ছুটিতে বিদেশে থেকেও ভর্তি পরীক্ষার সম্মানী নিয়ে সমালোচনায় চবি উপাচার্য

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোচনা-সমালোচনা যেন থামছেই না। উপাচার্যের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারীর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় তাকে বাঁচাতে উপাচার্যের অবস্থান ছিল 'বিতর্কিত'। এবার গত আগস্টে অনুষ্ঠিত ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় ২ দিন ছুটিতে থেকেও তিনি পরীক্ষার সম্মানী বিল তুলেছেন। পরে অবশ্য শিক্ষকদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলে তা আবার ফেরত পাঠান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোচনা-সমালোচনা যেন থামছেই না। উপাচার্যের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারীর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় তাকে বাঁচাতে উপাচার্যের অবস্থান ছিল 'বিতর্কিত'। এবার গত আগস্টে অনুষ্ঠিত ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় ২ দিন ছুটিতে থেকেও তিনি পরীক্ষার সম্মানী বিল তুলেছেন। পরে অবশ্য শিক্ষকদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলে তা আবার ফেরত পাঠান।

উপাচার্যের দেখানো পথেই হেঁটেছেন তারই দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. সাহাব উদ্দিন। উপাচার্যের সঙ্গে গত ২২ আগস্ট ক্যাম্পাস থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ভ্রমণে গিয়েও তিনি নিয়েছেন ভর্তি পরীক্ষার সম্মানী বিল। একইসঙ্গে ভ্রমণ ভাতাও তুলেছেন। তার দাবি, বিষয়টি জানার পর সেই অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে ফেরত দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হয় গত ১৬ আগস্ট থেকে. যা ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে। উপাচার্য শিরীণ আখতার পদাধিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা কমিটির (কোর কমিটির) প্রধান।

রেজিস্ট্রার অফিসের জেনারেল শাখার তথ্যমতে, অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত জরুরি কাজ সমাধান করার জন্য গত ৩০ আগস্ট সকালে ঢাকার জন্য চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন এবং কাজ শেষে চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্যে গত ৩১ আগস্ট ঢাকা ত্যাগ করেন। তার অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে ভারপ্রাপ্ত ভিসি হিসেবে রুটিন কাজ পালন করেন।

তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামক শাখা থেকে প্রাপ্ত নথিতে দেখা যায়, ভিসি শিরীণ আখতার ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর ২ দিন সকাল-বিকেল ৪ শিফটের ভর্তি পরীক্ষার সম্মানী বিল হিসেবে প্রতি শিফটের জন্য ৭ হাজার ৯১০ টাকা করে উত্তোলন করেছেন। ডি-১ উপ-ইউনিটের ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের অধীনের ব্যবহারিক ভর্তি পরীক্ষার বিল হিসেবে তিনি এই বিল উত্তোলন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা শেষে ৩ সেপ্টেম্বর ভিসি দেশে ফিরে আসেন।

'জাতির জনকের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেও নিয়েছেন বিল'

প্রশাসনিক ভবন থেকে প্রাপ্ত আরেক নথিতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গত ২১ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার টুঙ্গি পাড়ায় যান চবি উপাচার্য। সেখানে ২২ আগস্ট সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মশাল প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে যোগদান করে ২৩ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কাজে যান। ২২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকলেও সেদিনের ভর্তি পরীক্ষার ২ শিফটের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে ৭ হাজার ৯১০ টাকা করে প্রতি শিফটের বিল নিয়েছেন। একইসঙ্গে তার দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার সাহাব উদ্দিনও উপাচার্যের সঙ্গে ঢাকা থাকলেও ২ শিফটের জন্য বিল নিয়েছেন ৩ হাজার ১১০ টাকা করে। একইসঙ্গে তিনি আলাদা ভ্রমণ ভাতাও (ট্রাভেলিং অ্যালাউন্স) নিয়েছেন ৪ হাজার ১২ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিল দেওয়া হয় ভর্তি পরীক্ষার পর। এই বিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে নির্দিষ্ট হারে বণ্টন করা হয়। প্রত্যেক অনুষদের ডিন বিলে সই করলে তার অর্থ নির্দিষ্ট হারে সবার মাঝে বণ্টন হয়।

বিষয়গুলো নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপাচার্য অনেক কাগজে সই করেন। ভুলে তিনি সেগুলো সই করেছিলেন। আমরা বিল বণ্টনের পর যখন বিষয়টি তিনি জেনেছেন, তখন আবার তা ফেরত দিয়েছেন।'

'সহকারী রেজিস্ট্রার সাহাব উদ্দিন ফেরত দিয়েছেন কি না, আমি জানি না। আমি ছুটিতে। তবে, উপাচার্য বিল ফিরিয়ে দিয়েছেন', বলেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাহাব উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি আপনাকে কে বলেছে? কথা-বার্তা ওঠার পর আমি ভর্তি পরীক্ষার বিলগুলো ফেরত দিয়ে দিয়েছি। ওটা ভুলে চলে এসেছে আমার কাছে। আমি ফেরত দিয়ে দিয়েছি টাকাগুলো। এটা নিয়ে তো এখন আলোচনার কিছু নেই।'

কবে ফেরত দিয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'তারিখ ঠিক মনে নেই। দেখে জানাতে হবে।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদের ডিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দায়িত্বে না থেকেও টাকা তোলার বিষয়টি খুব অন্যায়। কথা ওঠার পর ভিসি তা ফেরত দিচ্ছেন। যদি কথা না উঠত, তাহলে তা ফেরত দেওয়ার প্রশ্নও আসত না। সেগুলো ওভাবেই থাকত, কেউ জানত না।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এসএম মনিরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যে পরিমাণ টাকা আসার কথা, তার থেকে বেশি আসায় তখন তিনি (ভিসি) সেটা দেখতে বলেছেন। পরবর্তীতে তো সেই টাকা ফেরতও দিয়েছেন। তিনি বিষয়টি জানতেন না, যখন জেনেছেন তখন ফেরত দিয়েছেন। এটার মাধ্যমে তিনি তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। এখন সমালোচকরা তো অনেক কিছুই বলতে পারেন।'

এ বিষয়ে জানতে চবি উপাচার্যকে ৪ বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। ফোন না ধরার বিষয়ে রেজিস্ট্রার ড. এসএম মনিরুল ইসলাম বলেন, 'ম্যাডাম অসুস্থ থাকায় তিনি হয়তো ফোন ধরছেন না।'

Comments