পদ ছাড়া পদোন্নতি বন্ধে সরকারের প্রতি আহ্বান

ছবি: সংগৃহীত

'ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে পদ না থাকার পরও যাদের কয়েকমাস পরপর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি হয়, তা বন্ধ করতে হবে। দুয়েকটি ক্যাডার এই সুবিধা পায় আর অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা বঞ্চিত হয়, যা গ্রহণযোগ্য নয়। একইসঙ্গে কোটামুক্ত উপসচিব পদোন্নতির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।'

আজ শনিবার আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের উদ্যোগে রাজধানীর খামারবাড়িস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে 'জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রত্যাশিত সিভিল সার্ভিস' শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সভায় সিভিল সার্ভিস সংস্কারের মাধ্যমে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ওমর ফারুক দেওয়ানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, একই দেশে একটি ক্যাডারের কর্মকর্তা পদ না থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি পাবে, আর অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদ থাকা সত্ত্বেও পাবে না, এটা আধুনিক প্রশাসন ব্যবস্থা হতে পারে না। এটা প্রশাসন ক্যাডারের ইচ্ছাকৃত সৃষ্ট জটিলতা ও ঔপনিবেশিক মনোভাব বলে মনে করেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সেজন্য এ অনিয়ম দূর করা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব।

'কার্যকর জনসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে স্ব-স্ব ক্যাডারের অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তারা পদায়িত করতে হবে' এমন দাবি করে বক্তারা বলেন, স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ে পদায়িত না করে বর্তমানে কৃষি ক্যাডার থেকে উপসচিব পুলে যাওয়া কর্মকর্তাকে নৌপরিবহনে, শিক্ষা ক্যাডার থেকে থেকে যাওয়া কর্মকর্তাকে পানিসম্পদে, স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে পদায়িত করে দুর্নাম করা হচ্ছে যে তারা কর্মদক্ষ নন। এর ফলে পুলের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হচ্ছে, জাতি অভিজ্ঞ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, সরকারের প্রায় সব সেক্টরে প্রশাসন ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণ থাকায় সার্ভিসে পেশাদারিত্ব মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং সৃষ্ট আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অব্যবস্থাপনার ফলে সেক্টরগুলো কাঙ্ক্ষিত জনসেবা নিশ্চিত করতে পারছে না। বৈষম্যহীন জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কর্মকর্তার দ্বারা পরিচালনা এবং কোটামুক্ত মেধাভিত্তিক উপসচিব পুল অত্যন্ত জরুরি বলে বক্তারা মত ব্যক্ত করেন।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও কলামিস্ট ফিরোজ আহমেদ, অধ্যাপক নাসরিন বেগম, কৃষিবিদ আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ ড. শাহজাহান সাজু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এসসিবিএ সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুব, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদেকুর রহমান সানি।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, সিনিয়র সার্ভিস পুলের (উপসচিব পুল) পদগুলো কোনো নির্দিষ্ট ক্যাডারের নয়। সিনিয়র সার্ভিসেস পুল (এসএসপি) অর্ডার, ১৯৭৯ অনুযায়ী অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে এসব পদে নিয়োগের কথা থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে কোটা পদ্ধতি চালু রেখেছে প্রশাসন ক্যাডার, যা মেধাভিত্তিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রগঠনে মারাত্মক অন্তরায়।

'প্রশাসন ক্যাডারের কিছু কর্মকর্তা গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ভুল, আংশিক, রঞ্জিত তথ্য সম্বলিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে' উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, 'একটা ক্যাডারের বিরুদ্ধে যখন অবশিষ্ট সব ক্যাডারের কর্মকর্তারা এক হয়ে অভিযোগ করেন, বঞ্চনা ও অধিকার হরণের কথা বলেন, তখন তা যে গুরুতর, সেটা সরকারকে অনুধাবন করতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
education in Bangladesh

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

13h ago