প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পর নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে গুগল

গুগলের আবিস্কার প্রযুক্তি বিশ্ব, বিশেষ করে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে। প্রায় ১৭ বছর আগে এই শব্দটি আনুষ্ঠানিকভাবে ইংরেজি ভাষার ডিকশনারিতে জায়গা করে নেয়।
চ্যাটজিপিটি-মাইক্রোসফট বিংয়ের উত্থান, গুগল সার্চে ভাটা
ছবি: সংগৃহীত

এ মাসে গুগলের ২৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ১৯৯৮ সালে সের্গেই ব্রিন ও ল্যারি পেজের হাত ধরে গুগলের যাত্রা শুরু হয়। তখনকার তুলনায় প্রযুক্তি বিশ্ব এখন নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে আর এই খাতটি এখন এমন এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বদলের মুখে দাঁড়িয়ে আছে, যা গত কয়েক দশকে দেখা যায়নি।

প্রতিষ্ঠান সময় গুগল ছিল একমাত্র সার্চ ইঞ্জিন। গুগলের জন্ম হয়েছিল সুজান ওজকিকির বাসার গ্যারেজে। ওজকিকি পরবর্তীতে গুগলের মালিকানাধীন ইউটিউবের প্রধান নিযুক্ত হয়েছিলেন। গুগলের আবিস্কার প্রযুক্তি বিশ্ব, বিশেষ করে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে। প্রায় ১৭ বছর আগে এই শব্দটি আনুষ্ঠানিকভাবে ইংরেজি ভাষার ডিকশনারিতে জায়গা করে নেয়।

সাফল্য ও ব্যর্থতা

ইমেইল, স্মার্টফোন, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার, চালকবিহীন গাড়ি, ইউটিউব- যাত্রাপথে গুগল শত শত পণ্য ও সেবা নিয়ে কাজ করেছে এবং এখনো করছে। তবে সবকিছুতে তারা সাফল্য পায়নি।

গুগলের ব্যর্থ প্রকল্পগুলো তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয় 'কিলড বাই গুগল' ওয়েবসাইটে। এই ওয়েবসাইটে গুগলের এমন ২৮৮টি ব্যর্থ প্রকল্পের তালিকা রয়েছে। এসব প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে গেমিং প্ল্যাটফরম স্ট্যাডিয়া, স্বল্পমূল্যের ভিআর হেডসেট গুগল কার্ডবোর্ডের মতো পণ্য।

দ্রুত বিকাশমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) জগতে গুগল তার শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারবে কি না, এটিই বর্তমানে প্রযুক্তি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

গুগলের অভ্যন্তরে ও বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, গুগল ইতোমধ্যে পিছিয়ে পড়েছে। ইন্টারনেটে ফাঁস হওয়া গুগলের এক ইঞ্জিনিয়ারের একটি মেমোতে দেখা গেছে, ওই কর্মী উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, এআই দৌড়ে জয়ী হওয়ার মতো অবস্থায় নেই গুগল।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবটের আবির্ভাব ও এগুলোর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হওয়ার পর গুগলের ওই ইঞ্জিনিয়ারের কথা যেন আরও সত্যি বলে মনে হচ্ছে।

প্রচুর মানুষ সচেতনভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কথোপকথনের প্রথম অভিজ্ঞতা লাভ করেন চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে। এই চ্যাটবটটি বহু মানুষকে মুগ্ধ ও বিষ্মিত করে। ওপেনএআই'র তৈরি এই চ্যাটবটটি ২০২২ সালের নভেম্বরে উন্মুক্ত হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তৈরি করে এবং এটির হাত ধরেই প্রযুক্তিবিশ্বে নতুন এক যুগের সূচনা হয়।

ওপেনএআইতে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে মাইক্রোসফট। বর্তমানে মাইক্রোসফটের বিং সার্চ ইঞ্জিন ও অফিস ৩৬৫ সফটওয়্যারেও চ্যাটজিপিটি যুক্ত করা হয়েছে। ফলে এই অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জনপ্রিয়তা রাতারাতি বেড়ে গেছে।

চালু হওয়ার পর থেকেই চ্যাটজিপিটিকে অনেকেই 'গুগল কিলার' নামে অভিহিত করছেন, কারণ কোনো জিজ্ঞাসার জবাব গুগল যেভাবে দেয়, চ্যাটজিপিটি তাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। কোনো সার্চ রেজাল্টে সরাসরি উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে গুগল সাধারণত অনেকগুলো ওয়েব পেজ দেখায়। কিন্তু চ্যাটজিপিটি সরাসরি উত্তর দেয়। এই পরিবর্তনের ফলে মানুষের সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের অভিজ্ঞতায় রাতারাতি পরিবর্তন আসে।

চ্যাটজিপিটির অভাবনীয় উত্থানের কারণে চাপে পড়ে যায় গুগল। এরপর তড়িঘড়ি করে তারাও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি চ্যাটবট চালু করে। তবে বার্ড নামের এই চ্যাটবটটি চ্যাটজিপিটির জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি।

যদিও বার্ডকে আপাতত পরীক্ষামূলক হিসেবে বর্ণনা করেছেন গুগলের কর্মকর্তারা। চ্যাটবটটি নিয়ে গুগল সতর্ক রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে।

চ্যাটজিপিটি চালু হওয়ার পর এই চ্যাটবটটির বিভিন্ন উত্তরের কারণে ওপেনএআইকে যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিলে, সম্ভব সেটি এড়াতেই গুগলের এই সতর্কতা।

এআই নিয়ে আরও সংকল্পবদ্ধ গুগল

এ ধরণের চ্যাটবটের মূল ভিত্তি হচ্ছে লার্জ ল্যাংগুয়েজ মডেল বা এলএলএম। গুগলের এলএলএম প্রকল্পের নাম হচ্ছে 'ল্যামডা'।

গুগলের ল্যামডা প্রকল্পের এক কর্মী এক পর্যায়ে বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটি সংবেদনশীল। গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তার দীর্ঘ কথোপকথনও ফাঁস করে দেন ওই কর্মী, যেখানে দেখা গেছে ল্যামডা আবেগ প্রকাশ করছে।

যদিও গুগল এই দাবি অস্বীকার করে ওই কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে।

কিন্তু এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয় এবং গুগলও এসব ব্যাপারের সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা এড়িয়ে চলার নীতি গ্রহণ করে।

তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে সরে আসেনি গুগল। বরং অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় কোম্পানিটি এখন এআই নিয়ে আরও বেশি সংকল্পবদ্ধ। গত মে মাসে অনুষ্ঠিত গুগলের ডেভেলপার সম্মেলনে ২৫ টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক সেবা উন্মুক্ত করে গুগল। যুক্তরাজ্যের শীর্ষ এআই প্রতিষ্ঠান ডিপমাইন্ডও কিনে নিয়েছে শীর্ষ এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। ডিপমাইন্ডের 'আলফাফোল্ড' প্রকল্প নতুন ঔষধ আবিস্কার নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণা করছে।

গুগলের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি

তবে এআই যুদ্ধে গুগলকে এখনই বাতিলের তালিকায় রাখতে চান না ক্রিয়েটিভ স্ট্র্যাটিজিস্ট এর বিশ্লেষক ক্যারোলিনা মিলানেসি।

তিনি বলেন, 'গুগল এআই জাহাজে উঠতে পারেনি, এই মতবাদে আমি বিশ্বাস করি না। কনজ্যুমার এবং এন্টারপ্রাইজ, উভয় ক্ষেত্রেই গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুযোগ আছে।'

ব্রিটিশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হারগ্রিভস ল্যানসডাউন এর কর্মকর্তা সুসানা স্ট্রিটারও মিলানেসির সঙ্গে একমত।

তিনি বলেন, 'অ্যালফাবেট তার গুগল ক্লাউড ব্যবসার মাধ্যমে এআই বিপ্লবের কেন্দ্র হওয়ার চেষ্টা করছে। যদিও এখনো বড় তিনটি ক্লাউড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস এবং মাইক্রোসফট অ্যাজুর-এর তুলনায় পিছিয়ে আছে গুগল ক্লাউড, তারপরও আমি মনে করি তাদের এখনো অনেক সম্ভাবনা আছে।'

সূত্র: বিবিসি

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago