সেই স্টোকসই ইংল্যান্ডকে এনে দিলেন দ্বিতীয় শিরোপা

কী দারুণভাবেই না আক্ষেপ ঘোচালেন বেন স্টোকস। ২০১৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের কাছে শেষ ওভারে চার ছক্কা হজম করেছিলেন এ ইংলিশ অলরাউন্ডার। তাতে ইংল্যান্ডের হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ জিতে নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ছয় বছর পর সেই স্টোকসের অবদানেই শিরোপা জয় করল ইংল্যান্ড। দলের বিপদের মুহূর্তে তার ব্যাটে চড়েই পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা পেল দলটি।

রোববার এমসিজিতে ফাইনাল ম্যাচে পাকিস্তানকে পাঁচ উইকেটে হারিয়েছে জস বাটলারের দল। টস জিতে আগে বোলিং নেন ইংলিশ দলপতি। তার বোলারদের তোপে আট উইকেটে ১৩৭ রানের বেশি করতে পারেনি পাকিস্তান। জবাবে শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েও স্টোকসের অপরাজিত ৫২ রানে এক ওভার হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।

সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। অ্যালেক্স হেলসকে সরাসরি বোল্ড করে দারুণ সূচনা করেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। মাত্র এক রান করে ফিরে যান ছন্দে থাকা এ ওপেনার। এরপর ফিল সল্টকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালান বাটলার। তবে চতুর্থ ওভারে হারিস রউফকে উইকেট দিয়ে ফিরে যান সল্টও (১০)।

পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে বাটলার ফিরে গেলে বেশ চাপে পড়ে ইংল্যান্ড। হারিস রউফের বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ১৭ বলে ২৬ রান করে আউট হন ইংলিশ অধিনায়ক। তিন উইকেটের বিনিময়ে ৪৯ রান তুলে পাওয়ারপ্লে শেষ করে থ্রি লায়ন্সরা। এরপর দলের হাল ধরেন স্টোকস। ব্রুকের সঙ্গে গড়েন ৩৯ রানের জুটি।

দ্বাদশ ওভারের শেষ বলে নাসিম শাহর আউট স্যুইং ডেলিভারিতে পরাস্ত হন স্টোকস। একটুর জন্য ব্যাটের কানা ছোঁয়নি বল। ফলে রিভিউ নিলেও ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। তবে পরের ওভারেই উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হয় তারা। শাদাবের বলে লং অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৩ বলে ২০ রান করা ব্রুক। ক্যাচ নিতে যেয়ে চোট পান শাহিন, দুশ্চিন্তা ভর করে পাক শিবিরে।

তখন জয়ের জন্য ৪৫ বলে ৫৪ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। ১৪তম ওভারে মাত্র দুই রান দিয়ে সমীকরণ আরও জটিল করে তোলেন নাসিম। পরের ওভারে রউফ আট রান দিলেও ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে আসে পাকিস্তান। তবে ইফতিখার আহমেদের ১৬তম ওভারে ম্যাচ বের করে আনেন স্টোকস। সেই ওভারে তার একটি করে ছক্কা-চারে ১৩ রান পায় ইংলিশরা।

১৭তম ওভারে উৎসবে যোগ দেন মঈনও। মোহাম্মদ ওয়াসিমকে তিনটি বাউন্ডারি মেরে পাকিস্তানের জয়ের আশা কার্যত শেষ করে দেন তিনি। শেষ দুই ওভারে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র সাত রান। ১৯তম ওভারে মঈন ফিরে গিলেও দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছেই মাঠ ছাড়েন স্টোকস। সেই ওভারের চতুর্থ বলে চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি। শেষ বলে মিড উইকেটে এক রানের জন্য বল ঠেলে ইংল্যান্ডকে এনে দেন বিশ্বকাপ। ৪৯ বলে হার না মানা ৫২ রানের ইনিংস খেলেন স্টোকস।      

এর আগে ব্যাট হাতে প্রত্যাশামাফিক শুরু করতে পারেনি পাকিস্তান। বল হাতে প্রথম ওভার করতে আসেন বেন স্টোকস। প্রথম বলেই নো বল করে বসেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। তবে ফ্রি হিট কাজে লাগাতে পারেননি রিজওয়ান। অপর প্রান্তে বাবর যথারীতি শুরু করেন ঠান্ডা মেজাজে। পঞ্চম ওভারে ভাঙে পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি, কারানের বলে ইনসাইড এজ বোল্ড হয়ে ফিরে যান রিজওয়ান।

১৪ বলে ১৫ রান করে ফিরে যান পাকিস্তান উইকেটরক্ষক। এরপর হারিস এসে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি অধিনায়ককে। রশিদের বলে লং অনে স্টোকসের হাতে ধরা পড়ার আগে করেন ১২ বলে ৮ রান। ৪৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। তৃতীয় উইকেটে মাসুদের সঙ্গে ৩৯ রানের জুটি গড়েন বাবর। দুজন মিলে বাড়ান রানের গতি।

১২তম ওভারে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে প্রথম বলেই গুগলি করে পাক দলনেতাকে চমকে দেন ইংলিশ লেগ স্পিনার রশিদ। বল বুঝতে না পেরে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাবর। ২৮ বল থেকে ৩২ রান করে বিদায় নেন তিনি। সেই ওভারে আর কোন রান না দিয়ে উইকেট মেইডেন আদায় করে নেন রশিদ।

পরের ওভারে আবারও চেপে ধরে ইংল্যান্ড, স্টোকস এসে ফেরান ইফতিখারকে। শূন্য রানে ফিরে যান ৩২ বছর বয়সী মিডল অর্ডার ব্যাটার। তার বিদায়ের পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন শাদাব ও মাসুদ। তাদের কল্যাণে আবারও রানরেটে উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয় পাকিস্তান। তবে ১৭তম ওভারে ৩৮ রান করা মাসুদকে ফিরিয়ে ৩৬ রানের জুটি ভাঙেন কারান।

পরের ওভারে জর্ডানের বলে শাদাব ফিরে গেলে চাপে পরে পাকিস্তান। ১৪ বলে ২০ রান করে ফিরে যান এই বোলিং অলরাউন্ডার। ১৯তম ওভারে পাকিস্তানের শেষ স্বীকৃত ব্যাটার নাওয়াজকেও আউট করেন কারান। মাত্র পাঁচ রান করে ফিরে যান এই অলরাউন্ডার। শেষ ওভারেও উইকেট হারায় পাকিস্তান, মোহাম্মদ ওয়াসিম পরিণত হন জর্ডানের দ্বিতীয় শিকারে। শেষ দুই ওভারে মাত্র ১০ রান করে ১৩৭ রানে থামে বাবরের দল।

৪ ওভার বল করে মাত্র ১২ রান নিয়ে ৩ উইকেট নেন কারান। ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতেই। আরেক পেসার জর্ডান ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। লেগ স্পিনের ঝলকে আদিল ২২ রানে পান ২ উইকেট।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia returns home from London

Khaleda Zia, accompanied by her two daughters-in-law Zubaida Rahman and Syeda Sharmila Rahman, is now on way to her Gulshan residence

2h ago