আসলে বেকায়দায় পড়ে গিয়েই অমনটা করেছিলেন!

ভদ্রলোকের পরিচয়— তিনি রিচমন্ড ক্লাবের কোচ। অস্ট্রেলিয়ার যে ক্লাবের হয়ে খেলেন নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। বিশ্বকাপে এবার নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হওয়ায় এডওয়ার্ডসকেও সমর্থন দিতে হয়, নিজের দেশকে তো সমর্থন না দিলে হবেই না! সেজন্যই অমন জার্সি তৈরি করার চিন্তা আসে এডওয়ার্ডসের কোচের। অস্ট্রেলিয়ার একটি দৈনিককে ইয়াং জানিয়েছিলেন সে 'মধুর' দোটানার কথা।

গতকাল বুধবার অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডস বিশ্বকাপের ম্যাচ যখন দিল্লিতে চলছিল, মেলবোর্নে এডওয়ার্ডসের বন্ধু-বান্ধবও খেলা দেখতে বসেছিলেন নিশ্চয়ই। সেখানে হয়তো তারাও এমন দোটানায় পড়েছিলেন। বন্ধুকে সমর্থন দিবেন নাকি নিজের দেশকে? এডওয়ার্ডস তো নিজেও অস্ট্রেলিয়ান!

জন্ম অবশ্য হয়েছে টোঙ্গা নামের এক দ্বীপদেশে। বাবা কাজের সূত্রে সেখানে গিয়েছিলেন বলে সেটিই তার জন্মস্থান হয়ে গেছে। তবে অস্ট্রেলিয়ান বাবা-মায়ের ঘরে বেড়ে উঠেছেন অস্ট্রেলিয়াতেই। মেলবোর্নের স্কুলে পড়াশোনা, খেলাধুলাও ওখানেই শুরু। ক্লাব ক্রিকেটে খেলেছেন নিয়মিত। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া দল ভিক্টোরিয়ার দ্বিতীয় একাদশেও জায়গা পেয়েছিলেন। তবে শেষমেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখলেন যখন, পরনে তার কমলা জার্সি।

ডাচ পাসপোর্টের অধিকারী বনেছেন আসলে দাদীর মারফতে। এডওয়ার্ডসের দাদী নেদারল্যান্ডসের নাগরিক ছিলেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন, সে ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়েই ডাচ নাগরিকত্ব নেননি। আত্মীয়তার সংযোগ ও ঘোরাঘুরির পথ খোলা রাখতেই ডাচ পাসপোর্ট বানিয়েছিলেন। তবে ক্রিকেটেই যেহেতু মন-প্রাণ উজাড়, সেখানেও ক্রিকেট খুঁজে নেওয়াটাই স্বাভাবিক! ঘরোয়া পর্যায়ে খেলেন কয়েক মৌসুম। পরে ২২ বছর বয়সে তার অভিষেক হয়ে যায় নেদারল্যান্ডসের হয়ে!

অস্ট্রেলিয়ান এডওয়ার্ডস খেলতে লাগলেন নেদারল্যান্ডসের হয়ে। এমনটা অজিরা আগেও দেখেছে। চলতি বিশ্বকাপেই ধারাভাষ্যে থাকা ডার্ক ন্যানেস আছেন, আছেন টম কুপার। তাদের পর এডওয়ার্ডসও খেললেন, এমনকি নেদারল্যান্ডসের নেতৃত্বের ভারই পড়ে গেল তার কাঁধে।

এ পর্যন্ত ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৩৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ডাচদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন পূরণের পর বিশ্বকাপ তাকে দিল নিজেরই দেশের সামনে দাঁড় করিয়ে! দিল্লিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই টস করতে নামলেন এডওয়ার্ডস। এখনও গ্রেড ক্রিকেট (অস্ট্রেলিয়ার রাজ্য ও অঞ্চলভিত্তিক  সিনিয়র পর্যায়ের আন্তঃক্লাব বা আন্তঃজেলা ক্রিকেট প্রতিযোগিতা) খেলে থাকেন। উচ্চতর পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ারই এক বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শুধু তা-ই নয়, নেদারল্যান্ডসে ক্রিকেটের প্রসারের, ক্রিকেটের দিন-বদলের যে স্বপ্ন দেখে ডাচরা, তাতে এডওয়ার্ডস মুখ্যই! ২০২০ সালে নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটারদের উন্নয়নের লক্ষ্যে যে ক্রিকেটারস অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করা হয়, সেটি ওই পল ফন মিকেরেন ও এডওয়ার্ডস মিলেই। এখনও নেদারল্যান্ডস ক্রিকেট বোর্ড চার জনের বেশি ক্রিকেটারকে কেন্দ্রীয় চুক্তি দেওয়ার সামর্থ্য রাখে না। সেই চার জনের মধ্যে এডওয়ার্ডস একজন।

বিশ্বকাপে নিজের দেশের বিপক্ষে খেলতে কেমন লাগবে? অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে এডওয়ার্ডস বলেছিলেন, এ বিষয়ে ওভাবে তিনি এত বেশি চিন্তাই করছেন না! তাদের সেমিফাইনালের যে লক্ষ্য, সেটিতেই চোখ। সামনে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কিংবা হোক আফগানিস্তান, কাউকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই।

অস্ট্রেলিয়ান হলেও যদিও এডওয়ার্ডসের অস্ট্রেলিয়া দলের কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। শুধু মনে করতে পারেন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বিপক্ষে ক্লাব ক্রিকেটে খেলেছিলেন। এবার দিল্লিতে যখন বিশ্বকাপের মঞ্চে মুখোমুখি হন, ম্যাক্সওয়েলের তোলা ঝড় তাকে চরম দুশ্চিন্তায়ই ফেলে দিয়েছিল। ম্যাক্সওয়েল যে মারদাঙ্গা ব্যাটিং করছিলেন, প্রতিপক্ষের অধিনায়ক হলে তো চিন্তায় না পড়ে আর উপায় নেই!

এডওয়ার্ডসের দল অজিদের ৩৯৯ রানের আগে রুখতে পারেনি। লক্ষ্য তাড়ায় চতুর্থ উইকেটের পতনের পর এডওয়ার্ডস ব্যাটিংয়ে নেমে দেখেছেন তার সতীর্থদের যাওয়া-আসার মিছিল। ২১ ওভারে অলআউট হয়ে লড়াইটাও করতে পারেনি ডাচরা। ওয়ানডেতে এত কম ওভারে আগে কখনোই তারা অলআউট হয়নি! ৯০ রানে গুটিয়ে গেলে অস্ট্রেলিয়ার ৩০৯ রানের বিশাল জয় দেখেছেন সেই ইয়াং, দেখেছেন শিষ্য এডওয়ার্ডসের হার।

কেমন অনুভূতি হলো তার? ম্যাচের পর এডওয়ার্ডস ইতিবাচকভাবে বললেন, সময় সামনে তাকানোর। তবে এর চেয়ে বড় হার তো কোনো দলকেই 'বরণ' করে নিতে হয়নি বিশ্বকাপের মঞ্চে! রানের হিসাবে ওয়ানডে ইতিহাসেই এর চেয়ে বড় হারের অভিজ্ঞতা আছে আর মাত্র একটি দলের। এডওয়ার্ডস যদি কখনো ফিরে তাকান এই ম্যাচের দিকে, দেখতে পাবেন যে, এ পর্যন্ত তার ক্রিকেটীয় জীবনের সবচেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা অস্ট্রেলিয়া— তার নিজ দেশের বিপক্ষেই হয়েছে!

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোক কিংবা অন্য যেকোনো দলের বিপক্ষে, হার তো হারই! পাঁচ বছর ধরে নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধিত্ব করা এডওয়ার্ডস তাই নিজ দেশের বিপক্ষে হার নিয়ে আলাদাভাবে হয়তো ভাববেন না। তাছাড়া, ডাচদের সপ্তম অধিনায়ক তো নিজ গুণেই তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে আলাদা করে জায়গা পাওয়ার সামর্থ্য রাখেন। আর পেশাদারিত্ব তো বটেই, এডওয়ার্ডসের ডাচ পরিচয় ও তাদের হয়ে দায়িত্বটাও ওজনে এতটাই 'ভারী' যে, নিজ দেশের বিপক্ষে খেলা নিয়ে ভাবনাই 'হালকা' হয়ে যাওয়ার কথা!

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Prof Yunus named among Time’s 100 Most Influential People of 2025

A tribute article on Prof Yunus was written by Hillary Clinton for the magazine

3h ago