আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

দক্ষিণ আফ্রিকার রোমাঞ্চকর জয়ে পাকিস্তানের সেমির আশায় ধাক্কা

চেন্নাইতে ১ উইকেটের নাটকীয় জয় পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল।

দক্ষিণ আফ্রিকার রোমাঞ্চকর জয়ে পাকিস্তানের সেমির আশায় ধাক্কা

চেন্নাইতে ১ উইকেটের নাটকীয় জয় পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল।
ছবি: রয়টার্স

এইডেন মার্করাম ও ডেভিড মিলার যখন ক্রিজে ছিলেন, তখন দক্ষিণ আফ্রিকার জয় স্রেফ সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল। শাহিন শাহ আফ্রিদি এই জুটি ভেঙে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু দেওয়ার পর ছড়াল চরম উত্তেজনা। লক্ষ্য থেকে ১১ রান দূরে থাকতে ৯ উইকেট হারিয়ে উল্টো হারের শঙ্কায় পড়ে গেল প্রোটিয়ারা। তা উড়িয়ে শেষ জুটিতে কেশব মহারাজ ও তাবরাইজ শামসির কল্যাণে পাকিস্তানের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর জয় পেল দলটি

শুক্রবার বিশ্বকাপের ম্যাচে চেন্নাইতে ১ উইকেটের নাটকীয় জয় পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল। টস জিতে আগে ব্যাট করে ৪৬.৪ ওভারে ২৭০ রানে অলআউট হয় বাবর আজমবাহিনী। জবাবে তুমুল রোমাঞ্চের পর ১৬ বল বাকি থাকতে জয় নিশ্চিত করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

২৪ বছর পর বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানকে হারানোর স্বাদ পেল তারা। সবশেষ ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে দুই দলের লড়াইয়ে জিতেছিল প্রোটিয়ারা।

ছয় ম্যাচে পঞ্চম জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে নেট রান রেটের হিসাবে শীর্ষে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমিফাইনালে ওঠার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে তারা। এক ম্যাচ কম খেলে সমান পয়েন্ট পাওয়া স্বাগতিক ভারত নেমে গেছে দুইয়ে।

ছয় ম্যাচে পাকিস্তানের এটি টানা চতুর্থ হার। ৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান পয়েন্ট তালিকার ষষ্ঠ স্থানে। তাদের সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনায় লেগেছে জোরালো ধাক্কা।

বিশ্বকাপের আগের ২৫ ম্যাচে যা দেখা যায়নি, এদিন অবশেষ তা মিলেছে। এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে জমজমাট লড়াই হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের মধ্যে।

দক্ষিণ আফ্রিকার রান সেসময় ৪ উইকেটে ২০৬। ৩৩ বলে ২৯ করা মিলারকে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের ক্যাচ বানান বাঁহাতি পেসার শাহিন। বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আভাস দেওয়া মার্কো ইয়ানসেনকে স্লোয়ারে থামান আরেক পেসার হারিস রউফ। এরপরও সহজ জয়ের দিকে ছুটছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

হাতে ৪ উইকেট নিয়ে ৫৯ বলে তাদের দরকার ছিল মোটে ২১ রান। তখনই মনোযোগ নড়ে যায় মার্করামের। ফিল্ডিংয়ের সময় ব্যথা পাওয়া শাদাব খানের জায়গায় বিশ্বকাপের প্রথম কনকাশন বদলি স্পিনার উসামা মীরকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে হন কুপোকাত। কভার পয়েন্টে বাবর তালুবন্দি করেন অনেক উঁচুতে ওঠা বল।

সেঞ্চুরির সুবাস জাগিয়ে ৯৩ বলে ৯১ রানে আউট হন মার্করাম। তার ইনিংসে ছিল ৭ চার ও ৩ ছক্কা। এরপর জেরাল্ড কোয়েটজিকে শাহিন ও অসাধারণ ফিরতি ক্যাচে লুঙ্গি এনগিদিকে রউফ ফেরালে প্রোটিয়াদের বদলে 'আনপ্রেডিক্টেবল' পাকিস্তানই ফেভারিট হয়ে পড়ে।

বাকি উইকেটের খোঁজে তিন পেসারকে ব্যবহার করতে থাকেন বাবর। শাহিন, রউফের পাশাপাশি মোহাম্মদ ওয়াসিমের ওভারও শেষ হয়ে যায়। এরপর আক্রমণে আনা হয় বাঁহাতি স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নওয়াজকে। ৪৮তম ওভারে তার প্রথম বলে শামসি সিঙ্গেল নেওয়ার পর লেগ স্টাম্পে থাকা দ্বিতীয় বলে চার মেরে খেলা শেষ করে দেন মহারাজ। 'চোকার্স' তকমা গায়ে সেঁটে থাকলেও উল্লাসে মাতে দক্ষিণ আফ্রিকাই।

পাকিস্তান অবশ্য নিজেদের দুর্ভাগা ভাবতে পারে! রউফের করা ৪৬তম ওভারের শেষ বলে শামসির বিপক্ষে এলবিডব্লিউয়ের জোরালো আবেদন তোলে তারা। আম্পায়ার আউট না দিলে নেওয়া হয় রিভিউ। কিন্তু আম্পায়ার্স কল হওয়ায় বেঁচে যান শামসি।

মহারাজের কথা আলাদাভাবে না বললেই নয়! এই বাঁহাতি স্পিনার ব্যাট হাতে দেখান ভরসা। দেখেশুনে ২১ বল মোকাবিলায় ৭ রান করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। শামসি ৬ বলে করেন অপরাজিত ৪ রান।

প্রোটিয়াদের আট ব্যাটার পৌঁছান দুই অঙ্কে। কিন্তু মার্করাম ছাড়া বাকিরা ত্রিশের নিচেই আটকে যান। তৃতীয় উইকেটে রাসি ফন ডার ডুসেনের সঙ্গে ৫৪ বলে ৫৪ ও পঞ্চম উইকেটে মিলারের সঙ্গে ৬৯ বলে ৭০ রান যোগ করেন মার্করাম। পাকিস্তানের হয়ে ৩ উইকেট নেন শাহিন। রউফ, ওয়াসিম ও মীর পান দুটি করে উইকেট।

এর আগে পাকিস্তানের সাত ব্যাটার যান দুই অঙ্কে। কিন্তু কেউই মার্করামের মতো ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। ইয়ানসেনের শুরুর দাপটের পর মাঝের ওভারগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু দেন শামসি। তাতে তিনশর আশা জাগানো প্রতিপক্ষকে আগেভাগে থামায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

পাকিস্তানের ইনিংসের শুরুতেই জোড়া ধাক্কা দেন ইয়ানসেন। দীর্ঘদেহী এই দক্ষিণ আফ্রিকান সাত ওভারের মধ্যে তুলে নেন দুই ওপেনারকে। শর্ট বল উড়িয়ে মেরে সীমানার কাছে ক্যাচ দেন আব্দুল্লাহ শফিক। ফাঁদে পা দিয়ে কাটা পড়েন ইমাম উল হক। ডিপ স্লিপে তার ক্যাচ তালুবন্দি করেন হেইনরিখ ক্লাসেন।

৩৮ রানে ২ উইকেট হারানো পাকিস্তানের বিপদ আরও বাড়তে পারত। উইকেটে যাওয়ার পর প্রথম বলেই আউট হতে পারতেন রিজওয়ান। তার তোলা ফিরতি ক্যাচ সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও হাতে জমাতে পারেননি ইয়ানসেন।

জীবন পেয়ে চালিয়ে খেলতে থাকেন রিজওয়ান। উইকেটরক্ষক-ব্যাটার সঙ্গী হিসেবে পান অধিনায়ক বাবরকে। তারা গড়ে তোলেন প্রতিরোধ। তবে খুব বড় হওয়ার আগেই ভাঙে জুটি। কোয়েটজির বাউন্সারে উইকেটের পেছনে কুইন্টন ডি ককের গ্লাভসে জমা পড়ে রিজওয়ানের ক্যাচ।

২৭ বলে ৩১ করে থামেন রিজওয়ান। তার সঙ্গে ৫৬ বলে ৪৮ রানের জুটির পর ইফতিখার আহমেদকে নিয়ে ৫৬ বলে ৪৩ রানের জুটি গড়েন বাবর। ইফতিখার ছটফট করছিলেন। শামসির ওপর চড়াও হতে গিয়ে ইতি ঘটে তার সংগ্রামের। ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে উড়িয়ে মেরেছিলেন তিনি। লং অনে দারুণ এক ক্যাচ নেন ক্লাসেন।

ফিফটির পরপরই বাবর ফিরলে ১৪১ রানে পতন হয় পাকিস্তানের পঞ্চম উইকেটের। শেষ মুহূর্তে রিভিউ নিয়ে পাকিস্তানের দলনেতাকে বিদায় করে প্রোটিয়ারা। শামসিকে সুইপ করার চেষ্টায় ঠিকমতো সংযোগ ঘটাতে পারেননি বাবর। গ্লাভসে আলতো করে স্পর্শ করে বল চলে যায় ডি ককের গ্লাভসে। ৬৫ বলে ৫০ করেন বাবর। তার ইনিংসে ছিল ৪ চার ও ১ ছক্কা।

চাপের মুখে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে প্রতিরোধের বদলে পাল্টা আক্রমণে নামেন সৌদ শাকিল ও শাদাব। নিয়মিত বাউন্ডারি আদায় করতে থাকেন তারা। এতে ২০তম ওভারে শতরান পূর্ণ করা পাকিস্তান দুইশ ছোঁয় ৩৭তম ওভারে। বড় পুঁজির সুবাস পেতে থাকে দলটি।

দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা জুটিকে বিচ্ছিন্ন করেন কোয়েটজি। ৪০তম ওভারে শাদাবের আগ্রাসন থামান তিনি। ৩৬ বলে ৩ চার ও ২ ছয়ে তিনি করেন ৪৩ রান। ৭১ বলে ৮৪ রানের এই জুটি ভাঙার পর পাকিস্তানকে আর বেশি দূর এগোতে দেয়নি প্রোটিয়ারা।

বাবরের মতো শাকিলও হাফসেঞ্চুরি করেই সাজঘরের পথ ধরেন। ৫২ বল ৫২ রানের ইনিংসে তিনি মারেন ৭ চার। শামসির লেগ ব্রেকে পরাস্ত হন তিনি। ২৪ বলে ২৪ করা নওয়াজকে আউট করেন ইয়ানসেন। ৪৫ রানে পাকিস্তানের শেষ ৫ উইকেট তুলে নেওয়ার তৃপ্তি নিয়েই তাই ইনিংস বিরতিতে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

পেস বোলিং অলরাউন্ডার ইয়ানসেন ৩ উইকেট নেন ৪৩ রানে। ম্যাচসেরা বাঁহাতি স্পিনার শামসি ৪ উইকেট শিকার করেন ৬০ রানে। ৪২ রানে ২ উইকেট যায় ডানহাতি পেসার কোয়েটজির ঝুলিতে।

Comments

The Daily Star  | English

AC technicians facing backlog of installation, repair orders

Ferdous Hasan, who lives in the Motijheel area of Dhaka, recently purchased an air conditioner (AC) in a bid to find some respite from the ongoing heatwave sweeping across Bangladesh. However, he has been left frustrated by a prolonged delay in installation.

15m ago