বাবর-রিজওয়ানের ব্যাটে চড়ে সেই পাকিস্তানই ফাইনালে

বুধবার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে পা রাখল বাবর আজমের দল।
Babar Azam

প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সুপার টুয়েলভ পর্ব থেকেই ছিটকে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল পাকিস্তান। নাটকীয়ভাবে সেমিফাইনালে উঠে এবার তারা  জায়গা করে নিল ফাইনালে। গোটা আসরে মাত্র একটি ম্যাচ হারা নিউজিল্যান্ডকে হেসে খেলে হারালো আনপ্রেডিক্টেবল দলটি। ব্যাটিং উইকেটে বড় সংগ্রহ গড়তে না পারাটাই কাল হলো কিউইদের। বিশ্ব আসরের সেমিফাইনালে পাকিস্তানের কাছে আরও একবার স্বপ্ন ভঙ্গের হতাশায় পুড়ল তারা।

বুধবার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে পা রাখল বাবর আজমের দল। আগে ব্যাট বেছে ৪ উইকেটে ১৫২ রান করেছিল কিউইরা। ৫ বল আগে সেই রান  পেরিয়ে গেল পাকিস্তান।

Mohammad Rizwan

৪৩ বলে সর্বোচ্চ ৫৭ রান করেন পুরো আসরে নীরব থাকা রিজওয়ান অধিনায়ক বাবর ৪২ বলে খেলে যান ৫৩ রানের ইনিংস। ২৬ বলে ৩০ রান করে শেষটায় ভূমিকা রেখেছেন তরুণ মোহাম্মদ হারিস।

এই নিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে চারবার পাকিস্তানের কাছে সেমিফাইনাল হারল নিউজিল্যান্ড। ১৯৯২ ও ১৯৯৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিতে হেরেছিল তারা। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও নিউজিল্যান্ডের দুঃখের কারণ হয় পাকিস্তান।  

রান তাড়ায় নেমে শূন্য রানে জীবন পান পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর। ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে পুশ করতে গিয়ে আউটসাইড এজের ফাঁদে পড়েন তিনি। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েও নিচু ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি ডেভন কনওয়ে। পরবর্তীতে সেই ভুলের কড়া মাসুল দিতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে।

তৃতীয় ওভার থেকেই আক্রমণাত্মক রূপ ধারণ করেন দুই পাকিস্তানি ওপেনার। বোল্টের সেই ওভার থেকে তিন চারে ১৫ রান আদায় করে নেন বাবর-রিজওয়ান। একের পর এক বাউন্ডারিতে ৫৫ রান তুলে পাওয়ারপ্লে শেষ করেন তারা। এরপর আরও আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং উপহার দিতে থাকেন এই জুটি। টিম সাউদি, লোকি ফার্গুসন কেউই রক্ষা পাননি তাদের আক্রমণের হাত থেকে।

গোটা আসর নিজের ছায়া হয়ে থাকা বাবর রানে ফেরার জন্য বেছে নিলেন সেমিফাইনালকেই। একাদশ ওভারের শেষ বলে দুই রান নিয়ে ৩৮ বলে ব্যক্তিগত অর্ধশতকের দেখা পান পাক দলনেতা। তার ও রিজওয়ানের ছন্দময় ব্যাটিংয়ে মামুলি মনে হতে থাকে নিউজিল্যান্ডের পুঁজি। মাত্র ৭০ বলে পাকিস্তানের দলীয় সংগ্রহ স্পর্শ করে শতরান।

১৩তম ওভারে মিচেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে যখন বাবর ফিরে যান ততক্ষণে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে এসেছে পাকিস্তানের কাছে। ৪২ বলে ৫৩ রান করে বোল্টকে উইকেট দিয়ে বিদায় নেন তিনি। এর পরের ওভারে রিজওয়ানও স্পর্শ করেন ফিফটি। ১৭তম ওভারের শেষ বলে বিদায় নেন তিনিও। ৪৩ বলে ৫৭ রান করা রিজওয়ানকেও তুলে নেন বোল্ট। এরপর মোহাম্মদ হারিস এসে করেন ২৬ বলে ৩০ রান।

১৯তম ওভারের শেষ বলে তাকে ফেরান মিচেল স্যান্টনার। তখন জয় হাতের নাগালে।  এরপর শান মাসুদ ও ইফতিখার আহমেদ অপরাজিত থেকে পাকিস্তানকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। কিউই বোলারদের মধ্যে দুই উইকেট শিকার করেন বোল্ট, স্যান্টনার লাভ করেন একটি উইকেট। অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন রিজওয়ান।  

টসে জিতে ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো করতে পারেনি কিউইরা। প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই ফিন অ্যালেনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। মাত্র চার রান করে ফিরে যান বিধ্বংসী ওপেনার। অপর প্রান্তে স্বভাবসুলভ ধীরস্থিত ব্যাটিং করতে থাকেন কনওয়ে। অধিনায়ক উইলিয়ামসনকে নিয়ে গড়েন ৩২ বলে ৩৪ রানের জুটি।

এদিকে চতুর্থ ওভারে বল হাতে পাওয়া হারিস রউফ যথারীতি গতির ঝড়ে কুপোকাতের চেষ্টা চালাতে থাকেন দুই ব্ল্যাক ক্যাপস ব্যাটারকে। বেশ কয়েকবার ছোঁড়েন ১৫০ কিলোমিটার ও তার চেয়ে অধিক গতির গোলা। তবে গতি দিয়ে কনওয়েকে পরাস্ত করতে হয়নি তার, নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনেন কিউই ওপেনার। মিড অফে ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল তিনি চেয়েছিলেন কনওয়ে। কিন্তু শাদাব খানের দারুণ থ্রোতে সমাপ্তি ঘটে তার ২০ বলে ২১ রানের ইনিংসের। ৩৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।

চলতি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হাঁকানো গ্লেন ফিলিপস আজ হতে পারেননি ভরসার প্রতীক। আট বলে ছয় রান করে মোহাম্মদ নাওয়াজের বলে ফেরেন তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে। এরপর মিচেল এসে ইনিংসের হাল ধরেন অধিনায়ক উইলিয়ামসনের সঙ্গে। তাদের ব্যাটেই শতরান পার করে কিউইরা। মিচেল শুরু থেকে আগ্রাসী ভূমিকা নিলেও অধিনায়কের ধীরগতির ব্যাটিংয়ে কাঙ্খিত রানরেটে পৌঁছতে পারছিল না কিউইরা।

১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আফ্রিদিকে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান উইলিয়ামসন। ৪২ বলে ৪৬ রান করে ফিরেন তিনি। তার বিদায়ে ভাঙে ৫০ বলে গড়া ৬৮ রানের জুটি। ১৯তম ওভারে ৩২ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন মিচেল। জিমি নিশামকে সঙ্গে নিয়ে এনে দেন ব্ল্যাক ক্যাপস ইনিংসের সুন্দর সমাপ্তি। শেষ তিন ওভারে স্কোরবোর্ডে ২৯ রান যোগ করেন এই দুই ব্যাটার।

অবশেষে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ১৫২ রানে থামে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। ৩৫ বলে ৫৩ রান করে অপরাজিত থাকেন মিচেল। অপর প্রান্তে ১২ বলে ১৬ রান করে টিকে থাকেন নিশামও। চার ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়ে কিউইদের মাঝারি সংগ্রহে আটকে রাখতে অবদান রাখেন আফ্রিদি। পাকিস্তানের পক্ষে অপর উইকেটটি শিকার করেন নাওয়াজ, দুই ওভারে ১২ রান দিয়ে পান এক উইকেট।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago