নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ, রাবি ভিসির বাসভবনে তালা ঝোলালেন সাবেক ছাত্রদল নেতা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উর্দু বিভাগে নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষের জেরে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা ভিসির বাসভবনে তালা দিয়েছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বুলবুল রহমানকে ভিসির বাসভবনে তালা দিতে দেখা যায়।
তাদের অভিযোগ, বিজ্ঞপ্তিতে তিনজন নিয়োগ দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও, ছয়জনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এসে তালা খুলে ফেলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গত ৩০ এপ্রিল তিনজন শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেয় উর্দু বিভাগ। এর বিপরীতে ৫৭ জন নিয়োগ প্রত্যাশী আবেদন করেছিলেন। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ৪৭ জনের আবেদন গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। তবে প্রাথমিক শর্ত পূরণ করতে না পারায় বুলবুলের আবেদন বাদ পড়ে।
গত ২ জুন বুলবুল উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। তিনি বলেন, 'তার শিক্ষাবর্ষে উর্দু বিভাগের ফলাফল তুলনামূলক খারাপ হয়েছিল এবং তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথমস্থান অধিকার করেছেন। ফলে নিয়োগের ক্ষেত্রে তার বিষয়টি আমলে নেওয়া উচিত। এ জন্য তিনি রিট করেছেন।'
তিনি আরও অভিযোগ করেন, 'একটি গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা দিতে প্রাথমিক শর্তে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ফলাফলের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে।'
'নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তিনজনের নিয়োগের কথা উল্লেখ থাকলেও ছয়জনকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। ফরিদ স্যারের (প্রোভিসি) সঙ্গে দেখা করে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, ২০২৩ সালের বিজ্ঞপ্তিতে তিনজন এবং ২০২৫ সালের বিজ্ঞপ্তিতে তিনজন—মোট ছয়জনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এমন কথা উল্লেখ ছিল না,' যোগ করেন তিনি।
অনিয়মের অভিযোগ তুলে আরেক নিয়োগ প্রত্যাশী ড. আব্দুল বারী বলেন, 'আমি বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি যে, উর্দু বিভাগে তিনজনের বিজ্ঞপ্তিতে ছয়জনের নিয়োগ হতে যাচ্ছে। কিন্তু ইউজিসির পরিপত্র অনুযায়ী, বিজ্ঞপ্তিতে একজনের বিপরীতে একজনকেই নিয়োগ দেওয়া যাবে৷'
তিনি বলেন, 'এই ছয়জনের ভেতরে দুইজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চারজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী; যেখানে রাবিতেই চারজন পিএইচডি গবেষক নিয়োগপ্রত্যাশী রয়েছেন এবং তাদের সবাইকে বাদ দেওয়া হয়েছে।'
এছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস ও লিখিত পরীক্ষায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও তোলেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও উপউপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার আগে ভিসির বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন বুলবুল রহমান। বুলবুল বলেন, 'তিনজনের বিপরীতে ছয়জন শিক্ষক নিয়োগের অধিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। আমি জানতে পেরেছি যে, সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগের বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। তাই আমি তালা দিয়েছি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, 'সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট সভা হওয়ার কথা। সাবেক এই শিক্ষার্থী সিন্ডিকেট সভা ব্যাহত করতেই উপাচার্যের বাসভবনে তালা দেয়। সে মনে করে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও বাদ পড়েছে। কিন্তু সে বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক হওয়ার আবেদনের প্রাথমিক শর্ত পূরণ করতে পারেনি।'
তিনি আরও বলেন, 'উপাচার্যের বাসভবনে তালা দিয়ে সে অন্যায় করেছে। এমনকি সে আমাদের প্রক্টরিয়াল বডির এক সদস্যের সঙ্গে অসদাচরণ করেছে।'
অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উর্দু বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, 'এটি গোপনীয় বিষয়। সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে কিছুই বলা যাবে না।'
Comments