মূল মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণার পরেও কেন শ্রমিক বিক্ষোভ

এরমধ্যে গাজীপুরে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। বুধবার সংঘর্ষের মধ্যে এক শ্রমিকের মৃত্যুও হয়েছে।
পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ছবি: স্টার

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই বিক্ষোভ করছেন দেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা। শ্রমিকরা সর্বনিন্ম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসলেও, গত মঙ্গলবার সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণা করে সরকার।

কাঙ্ক্ষিত ঘোষণা না পেয়ে সরকারের ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে শ্রমিকদের একটি অংশ। প্রতিবাদে আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশের আহ্বান করেছে আন্দোলনরত শ্রমিক সংগঠনগুলোর জোট 'মজুর বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন'।

এরমধ্যে গাজীপুরে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। বুধবার সংঘর্ষের মধ্যে এক শ্রমিকের মৃত্যুও হয়েছে।

শ্রমিক নিহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে দমন-পীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন শ্রম দপ্তর ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবারও নিয়মমাফিক কাজে যোগ দেওয়ার পর ফের সড়কে নেমে পড়েন গাজীপুরের বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা। এর পরপরই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উভয় পাশের পোশাক কারখানাগুলোয় একদিনের ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। দুপুরের পর থেকে কোনাবাড়ী এলাকাতেও এ বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে।

বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে 'মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন জোট'-এর আহ্বায়ক তাসলিমা আখতার, মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি এবং বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঙ্গে।

মজুরি বৃদ্ধির দাবি: আশুলিয়ায় কাজে যোগ দেয়নি অন্তত ৩০ কারখানা শ্রমিক
ছবি: সংগৃহীত

তাদের ভাষ্য, নতুন মজুরির ঘোষণা শ্রমিকদের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারেনি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে নতুন ঘোষিত মজুরিকে যথেষ্ট বলে মনে করছেন না তারা। পাশাপাশি মজুরি প্রত্যাখ্যান করা বিক্ষোভরত শ্রমিকদের দমনে যেভাবে শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে, তাতে পুরো বিষয়টা আরও বেশি জটিল হয়ে পড়ছে।

শ্রমিকদের নতুন এই মজুরি কার্যকর হওয়ার কথা আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে। সর্বনিম্ন মজুরি বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমিকদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে ছিল, মজুরির ৬৫ শতাংশ মূল মজুরি ধরা, সাতটির বদলে পাঁচটি গ্রেড করা এবং বছরে ১০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি। একইসঙ্গে শ্রমিকদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা চালু করার দাবিও ছিল তাদের।

তবে মঙ্গলবারের ঘোষণায় বার্ষিক পাঁচ শতাংশ মজুরি বাড়ানোর পাশাপাশি পাঁচটি গ্রেড করা হলেও রেশনিংয়ের ব্যবস্থার কথা বলা হয়নি। এর বদলে শ্রমিকদের পরিবারপ্রতি একটি করে টিসিবি কার্ড দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে তাসলিমা আখতার বলেন, 'গত এক বছর ধরে আমরা আন্দোলনের মধ্যে ছিলাম। বিশেষ করে নতুন মজুরি বোর্ড হওয়ার পর থেকেই আমরা বলে আসছিলাম যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির মতো সমস্যাগুলোর কারণে শ্রমিকরা কোনোভাবেই তাদের জীবন চালিয়ে নিতে পারছেন না। তাই এটা দ্রুত করা দরকার এবং ২৫ হাজার টাকার যে দাবি সেটা বিবেচনায় রাখা দরকার।'

'আমরা এটাও মনে করি, আমাদের মালিকদের যে সামর্থ্য এবং এই শিল্পের যে বিকাশ হয়েছে সেই জায়গা থেকে মালিকদের পক্ষ থেকে সেটা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তারা প্রথমে ১০ হাজার ৪০০ টাকা প্রস্তাব করলেন, পরে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করার ঘোষণা করলেন। এটা আসলে শ্রমিকদের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে না। এটা দিয়ে চলাও কঠিন। সে কারণেই শ্রমিকরা তাদের দাবি জানিয়ে যাচ্ছে।'

আইন অনুসারে, মজুরি বোর্ডের মজুরি নির্ধারণের ঘোষণার পর ১৪ দিনের মধ্যে সেটি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করতে হয়। এরপরের ১৫ দিনের মধ্যে মজুরি নিয়ে আপত্তি তোলার সুযোগ আছে।

তাসলিমা আখতার বলেন, 'এখনো গেজেট হয়নি। আমরা আশা করব এই গেজেট হওয়ার আগে মজুরি বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করা হবে।'

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা যে জোটটির প্রতিনিধিত্ব করছেন তাসলিমা, তাতে থাকা সংগঠনগুলো হচ্ছে—গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন, ওএসকে গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, জাতীয় সোয়েটার গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, গার্মেন্টস শ্রমিক সভা ও গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।

তাসলিমার ভাষ্য, 'এটা একটা দর কষাকষির জায়গা। শ্রমিকদের মজুরি দাবি করা কিংবা প্রত্যাখ্যান করা দুটোই গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আমরা যদি প্রত্যাখ্যান করি, আর সে কারণে আমার ওপর হামলা, নির্যাতন, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, গুলি চলে সেটা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কিন্তু প্রায় সবগুলো শ্রমিক এলাকায় এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। এটাকে কোনো সমাধান বলে আমরা মনে করি না।'

'আমরা মনে করি শ্রমিকদের দাবি পুনর্বিবেচনা করে তা তাদের আকাঙ্ক্ষার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারলেই বিষয়টির সমাধান সম্ভব', বলেন তিনি।

তাসলিমার অভিযোগ, শ্রমিক এলাকাগুলোতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে ডিবি পুলিশ। ফোন করে হুমকি দিচ্ছে। এটা বিষয়টাকে আরও ঘোলাটে করে তুলছে।

চলতি বছরের এপ্রিলে মজুরি বোর্ড গঠনের পর পরের ৬ মাসের মধ্যে মজুরি নির্ধারণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নির্ধারণ করতে নভেম্বর পর্যন্ত সময় লেগেছে। এই সময়ের মধ্যে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধি এবং সরকারের মধ্যে অন্তত ছয়টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি।

ময়মনসিংহ মহাসড়কে শ্রমিক বিক্ষোভ
গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি: স্টার ফাইল ছবি

রনির ভাষ্য, বৈশ্বিক মন্দাসহ সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে শ্রমিকদের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ না হলেও এটি 'মন্দের ভালো'। এ কারণেই এটি মেনে নেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রনি বলেন, 'শ্রমিকরা আমাকে বলেছেন যে রেশনিং ব্যবস্থাটা চালু হলে তাদের সমস্যা খানিকটা হলেও কমবে। বিষয়টি নিয়ে এখনো কথা বলার সুযোগ আছে। আমরা সেটা বলব।'

তিনি আরও বলেন, 'মালিকরা কোনোভাবেই সাড়ে ১২ হাজার টাকার বেশি দিতে রাজি হননি। আর সর্বনিম্ন যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে তা পাবেন কারখানার সর্বনিম্ন পদ অর্থাৎ হেলপার কিংবা সহযোগী হিসেবে যারা কাজ করেন তারা। এই খাতের ৪০ লাখ শ্রমিকের মধ্যে হেলপারের সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি নয়। অটোমেশন হওয়ার পর অনেকে সহযোগী রাখে না। কোথাও কোথাও এটা মোট শ্রমিকের মাত্র ৫ শতাংশ। বিপরীতে অপারেটর পদে থাকা বেশি সংখ্যক শ্রমিকরা এখন ১১ হাজার-সাড়ে ১১ হাজার টাকা মজুরি পাচ্ছেন, ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়ন হলে তারা ১৪ হাজার ৮০০ টাকার মতো পাবেন।'

এই শ্রমিকনেতার বক্তব্য, 'প্রথমে মালিকরা যে ১০ হাজার ৪০০ টাকা সর্বনিম্ন মজুরির প্রস্তাব করেছিলেন তা আমরা মানিনি। এখন নতুন কিছু সংযোজন-বিয়োজন করতে হলে আমরা সেটা করব। আমরা এখন শ্রমিকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানাব। যেহেতু এটা রপ্তানিমুখী শিল্প, ক্রেতারা যেন বিমুখ না হন। সামনে বড়দিন। অনেক শিপমেন্ট যাওয়ার কথা আছে।'

বিষয়টি নিয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের পর্যবেক্ষণ হলো, 'প্রথমত মজুরি বোর্ডের প্রক্রিয়াগত দুর্বলতা থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। এই দুর্বলতার শুরু শ্রমিক প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রক্রিয়া থেকে। প্রায়শই এই জায়গাটিতে দেখা যায় যে, সরকারপক্ষীয় কিংবা দলীয় ‍যিনি থাকেন তেমন কাউকে সিলেকশনের একটা প্রবণতা থাকে। মালিকদের সঙ্গে এক ধরনের পরিচিতি রয়েছে এমন কাউকে নেওয়ার প্রবণতা থাকে। ফলে শুরুতেই ত্রিপক্ষীয় আলোচনার বিষয়টি ওখানে দ্বিপক্ষীয় হয়ে যায়।'

'সেই দুর্বলতার জায়গা থেকে যে শ্রমিকরা বাইরে থাকেন তারা সবসময় এক ধরনের অনিশ্চয়তায় ভোগেন। কেবল শ্রমিক প্রতিনিধির ওপর নির্ভর করে তারা থাকতে পারেন না। তাই সমান্তরালভাবে বাইরে থেকেই তাদের ভয়েসটা রেইজ করতে হয়', বলেন তিনি।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'দেখা যায় ভেতরের আলোচনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জানা যায় না। এগুলো ট্রান্সপারেন্ট না, উন্মুক্ত না এমন একটা অভিযোগ থাকে। এসব কারণে বাইরের শ্রমিক সংগঠনগুলো তাদের মতো করে একটা অবস্থান নেয়।'

'এবার কিছুটা পজিটিভ বিষয় হচ্ছে, শ্রমিকপক্ষের ভয়েসগুলো মোটামুটি একরকম ছিল। মজুরি বোর্ডেও যিনি ছিলেন তিনিও কাছাকাছি জায়গায় থেকে ভয়েস রেইজ করেছেন। কারও ২৫ হাজার দাবি ছিল, কারও ২৩ হাজার ছিল, কারও ২২ হাজার ছিল। আর বোর্ডে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা দেওয়ার কথা বলেছেন। আবার সিপিডিসহ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের মতো করে প্রস্তাবনা দিয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এসব থেকে শ্রমিকদের মধ্যে এক ধরনের একটা বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে যে, মজুরি যথেষ্ট মাত্রায় বৃদ্ধি না হলে তাদের যে চলবে না—সেক্ষেত্রেও তাদের একটা জনসমর্থন আছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে মালিকপক্ষের প্রথম যে প্রস্তাবনা আসলো, সেখানে যে ১০ হাজার ৪০ টাকার প্রস্তাব দেওয়া হলো তাতে তারা হতাশ হলেন। সেই হতাশার কারণেই তারা রাস্তায় বেরিয়ে আসলেন এবং দাবি-দাওয়াগুলো তুলে ধরলেন।'

গোলাম মোয়াজ্জেমের বক্তব্য, 'বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতে যেহেতু ট্রেড ইউনিয়ন কালচারটি গড়ে উঠতে দেওয়া হয়নি, সেহেতু শ্রমিক সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে কোনো দ্বিমত তৈরি হলে, কোনো অসন্তোষ তৈরি হলে সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করার জন্য মালিকপক্ষ ও সরকার কোনো উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম পায় না। তেমন পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা যারা বাইরে চলে আসেন, তারা তাদের মতো করে দাবির কথা জানান। কিন্তু মালিকপক্ষ কাদের সঙ্গে কথা বলে এগুলো সমাধান করবে, তা ভেবে পায় না।'

'এটা না পেয়ে তারা বিষয়টাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দেন। অথচ এটা আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত কোনো বিষয় না। নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যাও না। এটা শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত বিষয়, অসন্তোষের বিষয়', যোগ করেন তিনি।

এটাকে আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা হিসেবে দেখে শিল্প পুলিশকে ব্যবহার করে অথবা শহরের পুলিশকে ব্যবহার করে যখন সমাধানের চেষ্টা করা হয় তখন শ্রমিকরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, 'তখন শ্রমিকরা আরও অসহায় বোধ করতে থাকেন। এভাবে শ্রমিকদের সমস্যাগুলোকে আরও দূরবর্তী অবস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।'

এমন একটি পরিস্থিতির উদাহরণ দিয়ে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'এবার প্রথম পর্যায়ে যখন শ্রমিকদের অসন্তোষের বিষয়টি টের পাওয়া গেল তখন আরও বেশি পরিমাণে ফোর্স নামানো হলো। মালিকদের দ্বিতীয় প্রস্তাব দেওয়ার আগেই। তাতে শ্রমিকদের কাছে তো এই বার্তা যেতেই পারে যে- দ্বিতীয় দফায় মালিকরা যে প্রস্তাব দেবেন তাতেও তাদের জন্য কিছু নেই।'

'ব্যাপারটা এখনো সেই জায়গাটিতেই রয়ে গেছে। শ্রমিকরা হয়তো ভাবতেই পারছেন না যে বিষয়টা কোনো গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছাতে পারে। অনিশ্চয়তা থেকেই গেছে। তাই তারা রাস্তা ছাড়ছেন না। এর ভেতর গুলি হলো। একজন শ্রমিক মারা গেলেন। এই ঘটনাগুলো মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের যে ইতিবাচক দিক থাকার কথা তার ঠিক উল্টো বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে।'

এমন একটি পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দুটি জিনিসের প্রতি নজর দেওয়ার তাগিদ দেন গোলাম মোয়াজ্জেম। বলেন, 'একটা হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহার কমানো এবং সরকার-মালিকপক্ষ মিলে জাতীয় পর্যায় থেকে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক আলোচনার ব্যবস্থা করা, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা।'

এগুলো করার পাশাপাশি অবশ্যই শ্রমিকদের জন্য যতটুকু প্রদেয় হতে পারে তার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন এই গবেষক। এই কাজে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সংযুক্তির ওপরেও জোর দেন তিনি।

অবশ্য গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমি গার্মেন্টস শ্রমিকদের বলব, যেটা (মজুরি) বাড়ানো হয়েছে সেটা নিয়েই তাদের কাজ করতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh foreign exchange reserves decline

No let-up in reserves slide

Bangladesh’s foreign exchange reserves have been falling since September 2021 despite a series of government initiatives to reverse the trend.

13h ago