এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ হলো শাবিপ্রবির ভর্তি ফি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) স্নাতক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি ১ বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। ফাইল ছবি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) স্নাতক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি ১ বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে।

২০২০-২১ সেশনে যে ভর্তি ফি ছিল ৮ হাজার ৬০ টাকা, তা এবারের ২০২১-২২ সেশনের ভর্তিচ্ছুদের জন্য বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।

বাড়তি ফির ফলে এই সেশনে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনেকেই আর্থিক সংকটের কারণে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়তে পারেন বলে বলছেন শিক্ষার্থীরা।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় সংকোচন ও গুচ্ছভুক্ত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফির সঙ্গে সমন্বয় করতেই একাডেমিক কাউন্সিল এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা শেষে প্রাথমিক ভর্তি কার্যক্রম সম্প্রতি শেষ করেছে শাবিপ্রবি। এতে 'এ', 'বি' ও 'সি' ইউনিটে মোট ১ হাজার ৬৬৬টি আসনের মধ্যে ১০৮টি আসন খালি রেখেই চূড়ান্ত ভর্তির তারিখ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আগামী ২৩ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চূড়ান্ত ভর্তি কার্যক্রম চলবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক ভর্তির সময় জমা দেওয়া ৫ হাজার টাকা বাদে বাকি ১০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদার বলেন, 'ভর্তি ফি বিষয়ে ভর্তি কমিটির কোনো সিদ্ধান্ত থাকে না। একাডেমিক কাউন্সিলর সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে যুক্তিসঙ্গতভাবেই ভর্তি ফি নির্ধারণ করে আমাদের অবগত করেন।'

তিনি বলেন, 'বর্ধিত ফিয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ অন্যান্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফি এর থেকেও অনেক বেশি।' 

এ সেশনে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থী বলেন, 'প্রাথমিক ভর্তির সময় ৫ হাজার টাকা জমা নেওয়া হয়েছে। গত বছর ভর্তি ফি ৮ হাজার ৬০০ টাকা ছিল, তাই এবারও তার কাছাকাছি থাকবে বলে ধারণা ছিল। কিন্তু এক লাফে ভর্তি ফি দ্বিগুণ করায় আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারে চাপ পড়বে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত।'

বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তিচ্ছু আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'ভর্তি ফি দ্বিগুণ করা হবে, এ বিষয়টি প্রাথমিক ভর্তির সময় বলা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে হঠাৎ করেই ফি বাড়ানো হয়েছে, যা কখনোই শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত হতে পারে না।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ভর্তি ফির হিসেবে শাবিপ্রবি নিচের দিকে। সরকার থেকে নির্দেশনা আছে ব্যয় সংকোচন করার ও আয় বাড়ানোর। তা ছাড়া এ ফি দিয়েই আরও অনেকগুলো বিষয় অ্যাকোমডেট করতে হয়। তাই বাস্তব অবস্থার নিরীখেই ভর্তি ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'বিশ্বের কোনো দেশেই এত কম টাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় না। তা ছাড়া দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এর চেয়েও অনেক বেশি টাকা ভর্তি ফি রাখা হয়। আমি মনে করি না ভর্তি ফি বৃদ্ধি অযৌক্তিক হয়েছে। তবে কিছু শিক্ষার্থীর প্রাথমিকভাবে সমস্যা হতে পারে।'

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে ভর্তি ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জুনতলা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে গোলচত্বরে যায়। সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে মো. তানভীর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ওসমান গণি, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব আহমেদ জয়, গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব আহমেদ তাসিন।

ওসমান গণি বলেন, 'অগণতান্ত্রিক ও অযৌক্তিকভাবে ভর্তি ফি বাড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত বছর ভর্তি ফি ছিল সাড়ে ৮ হাজার টাকা। এই বছর তা এক লাফে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে, যা একজন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থীর জন্য বোঝাস্বরূপ। এই অবস্থা চলতে থাকলে সমাজের শিক্ষার্থীদের একাংশের উচ্চশিক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে, যা অগণতান্ত্রিক।'

Comments

The Daily Star  | English

Foreign investors returning to stock market

After a long time, foreign investors are showing renewed interest in buying shares of listed companies in Bangladesh as they hope good governance will return to the local stock market following the recent political changeover.

11h ago