৩৭ দফা দাবিতে কারমাইকেল কলেজ তৃতীয় দিনের মতো শাটডাউন, বুধবার রেল ও সড়ক অবরোধ

নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, হলের সংখ্যা বৃদ্ধি, আধুনিক ল্যাব-স্মার্ট ক্লাসরুম নির্মাণ ও পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগসহ ৩৭ দফা দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো 'কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচি পালন করেছেন রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে এসে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েছেন, আলোচনা না হওয়া পর্যন্ত শাটডাউন কর্মসূচি চালবে। পাশাপাশি, আগামীকাল বুধবার তারা রেল ও সড়কপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন।
তৃতীয় দিনের কর্মসূচিতে সাবেক শিক্ষার্থী, বিভিন্ন ছাত্র, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী-সংগঠকরাও একাত্মতা পোষণ করেন।
শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—কলেজের সব খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি; নতুন একাডেমিক ভবন ও মানসম্মত মিলনায়তন নির্মাণ; অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে ক্যাম্পাস দখলমুক্ত করা; সৌন্দর্যবর্ধন ও রাস্তা প্রশস্তকরণ; হলের সংখ্যা বৃদ্ধি ও পুরোনো হলগুলোর সংস্কার; অন্তত ছয়টি বাস সরবরাহ; আধুনিক ল্যাব ও স্মার্ট ক্লাসরুম রূপান্তর; পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ ও আইসিটি সুবিধার সম্প্রসারণ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এসব সমস্যার কথা একাধিকবার সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও, কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শিউলী আক্তার বলেন, 'আমরা অনেকদিন ধরে এই সংকটগুলোর কথা বলছি, কিন্তু কেবল আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে সবাই মিলে আন্দোলনে নামতে হয়েছে।'
আরেক শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, 'গত বছর ৫ আগস্ট থেকে আমরা আন্দোলন করে আসছি। ১০ মাস কেটে গেলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এবার আমরা আর পিছিয়ে যাব না। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি নেব।'
সাবেক শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'এই আন্দোলন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে নয়, এটি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নের সম্মিলিত কণ্ঠ।'
আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মঙ্গলবার দুপুরে আলোচনায় বসেন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
আলোচনা শেষে তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো আমরা লিখিত আকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
বরাবর পাঠিয়েছি। কিছু দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা চাই শিক্ষার্থীরা দ্রুত শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসুক। কলেজ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে আন্তরিক। যেসব দাবি আমাদের এখতিয়ারভুক্ত, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।'
গত রোববার থেকে শুরু হওয়া শাটডাউন কর্মসূচির প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা কলেজ রোডের লালবাগ এলাকায় তিন ঘণ্টা রেল ও সড়কপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
তবে প্রশাসনের অনুরোধে তারা রাস্তায় ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু দাবি বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় আন্দোলন তৃতীয় দিনে গড়ায়।
Comments