টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১: বিশ ওভারে অজিদের প্রথম বিশ্বজয়
২০১৬ সালের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লম্বা একটা বিরতি পড়ে যায়। এমনিতে সূচিতে পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছিল অস্ট্রেলিয়ায় ২০২০ সালে। ভারতে ২০২১ সালেও ছিল আরেকটি। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি বদলে দেয় চেনা দৃশ্যপট। ২০২০ সালে আর বৈশ্বিক আসর আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
২০২০ সালের বিশ্বকাপ সরে আসে ২০২২ সালে। আর ২০২১ সালের বিশ্বকাপ ভারতের বদলে খেলা নিয়ে আসা হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে।
দীর্ঘদিন প্রিয় দলগুলোর হাই ভোল্টেজ ম্যাচ দেখতে না পারা ভক্তদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায় এতে। শুরু হয়ে যায় কে শিরোপা জিতবে সেই তর্ক, সাবেকরাও ধরতে থাকেন তাদের দলের পক্ষে বাজি।
ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয় ২০২১ এর অক্টোবরে। মাস্কাটে আইসিসির দুই সহযোগী সদস্য পাপুয়া নিউগিনি ও ওমানের লড়াই দিয়ে শুরু হয় বিশ্বকাপ। একই দিনে মাঠে নামে বাংলাদেশও, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ছয় রানে হেরে শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে যায় টাইগাররা।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সেই বিশ্বকাপ ছিল আইসিসির কোন আসরে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভরাডুবি। প্রাথমিক রাউন্ডে নেমেই স্কটল্যান্ডের কাছে ধরাশায়ী হয় বাংলাদেশ। তবে ওমান ও পাপুয়া নিউগিনি বাধা সরিয়ে ঠিকই জায়গা করে নেয় সুপার টুয়েলভে। কিন্তু সেই পর্বের সবগুলো ম্যাচ হেরে বিব্রতকর ফল নিয়ে দেশে ফেরেন সাকিব আল হাসানরা।
প্রথম পর্বের এ গ্রুপে দাপটের সঙ্গে সব ম্যাচ জিতে শেষ বারোর লড়াইয়ে নাম লেখায় শ্রীলঙ্কা। এদিকে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে এসেই সুপার টুয়েলভে পা রেখে চমকে দেয় নামিবিয়া।
সুপার টুয়েলভ পর্ব শুরু হয় ২৩ অক্টোবর থেকে। প্রথম খেলাটি ছিল লো স্কোরিং। দক্ষিণ আফ্রিকার ১১৮ রান কষ্টেসৃষ্টে পার করে অস্ট্রেলিয়া। দুবাইতে দিনের অপর ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৫৫ রানে গুটিয়ে যায় ২০১৬ আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এদিকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭১ রান করেও শেষ রক্ষা হয়নি বাংলাদেশের।
৫ উইকেটে হেরে সুপার টুয়েলভ শুরু করে রিয়াদ বাহিনী। পরদিনের হাই ভোল্টেজ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে বিরাট কোহলির দলকে ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারায় বাবর আজমের দল। ধীরগতির স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে ভক্তদের কাঠগড়ায় উঠেন অনেক ভারতীয় ব্যাটার।
২৭ অক্টোবর সাকিব রিয়াদদের ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারাতে একটুও বেগ পেতে হয়নি গত আসরের ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ডকে। পরের ম্যাচে শারজাহতে একটুর জন্য জয়বঞ্চিত হতে হয় টাইগারদের। ১৪৩ রানের লক্ষ্যে লিটন-রিয়াদের ব্যাটে দারুণ এগিয়ে চলা বাংলাদেশ থামে জয় থেকে মাত্র চার রান দূরে।
১৯তম ওভারের শেষ বলে আউট হয়ে যান লিটন (৪৪), শেষ ওভারে মাহমুদউল্লাহকে ১৩ রান নিতে দেননি আন্দ্রে রাসেল। নিজেদের চতুর্থ ম্যাচেও হতশ্রী পারফরম্যান্স অব্যাহত রাখে রাসেল ডমিঙ্গোর অধীনে খেলা দল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ৮৪ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। লিটন দাস, শেখ মেহেদী ও শামিম পাটোয়ারী ছাড়া কেউই সেদিন পাননি দুই অঙ্কের দেখা।
এই রান করতেই চার উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে আরও বেহাল দশা হয় রিয়াদের দলের, এবার তারা অলআউট হন মাত্র ৭৩ রানে। ৮ উইকেট হাতে রেখে সেই ম্যাচ জিতে নেয় অজিরা।
আসরের তৃতীয় সর্বনিম্ন রানের হতাশায় পোড়ে স্কটল্যান্ড, ভারতীয় বোলাররা মাত্র ৮৫ রানেই বেঁধে ফেলেন জর্জ মানসিদের। সুপার টুয়েলভের বি গ্রুপে দাপটের সঙ্গে সব ম্যাচ জিতে নিজেদের বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদারে পরিণত করে বাবর আজমের দল। অন্যদিকে গ্রুপ পর্ব থেকে ভারতের বিদায়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন বিরাট ও তার সতীর্থরা।
বি গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ চার নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ড। এ গ্রুপে আবার সৃষ্টি হয় মধুর সমস্যা, সমান পয়েন্ট লাভ করে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। রান রেটে পিছিয়ে সেই যাত্রা দেশে ফিরে যেতে হয় টেম্বা বাভুমা, কুইন্টন ডি ককদের।
প্রথম সেমিতে ইংল্যান্ডের ১৬৬ রান ৫ উইকেট হাতে রেখেই টপকে যায় কেন উইলিয়ামসনের দল। পরের ম্যাচে ১৭৬ রান করেও হারতে হয় পাকিস্তানকে। ম্যাথু ওয়েডের বিস্ফোরক ব্যাটিং ও হাসান আলির ক্যাচ ছাড়ায় আলোচিত হয় এই ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার ৫ উইকেটের জয়ে ফাইনাল পরিণত হয় তাসমান পাড়ের লড়াইয়ে।
ফাইনালে আগে ব্যাট করে উইলিয়ামসনের ৮৫ রানের কল্যাণে ১৭২ রান করে কিউইরা, তবে দিনশেষে অজিদের কাছে তা হয়ে পড়ে নগণ্য। মিচেল মার্শের ৭৭ ও ডেভিড ওয়ার্নারের ফিফটিতে ৮ উইকেটের বড় জয়ে শিরোপা লাভ করে ক্যাঙ্গারুরা। ফাইনালের ম্যাচসেরা হন মার্শ, ২৮৯ রান করে আসরের সেরা খেলোয়াড় হন ডেভিড ওয়ার্নার। সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা অস্ট্রেলিয়া কুড়ি ওভারে সপ্তম আসরে এসে পায় সেরা সাফল্য।
৩০৩ রান করে সেবার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন বাবর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০২১ বিশ্বকাপের একমাত্র সেঞ্চুরিটি করেছিলেন জশ বাটলার (১০১*)। সেটিই আসরের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ডি সিলভা ১৬ উইকেট নিয়ে হন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। ১১ উইকেট নিয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হন সাকিব।
গোটা আসর দুর্দান্ত খেলেও শিরোপা না পেয়ে ভগ্ন হৃদয়ে আমিরাত ছাড়ে পাকিস্তান। এদিকে ক্ষুদ্রতম ফরম্যাটের সাতটি বিশ্বকাপ খেলেও সফলতা থেকে দূরে থেকে যায় বাংলাদেশ। সময়ের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি যে হয়ে উঠবে আরও বেশি বৈচিত্র্যের খেলা সেই ইঙ্গিত দিয়ে বিদায় নেয় ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
Comments