১৮১ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ১ জন

নীলফামারী স্কুল
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বাইশ পুকুর চরে খালিশা চাপানী ফারহানা রউফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি: আসাদুজ্জামান টিপু/স্টার

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত বাইশ পুকুর চরে খালিশা চাপানী ফারহানা রউফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮১ জন। তাদের জন্য শিক্ষক আছেন একজন।

গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, ১৮১ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৭ ছাত্রী সেদিন স্কুলে উপস্থিত ছিল।

স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধের পর স্কুল খোলায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ব্যাপকভাবে কমে গেছে। শিক্ষকের অভাবে ক্লাস অনিয়মিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বন্ধ প্রায়।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক ২ মাস আগে অবসরে গিয়েছেন। এর এক বছর আগে অপর ২ শিক্ষককে অন্য স্কুলে বদলি করা হয়।

স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী কল্যাণী রানী রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলে, 'স্কুলে শিক্ষক নেই। স্কুলে অলস সময় কাটাতে হয়। স্কুলে না গিয়ে, শিক্ষার্থীরা বাসায় পরিবারের কাজে সাহায্য করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।'

একই শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুন আক্তার ডেইলি স্টারকে বলে, 'করোনায় দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ ছেলে কাজে যোগ দিয়েছে। স্কুল খোলার পর তারা আর ফেরেনি। অন্যদিকে, বেশিরভাগ ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে।'

স্কুলের শিক্ষক সংকট প্রসঙ্গে শিক্ষা নিয়ে কাজ করে এমন এনজিও কর্মকর্তা শাহিন জাহাঙ্গীর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অধিকাংশ শিক্ষক প্রত্যন্ত অঞ্চলে পড়াতে চান না, তাই এই সংকট।'

স্কুলটির একমাত্র শিক্ষক প্রতিমা রানী রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাকে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সব প্রশাসনিক কাজ দেখতে হয়। পিয়ন পদেও কেউ না থাকায় স্কুলের গেট খোলা-বন্ধ করা, জাতীয় পতাকা উত্তোলন—এক কথায় সব কাজ আমাকে করতে হয়। স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি।'

স্কুলটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুমন চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা অভিভাবকদের তাদের সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠাতে সবসময় অনুপ্রাণিত করি। শিক্ষক সংকটের কারণে আমাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার কয়েকজন শিক্ষক ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের অনেকেই চরের স্কুলে বদলি হওয়াকে শাস্তি বলে মনে করেন। চরের স্কুলে কাউকে বদলি করা হলেও, দেখা যায় প্রায়ই তারা নানান অজুহাতে অনুপস্থিত থাকেন।

এ প্রসঙ্গে ডিমলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের দপ্তর থেকে সম্প্রতি দুজন শিক্ষককে ডেপুটেশনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের একজন যোগ দিলেও, অপরজন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এখনো স্কুলে যোগ দেননি।'

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে শিক্ষক ডেপুটেশনে স্কুলে যোগ দিয়েছেন, তিনিও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অনুপস্থিত থাকছেন।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নোবেজউদ্দিন সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। আগামী মাসে নতুন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হলে আরও শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago