ওয়াই ক্রোমোজম নিয়ে নতুন গবেষণা, উপকৃত হতে পারেন বন্ধ্যা পুরুষ

শিল্পীর তুলিতে সবুজ রঙে আঁকা এক্স ও নীল রঙের ওয়াই ক্রোমোজম। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত
শিল্পীর তুলিতে সবুজ রঙে আঁকা এক্স ও নীল রঙের ওয়াই ক্রোমোজম। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জেনোম তথা জিনগত নকশার স্বরূপ বোঝার ক্ষেত্রে আরো এক ধাপ এগিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পুরুষদের দেহে থাকা ওয়াই ক্রোমোজোমের পরিপূর্ণ পাঠোদ্ধার করতে পেরেছেন তারা। এটি বন্ধ্যা পুরুষদের সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা বিষয়ক গবেষণায় সহায়ক হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো ওয়াই ক্রোমোজোমের জিনোম সিকুয়েন্স সম্পন্ন করতে সক্ষম হন, যা শুধু পুরুষদের জিনে পাওয়া যায়।

অপর ক্রোমোজোমটি এক্স ক্রোমোজোম, যা নারী-পুরুষ উভয়ের জিনে থাকে। তবে ওয়াই ক্রোমোজোম পিতা থেকে ছেলে শিশুর কাছে স্থানান্তর হয়। ২৪টি ক্রোমোজোমের সমন্বয়ে সুতোর মতো গড়নের নকশাটি কোষ থেকে কোষে জিনগত তথ্য নিয়ে যায়।

মানবদেহের প্রতি কোষে একজোড়া সেক্স ক্রোমোজোম থাকে। নারী দেহে দুটোই এক্স ক্রোমোজোম, পুরুষদেহে একটি এক্স ও অপরটি ওয়াই ক্রোমোজোম।

ওয়াই ক্রোমোজোমের জিন প্রজননসংক্রান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করে। এর ভেতর আছে স্পার্ম বা শুক্রাণু উৎপাদন,  যাকে আগে বলা হতো স্পার্মাটোজেনেসিস। ক্যান্সারের ঝুঁকির সঙ্গেও সম্পর্ক আছে এর। তবে ক্রোমোজোমটির ব্যতিক্রমী জটিল গঠনের জন্য এর পাঠোদ্ধার করা ছিলো বেশ শক্ত।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হিউম্যান জিনোম রিসার্চ ইন্সটিটিউটে কর্মরত বিজ্ঞানী ও ন্যাচার জার্নালে এ নিয়ে প্রকাশিত গবেষণার 'লিড অথর' আরাং রাহ্ই এর কৃতিত্ব দিলেন নতুন সিকুয়েন্সিং প্রযুক্তি ও গণনা সংক্রান্ত পদ্ধতিগুলোকে।

এ বিষয়ে সান্তা ক্রুজে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমলিকুলার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রফেসর ও গবেষণাটির সহ-লেখক কারেন মিগা বলেন, 'এই গবেষণা থেকে প্রথমবারের মতো ওয়াই ক্রোমোজোমের পরিপূর্ণ পাঠোদ্ধার সম্ভব হলো। ক্রোমোজোমটির দৈর্ঘ্যের অন্তত ৫০ ভাগ উন্মোচিত হয়েছে, যা আগে আমাদের জিনোম ম্যাপে অনুপস্থিত ছিলো।'

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমলিকুলার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রফেসর ও গবেষণাটির সহ-লেখক ক্যারেন মিগা। ছবি: সংগৃহীত
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমলিকুলার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রফেসর ও গবেষণাটির সহ-লেখক ক্যারেন মিগা। ছবি: সংগৃহীত

এক্স ক্রোমোজোমের পরিপূর্ণ সিকুয়েন্স প্রকাশিত হয়েছিলো ২০২০ এ। তবে ওয়াই ক্রোমোজোম এর স্বরূপ জানার জায়গায় ঘাটতি রয়ে গিয়েছিলো।

'এটা বিশেষ করে এজন্য গুরুত্বপূর্ণ- বহু আগ থেকেই মানুষের রোগ-ব্যাধি নিয়ে করা গবেষণা থেকে ওয়াই ক্রোমোজোমকে বাইরে রাখা হয়েছিলো'- বলছেন জেনোমিসিস্ট ও গবেষণার সহ-লেখক মনিকা চেকোভা।

তিনি যোগ করেন-' হিউম্যান জিনোমে ওয়াই ক্রোমোজোমটি ক্ষুদ্রতম ও সবচেয়ে দ্রুত পরিবর্তনশীল। আর সবচেয়ে 'রিপিটেটিভ' অর্থাৎ, এর ডিএনএ-তে বহুবার রিপিট হওয়া ডিএনএ'র চিহ্ন রয়েছে।'

এই গবেষণায় চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক, ওয়াই ক্রোমোজোমের এমন কিছু দিক প্রকাশ পেয়েছে৷ যার ভেতর আছে ডিএনএ'র স্ট্রেচ।

এটি এমন ডিএনএ অণু যা দৈহিক কোনো তন্ত্রের উন্নতি ও কার্যকর থাকবার জিনগত তথ্য বহন করে। এটি এমন বেশকিছু জিন বহন করে যা শুক্রাণু উৎপাদনের কাজে জড়িত। গবেষকদের মতে, ওয়াই ক্রোমোজোম জিনের সম্পূর্ণ পাঠোদ্ধার প্রায়োগিক ক্ষেত্র, বিশেষত প্রজনন সংক্রান্ত গবেষণায় ভালো ভূমিকা রাখবে।

'বেশকিছু জিন উর্বরতা ও প্রজননের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে স্পার্মাটোজেনেসিস এর ক্ষেত্রে; কাজেই স্বভাবসিদ্ধ বৈচিত্র্য কিংবা ধরা যাক, অ্যাজুস্পারমিয়া (সিমেনে শুক্রাণুর অনুপস্থিতি) ঘটলো- সেক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে। এছাড়া আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন)  ক্লিনিকগুলোয় কিংবা এসব জিনের কার্যগত গবেষণায় এটি সহায়ক হবে', যোগ করেন চেকোভা।

উপরন্তু, আরো কিছু ওয়াই ক্রোমোজোমের জিন শনাক্ত করতে গিয়ে গবেষকরা দেখেছেন ক্রোমোজোমে থাকা কিছু ডিএনএকে অতীত গবেষণাগুলোয় ভুল করে ব্যাকটেরিয়ার ধরন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

'হিউম্যান জেনেটিকস' নিয়ে মানবজাতির জ্ঞানভান্ডারকে আরো সমৃদ্ধ করতে সচেষ্ট রয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ২০০৩ সালে মানুষের জিনোম নিয়ে গবেষণা প্রথমবারের মতো আলোর মুখ দেখে।

গত বছরের মে মাসে প্রথমবারের মতো মানবদেহের পরিপূর্ণ জিনোম সিকুয়েন্সিং ও ওয়াই ক্রোমোজমের 'আংশিক পাঠোদ্ধার' সম্ভব হয়েছিলো। গবেষকরা জিনোমের নতুন প্রকরণ প্রকাশ করেছিলেন, যা ছিলো আগের চেয়ে উন্নত। এতে আগের তুলনায় আরও বৈচিত্র্যমন নমুনা নেয়া হয়েছিলো, যাতে পৃথিবীজুড়ে থাকা ৮ বিলিয়ন মানুষের প্রতিফলন ঘটতে পারে।

ওয়াই ক্রোমোজমের সম্পূর্ণ পাঠোদ্ধারও যুক্ত হয়েছে এর সঙ্গে।

চেকোভা যেমন বললেন, 'এখন যদিও বেশ ব্যয়বহুল, তবে আমাদের জানা আছে, ভবিষ্যতে ব্যক্তিক জিনোমিকস-এ রূপান্তর করার জন্য ওয়াই ক্রোমোজোমকে কী উপায়ে সাজাতে হবে।'

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka airport third terminal problems

Customs flags hurdles at 3rd terminal of Dhaka airport

The customs authorities have identified a number of operational bottlenecks at the much-anticipated third terminal of Hazrat Shahjalal International Airport (HSIA), widely known as Dhaka airport.

11h ago