আইফোন ১৪ সিরিজের ‘গেম চেঞ্জিং’ ফিচার হতে পারে স্যাটেলাইট সংযোগ

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেই অ্যাপল মুক্তি দিতে চলেছে বছরের সবচেয়ে আলোচিত মোবাইল, আইফোন-১৪ সিরিজ।  চলতি মাসে মুক্তি পেতে যাওয়া এই মোবাইলের বাজারমূল্য আগের আইফোনগুলোকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেই অ্যাপল মুক্তি দিতে চলেছে বছরের সবচেয়ে আলোচিত মোবাইল, আইফোন-১৪ সিরিজ।  চলতি মাসে মুক্তি পেতে যাওয়া এই মোবাইলের বাজারমূল্য আগের আইফোনগুলোকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

দুর্মূল্যের এই বাজারে এমন এক ব্যয়বহুল ফোন জনপ্রিয় করতে হলে প্রতিপক্ষ তো বটেই এর পাশাপাশি অতীতের সব আইফোনের থেকে উন্নত সুবিধা নিয়ে আসতে হবে অ্যাপলকে। 
অ্যাপল তার সমস্ত আপডেট গোপন রাখতে কয়েক স্তরের সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। তাই আইফোন-১৪ সিরিজের ক্ষেত্রেও মুক্তির আগে নিশ্চিতভাবে কোনো তথ্য বলা যায় না। তবু, অ্যাপল ও আইফোন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে অ্যাপলের সম্ভাব্য এই সুবিধা নিয়েই আজকের আলোচনা। 

কী থাকছে অ্যাপল ১৪ সিরিজে

অ্যাপল ও আইফোন, প্রযুক্তির বাজারে সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং একইসঙ্গে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ব্র্যান্ড। তবে কেবল সুনাম দিয়ে মুদ্রাস্ফীতির এই বাজারে লক্ষাধিক টাকার মোবাইলকে জনপ্রিয় করা সম্ভব না বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সতর্কতা, খোদ মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক সতর্কবার্তার মধ্যেই এমন চড়া মূল্যের একটা বিলাসবহুল পণ্যকে জনপ্রিয় করতে হলে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। 

দামের ক্ষেত্রে অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভাঙতে হলে মান, সেবা, ও সুবিধার ক্ষেত্রেও ভাঙতে হবে রেকর্ড। আর স্যাটেলাইট সক্ষম একটি স্মার্টফোন হতে পারে আইফোন-১৪ সিরিজের জন্যে সেই 'গেম চেঞ্জিং' ফিচার। আধুনিক ও চমকপ্রদ প্রযুক্তি দিয়েই বাজার জয় করতে পারে আইফোন-১৪ সিরিজ।

এর আগে দুবাই ভিত্তিক স্যাটেলাইট যোগাযোগ কোম্পানি 'থুরায়া এক্স৫ টাচ' নামে একটি স্যাটেলাইট স্মার্টফোন আনলেও তা বৃহদাংশের কাছেই অজানা। আইফোনের ক্ষেত্রে এমন প্রযুক্তির আগমন হতে পারে এক মাইলফলক।

তেমন কোনো ঘোষণা ও আলোচনা ছাড়াই গ্রাহকরা অতি আধুনিক ও চমকপ্রদ এই প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে আইফোন-১৪ সিরিজের হাত ধরে।

স্যাটেলাইট সংযুক্ত স্মার্টফোন কী

সহজ ভাষায় বলতে গেলে স্যাটেলাইট সংযুক্ত স্মার্টফোন এমন এক প্রযুক্তিতে তৈরি যাতে করে ফোন সবসময়, সব জায়গায় নেটওয়ার্ক সুবিধার আওতায় থাকবে। 

ধরুন, কেউ ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে ফেঁসে গেছে, কিংবা দাবানল বা প্রাকৃতিক কোনো ঝড়ে আটকা পড়েছে বা এমন কোথাও চলে গেছে যেখানে গতানুগতিক থ্রিজি-ফোরজি-ফাইভজি, এলটিইসহ সমস্ত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা অচল। বিপর্যস্ত অবকাঠামো, বৈদ্যুতিক সুবিধার অভাবে ল্যান্ডলাইনসহ মোবাইল টাওয়ারগুলোও অকেজো হয়ে গেলে সম্পূর্ণ যোগাযোগহীন হয়ে পড়তে হবে। 

এমন অবস্থায় একমাত্র সচল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা হিসেবে মাথার ওপরে কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান থাকে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট। কিন্তু, একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এখনও সেই নেটওয়ার্ক সরাসরি ব্যবহারের সুযোগ হয়নি। স্যাটেলাইট ফোন আপনাকে সেই সুবিধা দেবে। বর্তমানে সামরিক বাহিনী কিংবা কালোবাজারে এই বিশেষ ধরনের ফোন পাওয়া যায়।

আইফোন-১৪ সিরিজের ফোনে স্যাটেলাইট সংযোগের সম্ভাবনা কতটুকু

আইফোন-১৪ সিরিজের ফোনের জন্যে অ্যাপল ইতোমধ্যেই হার্ডওয়ার পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে বলে দাবি করেছেন বিখ্যাত অ্যাপল বিশেষজ্ঞ মিং-চি কুও। তার মতে, এমন ঝড়ের গতিতে এই প্রযুক্তির বাস্তবায়ন করতে পারলে সেটা এক দুর্দান্ত ইতিহাসের জন্ম দেবে। 

স্যাটেলাইট বাজারে বেশ প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান স্পেসেক্স, এই প্রতিষ্ঠানের স্টারলিংক প্রজেক্ট ও জার্মান মোবাইল কোম্পানি টি-মোবাইলের মতো জনপ্রিয় দুই কোম্পানির যৌথ উদ্যোগ নিলেও এখনো এমন মোবাইল বাজারে আনতে পারেনি। হার্ডওয়্যার এর অভাবে হয়তো ২০২৩ সাল কিংবা তারও পরে গ্রাহকদের হাতে পৌঁছাবে এই ফোন।

এদিকে, আইফোন-১৩ সিরিজ থেকে অ্যাপল এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে অ্যাপলের জন্যেও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হবে হার্ডওয়ার। যদি অ্যাপল সফলভাবে হার্ডওয়ারের যোগান ঘটাতে পারে, তাও সব ফোনে সুবিধা মেলার সম্ভাবনা খুব কম। 

কেবল আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স ও ১৪ ম্যাক্সে এই সুবিধা মেলার সম্ভাবনা আছে। বিশেষজ্ঞরা এর পেছনে সাইজের কথা বলেছেন, এই দুটো ফোন যেহেতু ৬.৭ ইঞ্চির হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তাই এই দুটোতেই এই সুবিধা মেলার সুযোগ রয়েছে। 

এছাড়া, স্যাটেলাইট বাজারে অ্যাপলের তেমন অবকাঠামো নেই। তাই  বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি স্যাটেলাইট অংশীদার খুঁজছে বলে জানিয়েছেন অ্যাপল অ্যানালিস্ট মিং-চি কু ও ব্লুমবার্গের টেক রিপোর্টার মার্ক গারম্যান। মিং অবশ্য সম্ভাব্য অংশীদার হিসেবে মার্কিন স্যাটেলাইট যোগাযোগ কোম্পানি গ্লোবস্টারের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

করোনা মহামারি সংকট থেকে মুক্তির আগেই রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে বৈশ্বিক অর্থনীতির যখন নাকাল অবস্থা, তখন হাজার ডলারের আইফোন বিক্রি করা খুব কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু, এমন প্রযুক্তি আনতে পারলে শুধু জনপ্রিয়তা বা বিক্রিই না, প্রযুক্তির বাজারে ঝড় তুলে স্মার্টফোনের দুনিয়ায় ইতিহাস হয়ে থাকবে আইফোন-১৪ সিরিজ। 

.

তথ্যসূত্র:  সিনেট, দা ভার্জ, ব্লুমবার্গ, মিডিয়াম, সিএনবিসি

Comments