রাউটার কেনার আগে যা জানা প্রয়োজন

একবিংশ শতাব্দীতে এসে ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। কর্মক্ষেত্র হোক বা বিনোদন, জীবনের প্রতিটি পদে মানুষ এখন ভার্চুয়াল জগতের ওপর নির্ভরশীল। আর দৈনন্দিন জীবনে ঘরে বসেই অবাধে সেই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে ওয়াইফাই রাউটার।
ছবি: সংগৃহীত

একবিংশ শতাব্দীতে এসে ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। কর্মক্ষেত্র হোক বা বিনোদন, জীবনের প্রতিটি পদে মানুষ এখন ভার্চুয়াল জগতের ওপর নির্ভরশীল। আর দৈনন্দিন জীবনে ঘরে বসেই অবাধে সেই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে ওয়াইফাই রাউটার।

প্রতিটি বাসা এবং অফিসে রাউটার এখন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। করোনা পরবর্তী সময়ে এর গুরুত্ব যেন আরও বহুগুণে বেড়ে গেছে। ফলশ্রুতিতে বেড়েছে বেচাকেনার হার। ভালো ইন্টারনেট পরিষেবার জন্য একটি ভালো ওয়াইফাই রাউটারের কোনো বিকল্প নেই। তাই এক নজরে দেখে নেওয়া যাক একটি ভালো এবং গ্রাহক উপযোগী রাউটার কেনার জন্য কী কী বিষয় মাথায় রাখা দরকার।

রাউটারের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড

রাউটারের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড হলো নেটওয়ার্ক ট্রাফিকের জন্য রাউটার যে পথ ব্যবহার করে সেটি।

সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটারগুলোতে ২ দশমিক ৪ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করতে দেখা যায়। এটিতে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক বেশি হলেও এটি বেশ দূরের ডিভাইসেও ওয়াইফাই পৌঁছে দিতে সক্ষম। তবে, তাতে ইন্টারনেটের গতি অনেকটাই কমে আসে।

অন্যদিকে ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার ২ দশমিক ৪ গিগাহার্টজের পাশাপাশি ৫ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সিও ব্যবহার করে থাকে। দ্রুতগতির ইন্টারনেটের জন্য বিশেষজ্ঞরা ৫ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ট্রাই ব্যান্ড বলে আরেক ধরনের রাউটারও এখন বাজারে পাওয়া যায়। যেটিতে একটি বাড়তি ৫ গিগাহার্টজ বা ৬ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহারের সুবিধা থাকে। বহুতল ভবনে ব্যবহারের জন্য প্রযুক্তিবিদদের বাজি এই রাউটারের উপর।

ডিভাইসের সঙ্গে দূরত্ব এবং ইন্টারনেটের গতির কথা বিবেচনা করে, ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড দেখে রাউটার নির্বাচন করা উচিত।

ওয়াইফাই স্ট্যান্ডার্ড

ওয়াইফাই একটি বৈশ্বিক স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে যাতে ডিভাইসগুলো কোনো সমস্যা ছাড়াই সংযোগ স্থাপন করতে পারে। এগুলোকে অনেকে ওয়াইফাই স্ট্যান্ডার্ড, প্রোটোকল এবং ভার্সনও বলে থাকে।

এই স্ট্যান্ডার্ডের সর্বশেষ সংস্করণ হচ্ছে ৮০২.১১ এএক্স। এই প্রোটোকলের রাউটারগুলো তুলনামূলক দ্রুতগতির হয়।

ধীরতম থেকে দ্রুততম ক্রম অনুসারে-

৮০২.১১বি অথবা ওয়াইফাই-১

৮০২.১১এ অথবা ওয়াইফাই-২

৮০২.১১জি অথবা ওয়াইফাই-৩

৮০২.১১এন অথবা ওয়াইফাই-৪

৮০২.১১এসি অথবা ওয়াইফাই-৫

৮০২.১১এএক্স অথবা ওয়াইফাই-৬

পুরানো প্রোটোকল ব্যবহারকারী ডিভাইস, যেমন ৮০২.১১বি, রাউটারের সংযোগ পাওয়া মাত্র পুরো নেটওয়ার্ককে ধীর করে দেয়। রাউটার কেনার সময় তাই এই বিষয়টি যাচাই করে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যান্টেনার পরিসর

ওয়াইফাই রাউটারকে ঘরের ঠিক মাঝখানে রাখলে সব জায়গায় নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। তবুও প্রায়ই দেখা যায় নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ডিভাইস পুরো নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না। মূলত নেটওয়ার্ক পুরো ঘরে সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে অধিক পরিসরের অ্যান্টেনা বিশিষ্ট রাউটারের কোনো বিকল্প নেই।

একটি রাউটারের পরিসরকে সরাসরি পরিমাপের কোনো সুযোগ নেই। তাই এক্ষেত্রে বুদ্ধিমানের কাজ হবে রাউটারটির অ্যান্টেনার ডিবিআই রেটিং দেখে তবে কেনা। ছোট বাসার জন্য ২-৪ ডিবিআইয়ের রাউটারই যথেষ্ট। তবে তুলনামূলক বড় বাসা কিংবা অফিসের জন্য, যেখানে প্রতিবন্ধকতা (দেয়াল, ছাদ, আসবাবপত্র) বেশি, অধিক ডিবিআই রেটিং সম্পন্ন রাউটার নির্বাচন করা উচিত।

সাধারণত রাউটারের স্পেসিফিকেশনে এ সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া থাকে।

এমইউ-এমআইএমও প্রযুক্তি

আপনার ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক যত বেশি ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত হয়, এর গতি তত কমতে থাকে। এর কারণ সিঙ্গেল ইউজার রাউটার (এসইউ-এমআইএমও) একই সময়ে সাধারণত একটি ডিভাইসের সঙ্গেই সংযোগ স্থাপন করতে পারে। অন্যদিকে, এমইউ-এমআইএমও রাউটার একটি ওয়াইফাই নেটওয়ার্ককে একই সময়ে একাধিক ডিভাইসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করাতে সক্ষম। আর এতে ইন্টারনেটের গতিতেও কোনো হেরফের ঘটে না।

তাই রাউটার নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমইউ-এমআইএমও প্রযুক্তি আছে কিনা, সেটি দেখে নেওয়ার পরামর্শ প্রযুক্তিবিদদের। উল্লেখ্য যে, এই প্রযুক্তি কেবল নতুন ঘরানার রাউটারেই পাওয়া সম্ভব। যেমন- ৮০২.১১এসি অথবা ওয়াইফাই-৫ এবং ৮০২.১১এএক্স অথবা ওয়াইফাই-৬।

পোর্ট

উন্নত কাজ কিংবা অন্য কোনো ডিভাইস সংযোগের জন্য রাউটারে যথাযথ এবং যথেষ্ট পোর্ট আছে কিনা, সেটি যাচাই করে নেওয়া অত্যন্ত দরকারি।

যথেষ্ট সংখ্যক ইথারনেট পোর্ট থাকা একটি উৎকৃষ্ট রাউটারের পরিচায়ক। সেইসঙ্গে ইউএসবি পোর্টের জেনারেশনও দেখে নেওয়া উচিত।

নিরাপত্তা

তারবিহীন নেটওয়ার্কে নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা এর মাধ্যমে খুব সহজেই অন্যের ডিভাইস হ্যাক করা, অন্যের অনলাইন কার্যকলাপে নজরদারি করা, ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। তাই রাউটার কেনার সময় লক্ষ্য রাখা উচিত এটি যাতে ডব্লিইপিএ৩ সাপোর্ট করে। সেইসঙ্গে এতে যাতে বিল্ট-ইন ফারারওয়াল কিংবা অ্যান্টিভাইরাস থাকে।

সূত্র: ওয়্যার্ড, গ্যাজেটস নাও, ডিজিনাইটেড, উইন্ডোজ সেন্ট্রাল,

Comments