আই-মেসেজের মাধ্যমে ছড়ানো ম্যালওয়্যার থেকে আইফোন সুরক্ষিত রাখার উপায়

ম্যালওয়্যারটি আই-মেসেজ অ্যাপের মাধ্যমে আইওএস ১৫.৭ পর্যন্ত মডেলগুলোকে আক্রমণ করতে পারে এবং একটি টেক্সট মেসেজ আকারে ভাইরাসটি ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে।
যেসব ফোনে আইওএস ১৭ ব্যবহার করা যাবে না
ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি একটি নতুন ম্যালওয়্যার আইফোন ব্যবহারকারীদেরকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানি ক্যাসপারস্কি এই ম্যালওয়্যারটি আবিষ্কার করেছে।

ম্যালওয়্যারটি আই-মেসেজ অ্যাপের মাধ্যমে আইওএস ১৫.৭ পর্যন্ত মডেলগুলোকে আক্রমণ করতে পারে এবং একটি টেক্সট মেসেজ আকারে ভাইরাসটি ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে।

তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে এই ভাইরাসটি থেকে নিজের আইফোনকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব। এই নতুন ম্যালওয়্যার এবং এর পাশাপাশি এমন আরও ক্ষতিকর ভাইরাস কিংবা ম্যালওয়্যার থেকে নিজের আইফোনকে কীভাবে সবসময় সুরক্ষিত রাখবেন তা নিয়েই আজকের এই লেখা।

ম্যালওয়্যারটি যেভাবে আইফোন আক্রমণ করে

এই নতুন আবিষ্কৃত ম্যালওয়্যারটি আই-মেসেজ অ্যাপের মাধ্যমে এটাচমেন্ট আকারে আইফোনে প্রবেশ করে। এরপর এই ম্যালওয়্যারটি আই-মেসেজের একটি নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইফোনকে সংক্রমিত করে ফেলে। ব্যবহারকারীর কোনোরূপ হস্তক্ষেপ ছাড়াই এই ম্যালওয়্যারটি কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।

এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে, ম্যালওয়্যারটি কমান্ড ও কন্ট্রোল সার্ভারের সঙ্গে একটি সংযোগ স্থাপন করে। এই সংযোগটি ম্যালওয়্যারকে ডিভাইসের অন্যান্য দুর্বলতাগুলো আবিষ্কার করে তাতে প্রবেশ করতে সহায়তা করে৷ এভাবে এই ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে একজন আক্রমণকারী পুরো আইফোন ডিভাইসের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর পরিচয়, অ্যাকাউন্ট, পাসওয়ার্ড, অ্যাপস ডেটা, ব্যক্তিগত ডেটা এবং এমনকি অ্যাপেল পে সেটাপ করা থাকলে ব্যবহারকারীর আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত সব তথ্য অন্যের কাছে চলে যেতে পারে।

ম্যালওয়্যারটি থেকে যেভাবে থাকবেন সুরক্ষিত

আপনার ডিভাইসের সুরক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো আপনার আইফোন আপডেট করা। ভাইরাস ও ম্যালওয়্যারগুলো সিস্টেমের বিভিন্ন দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ডিভাইসকে সংক্রমিত করে। অ্যাপেল প্রতিনিয়তই নিজেদের নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতাগুলো মেরামত করে নতুন আপডেট প্রকাশ করে।

আপনার ডিভাইসটিতে আইওএস এর সর্বশেষ সংস্করণটি চলছে কিনা তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে, আপনি এই ম্যালওয়্যার এবং অন্যান্য নিরাপত্তা হুমকির শিকার হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনতে পারবেন৷

আপনার আইফোন আপডেট করতে এই ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:

১। সেটিংস অ্যাপ খুলুন।

২। জেনারেলে যান এবং সফটওয়্যার আপডেট নির্বাচন করুন।

৩। যদি একটি আপডেট দেখতে পান তবে 'ডাউনলোড এবং ইনস্টল করুন' এখানে ক্লিক করুন।

৪। ফোনের অটোমেটিক আপডেট ব্যবস্থা চালু না থাকলে এটি চালু রাখুন।

যেহেতু এই ম্যালওয়্যারটি ব্যবহারকারীর যেকোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই আই-মেসেজের মাধ্যমে এটাচমেন্ট আকারে প্রবেশ করে তাই স্বয়ংক্রিয় 'মেসেজ প্রিভিউ' বন্ধ রাখা যেতে পারে। যা ক্ষতিকর ভাইরাস ও ম্যালওয়্যারগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে লোড হতে বাধা দেয় এবং নিরাপত্তার আরেকটি স্তর যোগ করে। এটি করার জন্য:

১। সেটিংস অ্যাপ খুলুন।

২। নিচে স্ক্রল করুন এবং 'মেসেজেস' নির্বাচন করুন।

৩। নোটিফিকেশন এ গিয়ে 'শো প্রিভিউ' টগলটি বন্ধ করুন।

আইফোনের সুরক্ষায় আরও কিছু কৌশল

উপরের কৌশলগুলো এই নতুন ম্যালওয়্যারের থেকে আপনার আইফোনকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে। তবে আইফোনে এটিই একমাত্র নিরাপত্তা হুমকি নয়। এরকম আরও স্পাইওয়্যার, ভাইরাস থেকে আপনার ডিভাইসকে রক্ষা করার জন্য যেসব অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিতে পারেন সেগুলো হলো-

লিংকের ক্ষেত্রে সতর্কতা: টেক্সট, ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রাপ্ত অচেনা ওয়েবসাইটের লিংক থেকে সর্বদা সতর্ক থাকুন। সন্দেহজনক লিংক ক্লিক করা এড়িয়ে চলুন। এই লিংক ফিশিং ওয়েবসাইট বা ম্যালওয়্যার-সংক্রমিত ওয়েবপেইজে নিয়ে যেতে পারে।

এটাচমেন্ট খোলার সময়ে সতর্ক থাকা: অপরিচিত কোনো উৎস হতে পাঠানো যেকোন এটাচমেন্ট খোলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অনেকসময় খুবই সাধারণ চেহারার একটি ফাইল, ছবি বা ডকুমেন্ট আকারে ম্যালওয়্যার পাঠানো হয়ে থাকে। এজন্যই এটাচমেন্ট খোলার আগে প্রেরকের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করা খুবই প্রয়োজন।

ফেস আইডি ব্যবহার: বাইরে আইফোন ব্যবহার করার সময়ে পাসওয়ার্ডের বদলে সর্বদা ফেস আইডি ব্যবহার করুন। এতে করে অন্য কারো পক্ষে আপনার ফোনের পাসওয়ার্ড দেখে ফেলা ও তা পরবর্তীতে আপনার একাউন্ট হ্যাক করতে ব্যবহার করা সম্ভব হবেনা।

নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার: অ্যাপ স্টোর থেকে একটি ভালোমানের অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ইনস্টল করুন। এই অ্যাপগুলো সম্ভাব্য হুমকির জন্য স্ক্যান করে ডিভাইসকে সুরক্ষা প্রদান করে।

টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সচল রাখা: অ্যাপেল আইডিতে প্রবেশের জন্য টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবস্থা চালু করা ডিভাইসের নিরাপত্তাকে আরও জোরালো করবে। এতে করে পাসওয়ার্ড কখনো হ্যাকারের হাতে গেলেও আপনার একাউন্টে হ্যাকারের পক্ষে ঢোকা সম্ভব হবে না।

নতুন নতুন ভাইরাস ও ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে হ্যাকিং, তথ্য চুরির মতো সাইবার অপরাধ দিন দিন বাড়ছে। আইফোনের এই নতুন ম্যালওয়্যারটি নিয়েও তাই আতংকিত না হয়ে বরং এটি প্রতিরোধের জন্য সতর্ক হতে হবে। নিজের ডিভাইস আপডেট করা, মেসেজ প্রিভিউ বন্ধ রাখার মতো কিছু কৌশল অবলম্বন করলেই এই নতুন ম্যালওয়্যারের আক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে।

তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট, সিকিউরলিস্ট বাই ক্যাসপারস্কি

Comments