নব্বইয়ের দশকের সুপারকম্পিউটার এখন আপনার পকেটেই

আইফোন ১৫ প্রো ও ক্রে-২ সুপারকম্পিউটার

যে স্মার্টফোনটি প্রায় সারাক্ষণই আপনার সঙ্গে থাকে সেটা কতটা শক্তিশালী তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন?

আজকের দিনের স্মার্টফোনগুলো মাত্র তিন দশক আগের বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত সুপারকম্পিউটারের চেয়েও বহু গুণ বেশি শক্তিশালী। অথচ, সেই যুগের ঘরজুড়ে থাকা সুপারকম্পিউটার চালাতে খরচ হতো লাখ লাখ ডলার।

নব্বইয়ের দশকের দুই দানব: ক্রে-২ ও আসকি রেড

১৯৮৫ সালে 'ক্রে-২' সুপারকম্পিউটারকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির কম্পিউটার হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এটি সেকেন্ডে ১৯০ কোটি 'ফ্লোটিং-পয়েন্ট অপারেশনস' (ফ্লপস) হিসাব করতে পারত, যা ছিল সেই সময়ের বিশ্বরেকর্ড। ছোট্ট একটি তুলনা করলে সেই সময়ে এর শক্তিসম্পর্কে ধারাণা পাওয়া যায়।

১৬ বছর আগে অ্যাপোলো ১১-এর গাইডেন্স কম্পিউটারের ক্ষমতা ছিল মাত্র ১৪,২৪৫ ফ্লপস, র‍্যাম ছিল মাত্র চার কিলোবাইট। সেই তুলনায় 'ক্রে-২' সুপারকম্পিউটার ছিল এক বিশাল উল্লম্ফন।

'ক্রে-২' তৈরি করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি বিভাগের জন্য। পারমাণবিক অস্ত্র এবং সমুদ্রবিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণার জন্য এটি তৈরি করা হয়। সিলিন্ডার আকৃতির বিশাল এই কম্পিউটার ঠান্ডা করতে লিকুইড কুলিং স্টেম ব্যবহার করা হতো। আজকের যন্ত্রের তুলনায় এটি চালাতে বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ খরচ হতো।

এরপর ১৯৯৭ সালে তৈরি করা হয় 'আসকি রেড' নামের আরেকটি সুপারকম্পিউটার। এই কম্পিউটার সর্বকালের রেকর্ড ভেঙ্গে এক 'টেরাফ্লপ' গতির বাধা অতিক্রম করে। পরবর্তীতে একে আপগ্রেড করে দুই টেরাফ্লপের চেয়েও বেশি গতি পাওয়া যায়।

১৯৯২ সালে পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধ হওয়ার পর মার্কিন সরকার 'অ্যাক্সিলারেটেড স্ট্র্যাটেজিক কম্পিউটিং ইনিশিয়েটিভ' (ASCI) নামে একটি প্রকল্প শুরু করে, যার অধীনে এই সুপারকম্পিউটারটি তৈরি করা হয়। পারমাণবিক বিস্ফোরণ না ঘটিয়েই নির্ভরযোগ্যতা মডেলিং ও সিমুলেট করাই ছিল এর উদ্দেশ্য।

দেড় হাজার বর্গফুটেরও বেশি জায়গা লাগত 'আসকি রেড' এর জন্য। এটি চালাতে প্রয়োজন হতো প্রায় ৮৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ। সেই সময় একে দেখা হতো কম্পিউটার জগতের এক যুগান্তকারী অর্জন হিসেবে।

হাতের মুঠোয় সুপারকম্পিউটার

একবারে ২৫ বছর ফাস্ট ফরোয়ার্ড করে আজকের দিনে আসা যাক। এই সময়ে একটি ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনের প্রসেসর প্রায় ২ টেরাফ্লপ গতিতে কাজ করতে পারে যা, 'আসকি রেড'-এর সমান বা তার চেয়েও বেশি। শুধু পার্থক্য হলো একটি ঘরের সমান বড় সেই সুপারকম্পিউটার চালাতে দরকার হতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল কুলিং সিস্টেম। সেখানে একটি স্মার্টফোন পাঁচ ওয়াটেরও কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।

গেল শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধ্বে কম্পিউটারের চিপের প্রযুক্তির অগ্রগতি এত দ্রুত গতিতে চলতে থাকে যে এ নিয়ে ইন্টেলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা গর্ডন একটি তত্ত্ব দেন। তার নামানুসারে তত্ত্বটির নাম হয় 'মুরের সূত্র'। ১৯৬৫ সালে তিনি বলেন, একটি কম্পিউটার প্রসেসরে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা প্রতি দুই বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়।

তার এই তত্ত্ব এই সময়েও এসেও কার্যকর রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Lottery to decide SP, OC postings during election: Home Adviser

Move aims to prevent candidates from getting preferred officers in their constituencies

41m ago