আইফোনে কল রেকর্ড যেভাবে

ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও প্রাদেশিক নীতিমালায় ভিন্নতার কারণে অ্যাপলের আইফোনে ফোনকলের ক্ষেত্রে বিল্ট-ইন রেকর্ডিংয়ের সুযোগ রাখা হয়নি। প্রাইভেসি সেটিংসয়ের কারণে অ্যাপল বিশ্বব্যাপী ভোক্তাদের পছন্দের অন্যতম কারণ। তারপরও, কিছু কৌশল ব্যবহার করে আইফোনে ফোনকল রেকর্ড করা যায়।
আইফোনে কল রেকর্ডের জন্য আছে বেশ কিছু উপায়। ছবি: সংগৃহীত

ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও প্রাদেশিক নীতিমালায় ভিন্নতার কারণে অ্যাপলের আইফোনে ফোনকলের ক্ষেত্রে বিল্ট-ইন রেকর্ডিংয়ের সুযোগ রাখা হয়নি। প্রাইভেসি সেটিংসয়ের কারণে অ্যাপল বিশ্বব্যাপী ভোক্তাদের পছন্দের অন্যতম কারণ। তারপরও, কিছু কৌশল ব্যবহার করে আইফোনে ফোনকল রেকর্ড করা যায়।

গোপনে আইফোনে ফোনকল রেকর্ড করতে চাইলে আইনগত সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু কল রেকর্ড করা একান্ত প্রয়োজন হলে অপর প্রান্তে থাকা মানুষটির সম্মতিতে রেকর্ড করা উচিত।

অ্যাপ ছাড়াই যেভাবে আইফোনে কল রেকর্ড করবেন 

এটি সম্ভবত সবচেয়ে দ্রুত ও সহজে কোনো কল রেকর্ড করার পদ্ধতি। বিনা খরচে ও কোনো অ্যাপের সাহায্য ছাড়াই ফোনকল রেকর্ড করতে প্রয়োজন হবে আরেকটি ডিভাইস। তবে ডিভাইসটিতে থাকতে হবে মাইক্রোফোন যা অডিও রেকর্ডে সক্ষম। এটি হতে পারে অন্য কোনো আইফোন, আইপ্যাড, কম্পিউটার বা পোর্টেবল রেকর্ডিং ডিভাইস।

ছবি: মেকইউজঅফ ডট কম

এজন্য আগে নিরিবিলি কোনো জায়গা বেছে নিয়ে আইফোনের স্পিকারফোন ব্যবহার করতে হবে। যেভাবে আইফোনে কল রেকর্ড করা যাবে: 

১. কল করুন ও স্পিকার আইকনে চাপ দিন। অপর প্রান্তের ব্যক্তির কাছ থেকে কল রেকর্ডের সম্মতি নিন।

২. সম্মতি পেলে এক্সটারনাল রেকর্ডারে রেকর্ড করতে শুরু করুন।

৩. আইফোনটিকে রেকর্ডিং ডিভাইসের মাইক্রোফোনের কাছাকাছি রাখুন। নিজের কথার পরিষ্কার রেকর্ডিং চাইলে, নিজেও রেকর্ডিং ডিভাইসের কাছাকাছি থাকুন।

৪. কথা শেষ হলে কল 'এন্ড' করুন।

৫. রেকর্ডিং 'সেভ' করুন। 

গুগল ভয়েস ব্যবহার করে যেভাবে ফোনে আসা কল রেকর্ড করা যায়

গুগল ভয়েস একটি ফ্রি ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল) কলিং সার্ভিস যা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ব্যবহারযোগ্য। এটি দিয়ে একটি ফ্রি ফোন নম্বর, একটি ভয়েসমেইল ইনবক্স এবং দেশীয় (ফ্রি) ও আন্তর্জাতিকভাবে (গুগল ভয়েস কলিং রেট অনুসারে) কল করার সুযোগ পাওয়া যায়। ফোন কল রেকর্ডের সুযোগ গুগল ভয়েসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য সুবিধা।  

ছবি: মেকইউজঅফ ডট কম

তবে এটি ব্যবহারের আগে সার্ভিস সেটিং-আপে কিছু কাজ করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি আপনার কোম্পানি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুগল ওয়ার্কস্পেস অ্যাকাউন্টের জন্য কোনো ভয়েস সেটিং বা ব্যবহার করবেন না। অন্যথায়, রেকর্ডিং ফিচারটি আপনার জন্য প্রযোজ্য হবে না। 

যেভাবে গুগল ভয়েস সেটআপ করবেন: 

১. অ্যাপ স্টোর থেকে বিনামূল্যে গুগল ভয়েস ডাউনলোড করুন। এটি লঞ্চ করুন ও গুগল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে সাইন-ইন করুন।

২. সার্চ অপশনে চাপ দিন। গুগল ভয়েস অ্যাকাউন্টে যুক্ত করার জন্য নতুন ফোন নম্বর নির্বাচন করুন।

৩. নম্বরটি 'কনফার্ম' করুন। আপনার ফোন নম্বর দেওয়ার জন্য 'নেক্সট' এ চাপ দিন।

৪. আপনার আইফোনের ফোন নম্বর দিন। নিশ্চিত করুন ও ভেরিফিকেশন কোডের জন্য অপেক্ষা করুন।

৫. এইমাত্র পাওয়া কোডটি ব্যবহার করে আপনার নতুন গুগল ভয়েস সেটআপ 'ভেরিফাই' করুন। 

এরপরের চূড়ান্ত ধাপ সম্পন্ন করলেই আইফোনে কল রেকর্ড করা যাবে। এ ধাপে 'গুগল ভয়েস ওয়েবসাইট' ওপেন করুন ও আপনার গুগল অ্যাকাউন্টে সাইন-ইন করুন। সেটিংস মেনু ওপেন করার জন্য পেজের উপরে ডান কোণায় থাকা গিয়ার আইকনে ক্লিক করুন। 

ইনকামিং কল রেকর্ডের সুযোগ থাকলেও এখানে নেই আউটগোয়িং কল রেকর্ডের সুযোগ। ছবি: মেকইউজঅফ ডট কম

এখানে, পেজের বামপাশে থাকা 'কলস ট্যাব' মেনুটি নির্বাচন করুন। তারপর স্ক্রল করে নিচে যান ও 'ওয়াইডগেট' টিকে ডানপাশে সরিয়ে 'ইনকামিং কল অপশনস' চালু করুন। 

গুগল ভয়েস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোনো ফোনকল রিসিভ করলে, কলটি রেকর্ডের জন্য আইফোন নম্বর প্যাডে কি '৪' (ফোর) প্রেস করতে হবে। এটি করলে গুগল অপরপ্রান্তে জানাবে, কথা রেকর্ড হচ্ছে। এই রেকর্ডিং পাওয়া যাবে গুগল ভয়েস ইনবক্সে। নিরাপদে রাখার জন্য সেখান থেকে ডাউনলোড করে রাখা যাবে।

তবে আইনগত ও নিরাপত্তাজনিত কারণে, গুগল ভয়েস ব্যবহার করে আইফোনের কোনো 'আউটগোয়িং' কল রেকর্ড করা যায় না।

থার্ড-পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করে কল রেকর্ড

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীরা থার্ড পার্টি অ্যাপ রেভ কল রেকর্ডারের মাধ্যমে আইফোনের কল রেকর্ড করতে পারবেন। রেভ কল রেকর্ডার অ্যাপ স্টোর থেকে ফ্রি ডাউনলোড করা যায়। 

অ্যাপটি প্রথমে ওপেন করলে প্রাপ্ত কনফার্মেশন কোড দেওয়ার সময় ফোন নম্বর যুক্ত করে দিতে হবে। প্রক্রিয়াটি একটু জটিল, কিন্তু অ্যাপটিতে বিল্ট-ইন টিউটোরিয়াল আছে। 

প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে, 'স্টার্ট রেকর্ডেড কল' এ চাপ দিন। তারপর 'আউটগোয়িং' বা 'ইনকামিং' কল বাছাই করুন। আউটগোয়িং কলের ক্ষেত্রে, রেভ কল রেকর্ডার সার্ভিসকে ফোন করতে হবে। পরে যার সঙ্গে কথা বলতে চান, তাকে ফোন করবেন। উভয় কল কানেক্টেড হলে, রেকর্ডিং শুরুর জন্য 'মার্জ কলস' বাটনে চাপ দিলে রেকর্ডিং শুরু হবে। 

রেভ কলের প্রক্রিয়াটি কিছুটা জটিল। ছবি: মেকইউজফ ডট কম

ইনকামিং কলের ক্ষেত্রে, প্রক্রিয়াটি কিছুটা আলাদা, কিন্তু সহজ। কলটি একবার সম্পন্ন হলে এবং কলটি ডাউনলোডের জন্য প্রস্তুত হলে রেভ কল রেকর্ডার আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। অপশনাল বা ঐচ্ছিক পেইড ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসগুলোও এ পর্যায়ে উপস্থিত হবে। 

রেভ কল রেকর্ডারের সুবিধা হলো, আপনি যার সঙ্গে কথা বলছেন, সে আপনার ফোন নম্বর দেখতে পাবে, কোনো অচেনা নম্বর নয়। এই সুবিধা অন্য অনেক রেকর্ডিং সার্ভিসে নেই। 

তবে আপনার কলগুলো অন্য কোম্পানির সার্ভারে সংরক্ষিত হবে। তাই ব্যক্তিগত বা স্পর্শকাতর ব্যাপারে এই সার্ভিসটি ব্যবহার করা ঠিক হবে না।

ভয়েস মেইল ব্যবহার করে আইফোনে কল রেকর্ড

আপনি যদি ইতোমধ্যে আইফোনে ভয়েসমেইল সেট আপ করে থাকেন, তবে আপনার ভয়েসমেইলে ফোন কল রেকর্ডের জন্য আপনি একটি সহজ কৌশল ব্যবহার করতে পারেন। এই উপায়টির কার্যকারিতার ক্ষেত্র অনেকটাই নির্ভর করছে আপনার সেলফোন সার্ভিস ক্যারিয়ারের ওপর। 

প্রথমত, যাচাই করে দেখতে হবে যে আপনার ক্যারিয়ার ভয়েসমেইল মেসেজ ডাউনলোড করার সুযোগ দিচ্ছে কি না। আপনার আইফোনে ফোন অ্যাপ লঞ্চ করুন ও ডানপাশের নিচ দিকে ভয়েসমেইল ট্যাবে চাপ দিন। যদি দেখেন অসংখ্য ভয়েসমেইল মেসেজ এসেছে, তাহলে খুবই ভালো! আপনি সেসব ডাউনলোড করতে পারবেন ও ভবিষ্যতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সেসব আপনার ডিভাইসে রাখতে পারবেন। 

ভয়েসমেইল ট্যাব পেলে আপনি সৌভাগ্যবান, না পেলে একটু জটিলতা হবে কাজে। ছবি: মেকইউজঅফ ডট.কম

আপনি যদি শুধু একটি 'কল ভয়েসমেইল' অপশন দেখতে পান, তবে আপনি অতটা সৌভাগ্যবান নন। আপনি সেক্ষেত্রে ভয়েসমেইলগুলো ডাউনলোড করতে পারবেন না। তবে, আপনি হয়ত সেসব আপনার ক্যারিয়ারের অডিবল (শ্রবণযোগ্য) ভয়েসমেইলে সেভ করে রাখতে পারবেন। এর অর্থ যদি আপনি মেসেজগুলো প্লে করে শুনতে চান, সেক্ষেত্রে প্রতিবার আপনার ভয়েসমেইলে কল করতে হবে। 

এই মেসেজগুলোকে বাইরে থেকে ডাউনলোড করতে হলে, চেষ্টা করুন স্পিকারফোন পদ্ধতি ব্যবহার করতে, যা নিয়ে উপরে আলোচনা হয়েছে। আপনার ফোনের নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারের ওপর নির্ভর করে আপনি কল মার্জিং ও ভয়েসমেইল ব্যবহার করে সে ধরনের কোনো সাদৃশ্যপূর্ণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। 

১. যার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান, তাকে কল করুন ও কল রেকর্ড করার সম্মতি নিন। তাদের হোল্ড করতে বলুন।

২. আপনার আইফোনে একটি ত্রিমুখী আলাপ শুরু করার জন্য 'অ্যাড কল' চাপুন।

৩. নিজ নম্বরে ফোন করুন। আপনি আপনার নিজস্ব 'ভয়েসমেইল ইনবক্স' পেয়ে যাবেন।

৪. ভয়েসমেইল সম্ভাষণ শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। আলাপ শুরু করার জন্য 'মার্জ কল' চাপুন।

৫. কলটি শেষ করুন। আপনার কথোপকথন একটি মেসেজ হিসেবে রেকর্ড হয়ে থাকবে, যা আপনি আপনার ভয়েসমেইল ইনবক্স থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। 

কোন আইফোন কল রেকর্ডিং পদ্ধতি আপনার জন্য কার্যকর 

কীভাবে আইফোনের ফোনকল রেকর্ড করবেন, তার একটি পর্যালোচনা পাওয়া গেল। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে প্রতিটি নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার ও আইওএস ডিভাইস কিছুটা আলাদাভাবে কাজ করে। তাই হয়ত কয়েকটি রেকর্ডিং মেথড ট্রাই করে দেখতে হবে, কোনটি বেশি উপযোগী। 

আইফোনে ফোনকল রেকর্ডের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দুটি উপায় হলো স্পিকারফোন পদ্ধতি ব্যবহার অথবা কোনো থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করা। যে কোনো অবস্থায়, আইনসিদ্ধভাবে কাজ করতে নিশ্চিত করতে হবে যেন অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে জানানো হয়েছে যে তাদের (কথা) রেকর্ড করা হচ্ছে।

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয় 

তথ্যসূত্র:
www.makeuseof.com 
www.pcmagazine.com 

 

Comments