বাগেরহাট সরকারি টেকনিক্যাল কলেজ: অধ্যক্ষসহ ৬৮ পদের ৪৫টিই খালি

এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষক-প্রশিক্ষকের অভাবে দুই শিফটের বদলে এক শিফটে ক্লাস চালাতে বাধ্য হচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। বন্ধ হয়ে গেছে ডিপ্লোমা শিক্ষা কার্যক্রম।
বাগেরহাট সরকারি টেকনিক্যাল কলেজ
শিক্ষক-স্বল্পতাসহ নানান সংকটে ডুবে আছে বাগেরহাট সরকারি টেকনিক্যাল কলেজ। ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাটের একমাত্র সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের খেলার মাঠটি বছরের চার মাসই থাকে পানির নিচে। বাকি আট মাস মাঠটি খেলাধুলার উপযোগী থাকলেও শিক্ষক ও প্রশিক্ষক স্বল্পতা, সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, ল্যাব ও আবাসনের অভাবসহ নানা সংকট-সমস্যায় বছরভর ডুবে থাকছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কলেজটিতে একজন অধ্যক্ষ, ট্রেড কোর্সের আট জন প্রধান প্রশিক্ষক, সাত জন প্রশিক্ষক, ১৪ জন জুনিয়র প্রশিক্ষক, আট জন ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর, চার জন ল্যাব সহকারী এবং সাধারণ বিষয়ের জন্য ১৬ জন শিক্ষকসহ মোট ৬৮টি পদ আছে। এর মধ্যে অধ্যক্ষসহ ৪৫টি পদই খালি।

এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষক-প্রশিক্ষকের অভাবে দুই শিফটের বদলে এক শিফটে ক্লাস চালাতে বাধ্য হচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। বন্ধ হয়ে গেছে ডিপ্লোমা শিক্ষা কার্যক্রম।

কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ল্যাব, শ্রেণিকক্ষ ও আবাসন সংকট মেটাতে একটি পাঁচ তলা ভবনের নির্মাণকাজ চলমান আছে। আর শিক্ষক নিয়োগসহ অন্য সমস্যাগুলোর ব্যাপারেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

তবে বাগেরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, কলেজের পক্ষ থেকে শূন্য পদে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের কোনো আবেদনই করা হয়নি।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে ৩ দশমিক ৫০ একর জমির ওপর 'ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ভিটিআই)' নামে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখানে ১৯৯৫ সালে এসএসসি (ভোকেশনাল) এবং ১৯৯৭ সালে এইচএসসি (ভোকেশনাল) পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে কর্তৃপক্ষ।

এরপর ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় 'বাগেরহাট সরকারি কারিগরি বিদ্যালয় ও কলেজ' নামে। তখন থেকে এসএসসি এবং এইচএসসির (ভোকেশনাল) চারটি ট্রেডে শিক্ষার্থীদের যে বিষয়গুলো পড়ানো হয় সেগুলো হলো—কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি, জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন।

২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে চার বছরের ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু হয়, যা ২০১৯ সাল থেকে বন্ধ আছে।

এই মুহূর্তে কলেজটিতে অধ্যক্ষসহ ৪৫টি শূন্য পদের মধ্যে আছে—ছয় জন চিফ ইনস্ট্রাক্টর, পাঁচজন ইনস্ট্রাক্টর, ১১ জন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর, ছয় জন ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর, তিন জন ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ও নয় জন শিক্ষকের পদ । এছাড়া উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, উচ্চমান সহকারী কাম স্টোর কিপার ও দুই জন অফিস সহকারীর পদও শূন্য আছে।

কলেজের শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, এখানকার সাত শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের জন্য কোনো ক্যান্টিন নেই। বড় একটি খেলার মাঠ থাকলেও বছরের চার মাস মাঠ সেটি জলাবদ্ধ থাকে। একসময় এখানে ছাত্রদের জন্য একটি হোস্টেল থাকলেও বর্তমানে সেখানে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই।

কলেজের ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডের দশম শ্রেণির ছাত্র শাফায়েত হোসেন জানান, 'সামান্য বৃষ্টিতেই খেলার মাঠে পানি জমে যায়। আমরা খেলতে পারি না। খাবারের জন্য কলেজের ভেতর কোনো ক্যান্টিন নেই। কলেজের একজন কর্মচারী নিজ উদ্যোগে কিছু ফাস্ট ফুড বিক্রির ব্যবস্থা করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'কারিগরি শিক্ষার মূল ভিত্তি হচ্ছে ব্যবহারিক ক্লাস। শিক্ষকের অভাবে আমাদের সব ব্যবহারিক ক্লাস হয় না। এছাড়া প্র্যাকটিকাল ক্লাসে কোন যন্ত্রাংশ ভেঙে গেলে কিংবা হারিয়ে গেলে তার দাম আমাদেরকেই দিতে হয়।'

কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অমিও কুমার পাল বলছেন, 'নতুন করে তিনটি ক্লাস বাড়ানো হলেও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অন্য সংকট তো আছেই। তারপরেও শিক্ষার্থীদের ঠিকঠাক পড়ালেখার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'

সার্বিক বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. বাদশা মিয়া বলেন, 'নির্মাণাধীন পাঁচ তলা অ্যাকাডেমিক ভবনের কাজ শেষ হলে শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব সংকট দূর হবে। এছাড়া শিক্ষক সংকট ও মাঠের সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ডিপ্লোমা কোর্সটি বন্ধ করা হয়েছে তাদের নির্দেশেই।'

শিক্ষক সংকটের ব্যাপারে জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম সাইদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাগেরহাট সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ কিংবা চাহিদার কোনো তথ্যই জমা দেয়নি। এ বিষয়ে আমরা অবগত না।'

Comments