বর্জ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াকে লাভজনক উদ্যোগ হিসেবে দেখতে হবে: তাজুল ইসলাম
সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিশ্চিত করতে উদ্ভাবনী এবং কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। বর্জ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াটি লাভজনক উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করা গেলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে টেকসই করা যাবে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
আজ রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও ইউনিলিভার বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে 'প্লাস্টিক বর্জ্যের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য নীতি সহায়তা' শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ ক্ষেত্রে সার্কুলার বা চক্রাকার প্রক্রিয়া অনুসরণ করাকে কার্যকর সমাধান মনে করেন মন্ত্রী। সার্কুলার প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ভ্যালু চেইনের অংশীদারদের ক্ষমতায়ন ও অনানুষ্ঠানিক খাতকে সামগ্রিক সহযোগিতা দিতে গুরুত্ব আরোপ করেন।
মন্ত্রী বলেন, ভ্যালু চেইনে অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ভাঙ্গারি ও বর্জ্য সংগ্রাহকরা রয়েছেন। এই খাতটি অনানুষ্ঠানিক হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত উল্লেখ করে এই খাতে সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি, একই সঙ্গে পরিবেশ ও অর্থনীতির স্বার্থেই টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি উপযোগী কাঠামো তৈরির তাগিদ দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন যে, 'বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে বহু অংশীজন ও খাত সম্পৃক্ত। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ও ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে নীতি প্রণয়ন জরুরি বলে মনে করেন পরিবেশমন্ত্রী।
তিনি বলেন, একটি চক্রাকার প্লাস্টিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত কর্মকৌশল চিহ্নিত করতে হবে। কার্যকর প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি ও বেসরকারিখাতগুলোকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে পরিচিত হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, জিডিপি বৃদ্ধির সঙ্গে প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়াটা স্বাভাবিক। তবে প্লাস্টিক বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব এই খাতে মূল চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও তাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে উন্নত দেশের মত বর্জ্যের উৎসে এগুলোকে আলাদা করার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। কেননা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার টেকসই মডেল বাস্তবায়নে উৎসে পৃথকীকরণ সবচেয়ে জরুরি বিষয়। উৎসেই বিভিন্ন বর্জ্য পৃথক করা হলে পুরো 'সংগ্রহ ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাত প্রক্রিয়া'কে আরও সহজ করে তুলবে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও ও এমডি জাভেদ আখতার বলেন 'আমরা প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনগুলোর সঙ্গে বেশকিছু পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এই উদ্যোগগুলো যথাযথ সুবিধা ও সহযোগিতা না পেলে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এই ধরনের উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত হবে না।
তিনি বলেন, একটি বা দুটি প্রতিষ্ঠান এই সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। এজন্য পুরো ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে এবং অবদান রাখতে হবে। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে ভ্যালু চেইনে মূল্য সংযোজন করে সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে মনে করেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও ও এমডি জাভেদ আখতার।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও এফবিসিসিআইয়ের প্যানেল বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. ইজাজ হোসাইন।
তিনি বলেন যে, 'সরকার নীতি পর্যায়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভাগুলোর কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতার অভাব মূল সমস্যা। এ কারণে সঠিক প্রক্রিয়ায় বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ ও উৎসে বর্জ্য পৃথক করা যাচ্ছেনা। যা রিসাইকেলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।
স্বল্পমেয়াদে ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটি (এমআরএফ) স্থাপন করে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে সহজে এবং কম খরচে বিকল্প জ্বালানি তেল (আরডিএফ) উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানান ড. ইজাজ হোসাইন।
দীর্ঘমেয়াদে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন দেশের সফল মডেলগুলোকে লোকালাইজেশন বা দেশের জন্য উপযোগী করতে হবে। যেহেতু প্লাস্টিকের ওপর দেশের প্রায় সবাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল, তাই যেকোনো নীতি বা আইন প্রণয়নের আগে যথাযথ গবেষণা, সমীক্ষা ও পাইলটিং করার ব্যাপারে মূল প্রবন্ধে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। একই সঙ্গে ভোক্তা, উৎপাদনকারী, ব্যবহারকারী সহ সকল অংশীজনের সঙ্গে যথাযথ আলোচনা করার সুপারিশ করেন। অন্যথায় গৃহীত নীতি বাস্তবসম্মত না হয়ে সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিপিজিএমইএর সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, প্লাস্টিক খাত দেশের সকল শিল্পের সহযোগী চালিকা শক্তি। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারি সংস্থার আরও বিনিয়োগ ও অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানো, বেসরকারি খাতের উদ্যোগে প্রণোদনা ও কর সুবিধা প্রদানের সুপারিশ করেন তিনি।
সেমিনারের প্যানেল আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ইউ জু এলিসন এল বলেন, 'প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণে আমরা বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়িক খাতের সঙ্গেও কাজ করতে প্রস্তুত। এজন্য কার্যক্রম প্রণয়ন ও বিনিয়োগেও আমরা সাহায্য করতে চাই। প্লাস্টিকের বিকল্প উদ্ভাবন এবং এর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে একটা বৃত্তাকার অর্থনীতি তৈরি করার জন্য সিটি কর্পোরেশন ও উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করা প্রয়োজন। এজন্য প্লাস্টিক বর্জ্য এবং এর ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়নে সমন্বয় করতে হবে যেন এর মাধ্যমে পরিবেশ এবং মানুষের উপকার হয়, এবং দেশে সবুজ প্রবৃদ্ধি তরান্বিত হয়। ''
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের পরিচালক ও কর্পোরেট কমিউনিকেশন ও পার্টনারশিপ প্রধান শামীমা আক্তার।
Comments