শত কোটি টাকা ব্যয়ে অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ অযৌক্তিক: আনু মোহাম্মদ

ফাইল ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি প্রশাসনিক ভবন থাকার পরও 'অধিকতর উন্নয়ন' প্রকল্পের আওতায় ১০ তলা বিশিষ্ট আরও একটি প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতিকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আসমা নাসরীনের সই করা এক চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
তবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাতে পারছেন না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, স্থায়ীভাবে এই ভবন নির্মাণের অনুমোদন বাতিল করা হোক। 

অন্যদিকে, অনেকে বলছেন, অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় না করে এই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেওয়ায় সমীচীন হবে।

জাবিতে বিদ্যমান প্রশাসনিক ভবনের ২০০৮ সালের নকশা। নকশার বাম দিকের চিহ্নিত অংশটুকুর কাজ শেষ হয়েছে। নকশার বাকি অংশটুকু আর নির্মাণ করা হয়নি।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ আনু মোহাম্মদ বলেন, 'মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে আমরা খুশি। তবে, সত্যিকার অর্থে আমরা তখনই মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ দেব, যখন স্থায়ীভাবে এই প্রশাসনিক ভবনের অপ্রয়োজনীয়তার কথা তারা উপলব্ধি করবে। রাষ্ট্রের শত কোটি টাকা রক্ষার স্বার্থে এই অপ্রয়োজনীয় ভবনটি নির্মাণের কাজ স্থায়ীভাবেই বাদ দেওয়া অধিক যুক্তিযুক্ত, সাময়িকভাবে নয়।' 

শিক্ষাবিদ আনু মোহাম্মদ। ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও বলেন, 'একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প কাদের মাধ্যমে নির্ধারিত হচ্ছে, কারা এসব ভাঙছে-গড়ছে এটা জানা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঠিকাদার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে কি না সেটাও তদন্ত করা দরকার।'

অন্যদিকে, বিদ্যমান প্রশাসনিক ভবনটির অপূর্ণাঙ্গতাকে ইঙ্গিত করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের আহ্বায়ক অধ্যাপক রাইহান রাইন বলেন, 'অপ্রয়োজনীয় ভবনটি নির্মাণ না করে আসলেই যদি প্রয়োজন থাকে সেক্ষেত্রে বিদ্যমান ভবনটি অল্পকিছু টাকায় সম্পন্ন করা অধিক যুক্তিযুক্ত। তা ছাড়া, উচ্ছ্বসিত হওয়ার তেমন সুযোগ নেই। কারণ এই মহাপ্রকল্পে আরও অনেক ঝামেলা আছে।'

অধ্যাপক রাইহান রাইন। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার বা মন্ত্রণালয়ের এমন বিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানায়। তবে, জাহাঙ্গীরনগরে বিদ্যমান প্রশাসনিক ভবনটিও পূর্ণাঙ্গ নয়। তদারক কমিটি বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে পূর্ণাঙ্গ একটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করাটা যুক্তিযুক্ত মনে করলে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভালো হতে পারে। তারা যদি মনে করে প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে এমন ভবনের দরকারও নেই।' 

আক্তারুজ্জামান সোহেল, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

তবে, অপচয় না করে এই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেওয়া সমীচীন বলে মনে করছেন কেউ কেউ। 

এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অমর্ত্য রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আশা করেছিলাম স্থায়ীভাবে এই অপ্রয়োজনীয় ভবনের অনুমোদন বাতিল করা হবে। সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, বিদ্যমান প্রশাসনিক ভবনটি অসম্পূর্ণ। প্রয়োজন থাকলে সেটা পূর্ণাঙ্গ করা যেতে পারে ৷ এই ভবনটি স্থায়ীভাবেই বাদ দেওয়া দরকার। এই টাকা প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত যাক। খরচ করার স্বার্থে অপ্রয়োজনীয় খাতে এত টাকা খরচ করার কোনো প্রয়োজন নেই।' 

অমর্ত্য রায়, সাংগাঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাবি সংসদ। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. নাসির উদ্দীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের কোনো মতামত নেই। উনারা এসে তাদরকি করবেন। তারপর তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই আমরা মেনে নেব।'

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন করে ও টেক্সট দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি প্রশাসনিক ভবন থাকার পরও প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ১০ তলা আরেকটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল।

মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই অপরিকল্পিতভাবে চলমান এসব উন্নয়নে কোটি কোটি টাকার অপচয়সহ তথ্য গোপনের মতো গুরুতর সব অভিযোগ উঠেছে চলমান এই প্রকল্পে। 

 

Comments

The Daily Star  | English
price hike of essential commodities in Bangladesh

Essential commodities: Price spiral hits fixed-income families hard

Supply chain experts and consumer rights activists blame the absence of consistent market monitoring, dwindling supply of winter vegetables, and the end of VAT exemptions granted during Ramadan.

13h ago