নাথিং ফোন ওয়ান কেনার আগে জেনে নিন
বর্তমানে মোবাইল ফোনের বাজারে নতুন সংযোজন নাথিং ফোন ওয়ান। গতানুগতিক ডিজাইনের চেয়ে ভিন্ন ধরনের এ ফোনটি জুলাইয়ের পর থেকে আলোচনায় আছে।
নাথিং ফোন কেনার আগে এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো জেনে নেওয়া যাক।
বিশ্ববাজারে যখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনের ছড়াছড়ি, তখন আলোচনায় এসেছে নাথিং নামক প্রতিষ্ঠানের। তবে, নাথিং ফোন ওয়ানই প্রতিষ্ঠানটির প্রথম পণ্য নয়। এর আগে সেমি ট্রান্সপারেন্ট ইয়ারবাডস নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছিল ওয়ান প্লাসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা কার্ল পের নাথিং।
ইয়ারবাডসের ডিজাইনের আদলেই এবার নাথিং তৈরি করেছে তাদের প্রথম মোবাইল ফোন। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, নাথিং ফোনের বাহ্যিক ডিজাইনের সঙ্গে আইফোন ১২ মডেলের তেমন পার্থক্য চোখে পড়ে না। তবে এখানে নাথিং ফোনের ব্যাক প্যানেলে ট্রান্সপারেন্ট এলইডি লাইটিংয়ের ডিজাইন দিয়েই আকর্ষণ তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাজারে আসার আগে ফোনের এই দিকটিই সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
ফোনটির বক্সে অন্যান্য ফোনের মতো চার্জিং ক্যাবল, সিম ট্রে ইজেক্টর, ইউজার ম্যানুয়ালের মতো আনুষঙ্গিক জিনিস দেওয়া হলেও নাথিং দেয়নি কোনো চার্জার। যা ক্রেতাদের একটু হতাশ করেছে বটে।
বিল্ট কোয়ালিটি ও ডিজাইন
সুবিধা: নাথিং ফোনের ডিজাইন আইফোনের মতো হওয়ায় এটি বেশ আকর্ষণীয় লাগে। সাদা ও কালো রঙের দুটি ফোনই বেশ নজর কেড়েছে। ব্যাক প্যানেলের ট্রান্সপারেন্ট গ্লাস ও গ্লিফ ইন্টারফেসের লাইটিংয়ের ব্যবহার ফোনটিকে দিয়েছে আলাদা মাত্রা।
হাতে নিলে খুব সহজে নিয়ন্ত্রণও করা যায়, অর্থাৎ হ্যান্ডফিলের দিকটিও সেরা ফোনগুলোর মতোই। এ ছাড়া ১৫ ওয়াটের ওয়্যারলেস চার্জিং ও ৫ ওয়াটের রিভার্স ওয়্যারলেস চার্জিং সুবিধা যোগ করেছে নাথিং।
অসুবিধা: ফোনের ব্যাক প্যানেলে থাকা লাইটগুলো যেহেতু নোটিফিকেশন আসার সিগন্যাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাই ফোনটির গ্লাস নিচের দিকে রাখার অভ্যাস থাকাটা জরুরি। তবে এজন্য ফোনের প্রটেকশনের জন্য ব্যবহৃত গ্লাসে স্ক্র্যাচ পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
ফোনের ডিজাইনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, স্ক্রিনের ওপরে ও নিচের দিকের ভ্যাসেল চিকন করার চেষ্টা করেছে নাথিং। কিন্তু চারদিকের ভ্যাসেল সমান করতে গিয়ে অন্যান্য ফোনের চেয়ে বেশ মোটা মনে হয়।
আর এমন দামি ফোনে ধুলাবালি ও পানি নিরোধক প্রতিরক্ষার বিষয়টিতে ছাড় দিতে নারাজ থাকে সবাই। এক্ষেত্রে নাথিং ফোন ওয়ান কেবল দিচ্ছে আইপি ৫৩। যা আশা করেনি ক্রেতারা।
ডিসপ্লে
সুবিধা: ওয়াইডভাইন এল১ লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও ৬ দশমিক ৫৫ ইঞ্চিবিশিষ্ট নাথিং ফোন ওয়ানে রয়েছে ওএলইডি ডিসপ্লে ও কর্নিং গরিলা গ্লাস ৫ এর প্রটেকশন। এ ছাড়া ফোনটিতে রয়েছে ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেট, এইচডিআর ১০+ সাপোর্ট, ১৮০০ X ২৪০০ পিক্সেল রেজ্যুলেশন।
আইফোনের মতো নাথিং ফোনে সফটওয়্যারগুলো খুব আরামে ব্যবহার করা যায়। টাচিং রেসপন্সও বেশ ভালো কাজ করে। আর ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর খুব দ্রুত কাজ করতে পারে।
অসুবিধা: আইপিএস ও অ্যামলেড প্যানেলের ডিসপ্লের তুলনায় নাথিং ফোনের ওএলইডি ডিসপ্লে ভালো লাগলেও সুপার অ্যামলেড ডিসপ্লের মতো আকর্ষণ ধরে রাখতে পারেনি নাথিং। কেননা রঙ ও উজ্জ্বলতাকে বেশ মলিন করে ফেলেছে এই ফোনটি।
আর নাথিংয়ের ইউরোপিয়ান ভ্যারিয়েন্টে ডিসপ্লের ওপরে হালকা সবুজ হয়ে যাওয়ার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। তবে এটি খুব একটা চোখে পড়ে না। কিন্তু ডার্ক মোড কিংবা অন্ধকারে ফোন ব্যবহার করলে দেখতে পাওয়া যায়।
হার্ডওয়্যার ও পারফরমেন্স
সুবিধা: ফোনের ইউআই পারফর্মেন্স বেশ ভালোই বলা যায়। বাজারের অন্যান্য দামি মডেলের ফোনের মতো ভালো না হলেও, খুব একটা মন্দ বলা যায় না।
৪ হাজার ৫০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি সম্বলিত নাথিং ফোনে দীর্ঘক্ষণ গেম খেলার পর অতিরিক্ত গরম হয় না। আর হলেও সেটা সহনীয় মাত্রায় থাকে। ব্যাটারি ব্যাকআপও বেশ ভালো ফোনটির। ব্যাটারি ড্রেইনিংয়ের অসুবিধা তেমন একটা দেখা যায় না অন্যান্য ফোনের তুলনায়। নেটওয়ার্ক ও স্পিকারও ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করবে বলে আশা করা যায়।
অসুবিধা: নাথিং এই ফোনটিতে ব্যবহার করেছে স্ন্যাপড্রাগন ৭৭৮জি+ ভার্সনের প্রসেসর। তবে চাইলে ফোনে স্ন্যাপড্রাগনের ৮৭০ ব্যবহার করা যেত। যা বাজারের স্ন্যাপড্রাগনের ওভারহিটিং ইস্যুজনিত অন্যান্য প্রসেসরের থেকে বেশ ভালো।
আর কিছু ক্ষেত্রে ল্যাগিংয়ের দেখা মিলতে পারে ফোনটিতে। বিশেষ করে দীর্ঘক্ষণ টানা ব্যবহার, ভারী কোনো সফটওয়্যারের সময় এমনটা হয়ে থাকে।
সফটওয়্যার
সুবিধা: নাথিংয়ের ওআইএস নতুন সফটওয়্যার হিসেবে বেশ ভালো পারফরমেন্স দিচ্ছে। র্যাম ম্যানেজমেন্টও আশানুরূপ। বেশ ঘন ঘন আপডেট দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া ৩ বছরের অপারেটিং সিস্টেম আপডেট ও ৪ বছরের সিকিউরিটি আপডেট পাওয়া যাবে ফোনটিতে।
অসুবিধা: ক্যামেরা শিফটিং ও অ্যাপ জাম্পিং করার সময় খানিকটা ধীর গতিতে কাজ করে ফোনটি। সাম্প্রতিক আপডেট আসার পর বেশ কিছু পরিবর্তনও দেখা দিয়েছে। তবে আশা করা যায়, পরবর্তী আপডেট এলে সেগুলো সমাধান হয়ে যাবে।
ক্যামেরা
সুবিধা: এটির পেছনে রয়েছে ৫০ মেগা পিক্সেল ও সামনে ১৬ মেগা পিক্সেলের ক্যামেরা। পেছনের ক্যামেরা ২টিতে ব্যবহার করা হয়েছে যথাক্রমে সনি আইএমএক্স৭৬৬ সেন্সর (প্রাইমারি) ও স্যামসাং জেএন১ সেন্সর (আলট্রাওয়াইড)। সামনের ক্যামেরা হলো সনি আইএমএক্স৪৭১ এসই সেন্সরবিশিষ্ট।
বাজারের স্যামসাং ও পিক্সেলের হাইরেঞ্জের ফোনের ক্যামেরার চেয়ে কিছু ক্ষেত্রে বেশ ভালো ছবি তুলতে পারে নাথিং ফোন ওয়ান। বিশেষ করে পোর্ট্রেট মোড ও ফেস টোন এদিক দিয়ে সেরা।
অসুবিধা: প্রাইমারি ক্যামেরার ডাইনামিক রেঞ্জ খুব একটা ভালো কাজ করে না। আর আলট্রাওয়াইড লেন্স প্রাইমারি লেন্সের সঙ্গে সামঞ্জস্য কম। কন্ট্রাস্ট রেশিও এবং কালার টোন আরেকটু ভালো হলে অসাধারণ হতো।
সবদিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, গেম কিংবা ক্যামেরাসহ সব মিলিয়ে ফোনটির পারফরম্যান্স মোটামুটি। এ ধরনের সুবিধা পেতে চাইলে নাথিং ফোন ওয়ান কেনা যেতে পারে। বর্তমানে ৪৭ হাজার ৫০০ থেকে শুরু করে ৬৫ হাজার টাকা রেঞ্জের মধ্যে অফিশিয়াল ও আনঅফিশিয়াল ভ্যারিয়েন্টে নাথিং ফোন ওয়ান পাওয়া যাচ্ছে।
তথ্যসূত্র: দ্য ভার্জ ও এটিসি
Comments