ঢাকা শহর ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য কতটা উপযোগী

পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। ২১ মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যার ঢাকা প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতার। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, বায়ু দূষণ, যান চলাচলে স্থবিরতা ও গণপরিবহন ব্যবস্থায় নির্ভরযোগ্যতার অভাব। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বৈদ্যুতিক যানকে (ইভি) এসব সমস্যার একটি প্রচ্ছন্ন সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে, প্রথাগত গ্যাসোলিন-চালিত যানগুলোর তুলনায় একে অধিক পরিচ্ছন্ন ও অধিক কার্যকর বিকল্প হিসেবেও মনে করা হচ্ছে। 
ঢাকা শহর ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য কতটা উপযোগী
ছবি: রয়টার্স

পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। ২১ মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যার ঢাকা প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতার। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, বায়ু দূষণ, যান চলাচলে স্থবিরতা ও গণপরিবহন ব্যবস্থায় নির্ভরযোগ্যতার অভাব। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বৈদ্যুতিক যানকে (ইভি) এসব সমস্যার একটি প্রচ্ছন্ন সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে, প্রথাগত গ্যাসোলিন-চালিত যানগুলোর তুলনায় একে অধিক পরিচ্ছন্ন ও অধিক কার্যকর বিকল্প হিসেবেও মনে করা হচ্ছে। 

ঢাকায় বিদ্যুৎচালিত যানের প্রচলন এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, রাস্তায় থাকা ইলেকট্রিক গাড়ির সংখ্যা এখনো খুব কম। এখানে আছে খুব অল্প কয়েকটি ব্যক্তি মালিকানাধীন টেসলা, তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর অধীনে নিবন্ধিত হবার জন্য ইলেকট্রিক গাড়ি কোনো ক্যাটাগরি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। 

তারপরও অডি বাংলাদেশ তাদের ই-ট্রোন ইলেকট্রিক এসইউভি চালু করেছে এবং প্রথম বাংলাদেশি অটোমোবাইল ব্র‍্যান্ড হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক যান (বিইভি) উন্মোচন করেছে। একই সঙ্গে প্রথম বাজারজাতকারী হিসেবে ইভি ক্যাটাগরিতে বিআরটিএ'র আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন নিয়েছে। 

এটি ইভির বিষয়ে নিয়ন্ত্রকদের মনোভাবের ইতিবাচক পরিবর্তনের একটি ইঙ্গিত। কিন্তু ঢাকা কি এই গাড়ির জন্য প্রস্তুত? 

ইভির সবচেয়ে বড় সুবিধাগুলোর একটি হলো এর কম নিঃসরণ। ইভিতে থাকা বৈদ্যুতিক মোটরগুলো কোনো কার্বন নিঃসরণ ঘটায় না (ধোঁয়া ছাড়ে না), যা ঢাকার মতো বায়ুদূষণে পর্যুদস্ত একটি শহরের জন্য আকর্ষণীয় অপশন। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিবছর ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ ১২ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ। যার ফলে এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ইভির দিকে ঝুঁকলে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমবে এবং এর অধিবাসীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে। 

ইভির আরেকটি সুবিধা হলো এর দক্ষতা। বৈদ্যুতিক মোটরগুলো ইন্টারনাল কামবাস্টশানে চলা ইঞ্জিনগুলোর চেয়ে বেশি কার্যকর, যার অর্থ একই পরিমাণ শক্তি নিয়ে ইভি অনেক বেশি দূর যেতে পারে। ফলে গাড়িটি ঢাকার জটবাঁধা রাস্তার জন্য উপযোগী, যেখানে যানবাহনগুলো বেশিরভাগ সময়ই খুব ধীর গতিতে চলে এবং গ্যাসোলিন চালিত যানবাহনগুলো এ সময় প্রচুর জ্বালানি খরচ করে।

তাছাড়া, ইভি একরাতেই সম্পূর্ণ চার্জ হয়ে যাবে। যার অর্থ সকালে কোনো গ্যাস স্টেশনে না থেমেই তারা গন্তব্যে যাত্রা শুরু করতে পারবে।

ছবি: রয়টার্স

তবে ঢাকাবাসীর জন্য নির্ভরযোগ্য যান হিসেবে পরিণত হতে হলে ইভিকে বেশকিছু বাধা পেরোতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো চার্জিং সুবিধাসম্পন্ন অবকাঠামোর অভাব। 

বর্তমানে ঢাকা শহরে একেবারেই কোনো পাবলিক চার্জিং স্টেশন নেই, যা ইভি মালিকদের নিজ নিজ গাড়ি চার্জ করানোর ব্যাপারটিকে কঠিন করে তুলেছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে সারাদেশে মাত্র ১৪টি ইভি চার্জিং স্টেশন রয়েছে। যেগুলোর সম্মিলিত ধারণক্ষমতা ২৭৮ কিলোওয়াট। 

বাণিজ্যিকভাবে ডিসি (ডিরেক্ট কারেন্ট) ব্যবহারে দ্রুতগতির চার্জিং বাংলাদেশে এখনো সহজলভ্য নয়। আবাসিক চার্জিং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে  বর্তমানে চালু থাকা খুব অল্পসংখ্যক গাড়িতে এভাবে চার্জ দেওয়া হচ্ছে। 

যদিও ইভি চার্জিংয়ের জন্য বাসাবাড়িতে উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক লাইনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব। তবে এখনো লাইন চালুর পর উচ্চমূল্য গুণতে হচ্ছে ব্যবহারকারীদেরই। তাছাড়া ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল করা হয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের হারে, যা আবাসিক ভবনের হারের চেয়ে বেশ উচ্চ। 

আরেকটি প্রতিবন্ধতা হলো, ইভির উচ্চমূল্য। বর্তমানে ইভি প্রথাগত জ্বালানি-চালিত যানগুলোর চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল, যা ঢাকার বহু মানুষের কাছেই তাদের অধরা করে রেখেছে। এটা অংশত ব্যাটারির উচ্চমূল্যের কারণে হয়েছে। যা ইভির ক্ষেত্রে ব্যয়ের একটা বড় অংশ। তবুও ব্যাটারি প্রযুক্তির যেহেতু উন্নতি হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে, সেক্ষেত্রে ইভির আর্থিক ব্যয় কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

এসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ঢাকা শহরে এমন বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে যা ইভির ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রচারণা হিসেবে কাজ করবে। যেমন- সম্প্রতিকালে বাংলাদেশ সরকার নতুন একটি অটোমোবাইল নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যার লক্ষ্য পরিবেশবান্ধব যানকে পরিবহন ব্যবস্থায় বেশি করে অন্তুর্ভুক্ত করা। ২০৩০ সাল নাগাদ অন্তত ১৫ শতাংশ নিবন্ধিত ইলেকট্রিক গাড়ির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।

অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০২০-এর খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, জ্বালানিসাশ্রয়ী যানবাহন (ইইভি) প্রস্তুতের পেছনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ট্যাক্স হলিডের সুপারিশ করা হয়েছে।

দেশের বাজারজাতকারীদের মধ্যে ওয়ালটন সম্প্রতি তাদের ই-বাইক লাইনআপ উন্মোচন করেছে এবং সম্ভবত ইলেকট্রিক সিটি বাস আনার জন্য কাজ করছে। 

ওয়ালটন ছাড়াও দেশের আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্থানীয়ভাবে তৈরি ২ চাকার ইভিকে বাংলাদেশি বাজারে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

ভারতীয় অটোমেকার ওমেগা সেইকি সম্প্রতি বাংলাদেশে ইভি বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে ১ বিলিয়ন রুপি বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন। স্থানীয় অটো প্রস্তুতকারক বিডিঅটো দেশের ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য ৩ চাকাবিশিষ্ট ইভি উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে। 

অনুবাদ করেছেন মাহমুদ নেওয়াজ জয়

Comments