কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য ১০ পরামর্শ
কনটেন্ট তৈরি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় একটি পেশায় রূপ নিয়েছে। কনটেন্ট নির্মাতাদের ক্যারিয়ারে সাফল্যের জন্য নানা বিষয় মাথায় রাখতে হয়। কনটেন্ট পোস্টিংয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা থেকে শুরু করে তার ব্যক্তিত্ব, দর্শকের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, অনুপ্রেরণাসহ বিভিন্ন বিষয় খেয়াল রাখা লাগে।
চলুন দেখে নেওয়া যাক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে, যেগুলো কনটেন্ট নির্মাতাদের জানা উচিত।
নিজস্বতা বজায় রাখুন
কনটেন্টে নিজস্বতা বা স্বকীয়তা বজায় রাখা খুবই জরুরি। এমন কনটেন্ট তৈরি করুন যেগুলো আপনার চরিত্র এবং আবেগের সঙ্গে যায়। নিজের চিন্তাভাবনা বা ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয়বস্তু তৈরি করলে সেটি আরও বিকশিত হবে। কনটেন্টগুলো তখন অরিজিনাল, অর্গানিক এবং প্রাকৃতিক হয়ে উঠে। তখন আপনি প্রতিদিন যা যা করেন, তাই কনটেন্ট হয়ে উঠে।
আপনি যদি জোর করে কিছু করার চেষ্টা করেন, তা কখনই খুব একটা ভালো হবে না। তাই অন্যদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হলেও নিজের পথ অনুসরণ করুন।
নতুন নতুন ফিচার পরীক্ষা করুন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো নির্মাতাদের সৃজনশীলতাকে উজ্জীবিত করতে ক্রমাগতই নতুন ফিচার নিয়ে আসে। বেশ কিছুদিন আগেই আমরা দেখেছি ইনস্টাগ্রাম তাদের নতুন ফিচার রিমিক্স এবং কোলাবস চালু করেছে। অন্যদিকে, ফেসবুকও তাদের রিলস বিশ্বব্যাপী চালু করেছে। নির্মাতাদের জন্য উপদেশ- সবগুলো ফিচার পরখ করে দেখুন। একটি নতুন ফিচার সম্পর্কে শেখার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে এটি ব্যবহার করা।
একটি প্ল্যাটফর্ম যখন নতুন কোনো ফিচার উন্মোচন করে, তখন তারা সেই ফিচার ব্যবহারের জন্য সবাইকে উৎসাহিত করে। অর্থাৎ, এর মাধ্যমে আপনার কনটেন্টগুলো আরও ভালো রিচ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নতুন কোনো ফরম্যাট বা ফিচার আসলে পরখ করে দেখুন এবং আপনার কনটেন্টকে নতুন নতুন দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন।
আপনার যা আছে তাই ব্যবহার করুন
ভালো কন্টেন্টের জন্য দামি সরঞ্জাম কিংবা পেশাদার এডিটিং সফটওয়্যার থাকাই লাগবে এমন কোনো শর্ত নেই। বিশেষ করে যারা কনটেন্ট তৈরির ক্যারিয়ারে সবেমাত্র পা ফেলেছেন, তারা চাইলে হাতের স্মার্টফোনটি ব্যবহার করেই অনেক কিছু করতে পারেন। স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপে অসংখ্য বিনামূল্যের সহজ অ্যাপ বা সফটওয়্যার রয়েছে। যেগুলোও চাইলে পরখ করে দেখতে পারেন।
তবে আপনাকে ছোট এবং বড় উভয় ধরনের কন্টেন্টের ক্ষেত্রেই বহুমুখী চিন্তাধারা রাখতে হবে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং ফরম্যাট জুড়ে আপনি চাইলে একই কন্টেন্ট বিভিন্ন উপায়ে পোস্ট করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি দীর্ঘ ভিডিওকে রিল বা স্টোরিজের জন্য ছোট, উলম্ব ক্লিপে পরিণত করা যেতে পারে। যা সেই ভিডিওগুলোকে আরও হাইলাইট করতে সহায়তা করবে।
সম্পৃক্ততার ওপর জোর দিন
এমন কনটেন্ট তৈরি করুন, যেগুলোর সঙ্গে মানুষ সর্বাধিক সম্পর্কিত এবং সম্পৃক্ততা অনুভব করবে। এ ধরনের কন্টেন্টের জন্য আপনার দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা, আপনার ঘন ঘন যাওয়া স্থানগুলো, আপনার আশপাশের মানুষ বা আপনার সারাদিনের বিভিন্ন চিন্তা থেকে ধারণা এবং অনুপ্রেরণা নিতে পারেন। এ ছাড়া, আপনার আবেগকে অনুসরণ করুন। কেননা, অন্যদেরও একই ধরনের আবেগ থাকতে পারে কিংবা তারা সেই আবেগ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হতে পারে।
আগে নিজের যত্ন নিন
ভালো বোধ করলে এবং ভালো মেজাজে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই ভালো কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন। তাই নিজের যত্ন নিন। শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে সেই দিনগুলোয় যথেষ্ট পরিমাণ কনটেন্ট তৈরি করে রাখুন। কেননা ভালো বোধ না করলে স্বাভাবিকভাবেই কনটেন্ট তৈরির মত সৃজনশীল কাজে মন বসবে না। দিনশেষে, ক্যারিয়ার বা সবকিছুর ওপরই নিজের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কাজটি ভালোবসালেই কেবল করুন
বাস্তব জীবনে আপনি যা করতে পছন্দ করেন, তা থেকেই যদি আপনি কনটেন্ট তৈরি করেন, তাহলে আপনার কাছে এই ক্যারিয়ার তখন আর গৎবাঁধা কাজের মতো মনে হবে না। যেহেতু এটি কাজের মতো মনে হবে না, তখন আপনাকে সহজে হতাশ বা ক্লান্তও করবে না। তাই আপনি যা পছন্দ করেন সেগুলো নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করুন। এতে আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, আপনি নিজের আসল রূপটিই উপস্থাপন করতে পারছেন। যা মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চাবিকাঠি।
তাই যখন কন্টেন্টের কথা আসে, এটি নিজের জন্য করুন। শুধু সংখ্যার জন্য করবেন না, অর্থাৎ আপনার ১ হাজার, ১০ হাজার বা এমনকি ১ লাখ ফলোয়ার বা ভিউ আছে কি না তার জন্য না। এটি করুন, কারণ আপনি কাজটি করতে ভালোবাসেন।
দর্শকদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখুন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কন্টেন্ট নির্মাতাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে তারা তাদের ভক্ত বা দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার ফলোয়ারদের কারণেই আজকে আপনি সফল। তাই ফলোয়ার সংখ্যা নির্বিশেষে, আপনার দর্শকদের মেসেজে এবং কমেন্ট সেকশনে যতটুকু সম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার দর্শকদের সঙ্গে একটি ভালো সম্পর্ক থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে সেই সম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।
এ ছাড়া, আপনার দর্শকদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার অতিরিক্ত সুবিধাও আছে। তাদের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া এবং অভিমত আপনাকে কনটেন্ট নির্মাণে সাহায্য করতে পারে। দর্শকরা কী পছন্দ করেন তা আপনি স্টোরিজ, পোল এবং কোয়েশ্চেন স্টিকারের মাধ্যমে জানতে পারেন।
ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন
আপনি প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে কিংবা যেকোনো দিনই পোস্ট করেন না কেন, বেশিরভাগ কনটেন্ট নির্মাতারাই বলে থাকেন যে, ধারাবাহিকতা গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের ক্ষেত্রে সপ্তাহে দুবার পোস্ট করলেই যথেষ্ট, আবার অনেকের প্রতিদিন পোস্ট করতে হয়। তবে মূল কথা হচ্ছে, ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নিয়মিত পোস্ট করতে হবে।
আপনার দর্শক কখন সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে তার দিকে চোখ রেখে পোস্টের সময় নির্ধারণ করা উচিত। প্রথম দিকে, বিভিন্ন সময়সূচী পরখ করুন। এ ছাড়া, এলোমেলো সময়ে পোষ্ট করে সবগুলোর মধ্যে তুলনা করার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আপনার কনটেন্ট কখন সবচেয়ে বেশি ভিউ বা এনগেজমেন্ট পায়। পরবর্তীতে আপনার সুবিধা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন।
গবেষণা করুন
অন্যান্য কনটেন্ট নির্মাতাদের অনুসরণ করুন এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের ভিন্ন ভিন্ন কন্টেন্টের দিকে লক্ষ্য করুন। এগুলো আপনাকে নতুন নতুন ধারণা এবং বিষয়ের সঙ্গে পরিচয় করাবে। অন্যদের দেখে অনুপ্রেরণা নিন এবং আপনার কনটেন্টে সেগুলো নিজস্ব শৈলীতে প্রকাশ করুন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে হ্যাশট্যাগ। নির্দিষ্ট একটি হ্যাশট্যাগ কারা, কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে তা লক্ষ্য করুন। পূর্বে থেকে গবেষণা করে, আপনার কন্টেন্টের সঙ্গে কোন কোন হ্যাশট্যাগগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ তা ব্যবহার করুন। যারা এসব হ্যাশট্যাগগুলো ফলো করছেন, তারা আপনার ফলোয়ারে রূপান্তরিত হলেও হতে পারে।
চাপ নেবেন না
সব পরামর্শ একসঙ্গে অনেক বেশি বেশি মনে হতে পারে। তবে চাপ নেবেন না। আপনি কাজটি কীসের জন্য করছেন, কেন করছেন তা মনে করার চেষ্টা করুন। আপনার যদি মনে হয় যে, আপনি সৃজনশীল কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না, আপনার মধ্যে ক্রিয়েটিভ ব্লক তৈরি হয়েছে, তাহলে হতাশ হবেন না। অনুপ্রেরণার জন্য অন্যদের দেখুন। তাও যদি আপনার ভেতর নতুন কোনো সৃজনশীল ধারণার জন্ম না হয়, তাহলেও বেশি জোরাজুরি করবেন না। অনুপ্রেরণা আমাদের চারপাশেই রয়েছে, তাই এটি নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করার কিছু নেই।
তথ্যসূত্র: মেটা
Comments