বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যে ১০ দক্ষতার প্রয়োজন

উচ্চশিক্ষা অর্জনে বিদেশে পাড়ি দেওয়া যেমন আনন্দের, তেমনি উদ্বেগেরও। প্রতিটি পদক্ষেপে সেখানে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়, টিকে থাকার জন্য আত্মপ্রেরণা যোগাতে হয়। এজন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হবে আগে থেকেই, দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পেলেই কাজে লাগাতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেশে পড়াকালীন ১০টি বিষয়ে যোগ্যতা যাচাই করতে পারলে সুবিধা পাওয়া যাবে পরবর্তীতে। 
ছবি: ফ্রিপিক

উচ্চশিক্ষা অর্জনে বিদেশে পাড়ি দেওয়া যেমন আনন্দের, তেমনি উদ্বেগেরও। প্রতিটি পদক্ষেপে সেখানে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়, টিকে থাকার জন্য আত্মপ্রেরণা যোগাতে হয়। এজন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হবে আগে থেকেই, দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পেলেই কাজে লাগাতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেশে পড়াকালীন ১০টি বিষয়ে যোগ্যতা যাচাই করতে পারলে সুবিধা পাওয়া যাবে পরবর্তীতে। 

নেটওয়ার্কিং করা 

ক্যারিয়ারে সফলতা পেতে মানুষের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে সবার আগে। শুধু পরিচিতি নয়, পারস্পরিক পছন্দের ক্ষেত্রের ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। এতে পেশাদার ক্যারিয়ারেও সুবিধা পাওয়া যাবে। তাই বিদেশে পড়তে গেলে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থাকাটা জরুরি। এজন্য শিক্ষক ও সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। যাতে একাডেমিক ও পেশাগত উভয়ক্ষেত্রে পরামর্শ পাওয়া যায়। নতুন গ্রুপ ও ক্লাবে যোগ দিতে হবে। পড়াকালীন চাকরির নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে পরিচয় হলে যোগাযোগ রাখতে হবে। সর্বদা নিজের আওতার বাইরে গিয়ে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করতে হবে। 

যোগাযোগ দক্ষতা

বিদেশে পড়তে গেলে বিভিন্ন দেশের নানা সংস্কৃতির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতে হয়। তাই সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বাধা পেরোতে হবে সবার আগে। নতুন ভাষায় কথা বলা ও লেখার মাধ্যমে অর্জন করতে হবে যোগাযোগ করার দক্ষতা। স্থানীয় ভাষা আয়ত্ত করতে পারলে পাওয়া যাবে বাড়তি সুবিধা। যোগাযোগের দক্ষতা উন্নত হওয়ার পাশাপাশি অর্জিত হয় আত্মবিশ্বাস। এজন্যই নিয়োগকর্তারা যোগাযোগ দক্ষতাকে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী হিসেবে দেখেন। 

ভাষাগত দক্ষতা 

বিদেশে পড়ালেখা করতে চাইলে নতুন ভাষা শিখতেই হবে। কারণ কোনো দেশেই আপনি নিজের মাতৃভাষায় যোগাযোগ করতে পারবেন না। চাকরির বাজারে ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলতে এবং লিখতে পারলে অন্যান্য প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা হতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া, বিদেশে থাকাকালীন নানারকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, তখন ভাষাগত দক্ষতা না থাকলে সমস্যা বাড়তে পারে। নতুন ভাষা জানলে ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ভাষাভাষীদের সঙ্গে সামাজিকীকরণ দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। স্থানীয় ভাষা অন্য সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুবিধা দেবে। 

মানিয়ে নেওয়া 

অভিযোজন ক্ষমতা হলো একজন শিক্ষার্থীর সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক উপাদানগুলোর একটি। বিদেশে পড়ার সময় আপনার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। এটি অর্জন করতে না পারলে প্রতি মুহূর্তে বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সহজে কোনোকিছু মানিয়ে নিতে পারলে চলার পথ সুগম হয় বিধায় শিক্ষার্থীদের আগে থেকেই এটি অর্জনের পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ নতুন দেশে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া, অভিযোজন ক্ষমতা আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার গুরুত্ব উপলব্ধি করতেও সাহায্য করে। 

আন্তঃ-সাংস্কৃতিক দক্ষতা 

বিদেশে অধ্যয়নকালে ব্যক্তিগত সচেতনতা, অন্যান্য সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হয়। আন্তঃ-সাংস্কৃতিক দক্ষতার মধ্যে নতুন ধারণা ও চিন্তা-ভাবনার প্রতি উদারতা গুরুত্ব পায় সবচেয়ে বেশি। কর্মক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক ও সাংস্কৃতিক নিয়ম সম্পর্কে সচেতন কর্মীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। তাই বিদেশ থেকে পড়ে আসা শিক্ষার্থীদের এই দক্ষতা থাকে বিধায় নিয়োগকারীরা চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বেশি যোগ্য মনে করেন। বিদেশে থাকাকালীন অজানা পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে এবং কার্যকরভাবে সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত সীমানার বাইরে যোগাযোগ করতে সক্ষম হলে আন্তঃ-সাংস্কৃতিক দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।  

সমস্যা সমাধানের দক্ষতা 

বিদেশে অধ্যয়ন করলে কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যা শনাক্ত করা ও সমাধানের কৌশল আয়ত্ত হয়। কিছু বাধা অতিক্রম করতে নিজের সহজাত প্রবৃত্তি ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে নিজেরই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগে সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিদেশে থাকাকালীন অভিজ্ঞ দক্ষতা ও কৌশল ব্যবহার করে আত্মবিশ্বাস ও সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা অর্জিত হয়। 

দলগত কাজের দক্ষতা

বিদেশে থাকাকালীন বৈচিত্র্যময় দলের সদস্য ও পরিবেশের সঙ্গে কাজ করার ক্ষমতা অর্জন করা যায়। গ্রুপ প্রজেক্ট ও অ্যাসাইনমেন্টে অন্যদের ধারণা বিবেচনা করার পাশাপাশি নিজের ধারণাও ব্যক্ত করা যায়। আলোচনা করে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার নাগাল পাওয়া যায়, সৃজনশীল সমাধানের পথ উন্মোচিত হয়। তাই অন্যদের সঙ্গে কাজ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। 

আত্মসচেতনতা

নিজের সক্ষমতা ও দুর্বলতা আলাদা করে জানা যায় ভিন্ন পরিবেশে গেলে। এজন্য বিদেশে পড়তে গেলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও নিয়মের সঙ্গে পরিচিত হলে আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি পায়। নতুন দেশে থাকার সময় যেসব অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়, তা স্ব-প্রতিফলিত করতে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আরও ভালোভাবে বোঝার সুযোগ পাওয়া যায়। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কী দরকার, কীভাবে পাওয়া যাবে তা-ও হাতে-কলমে জানা যায়।  

আত্মবিশ্বাস

বিদেশে অধ্যয়ন আপনার আত্মবিশ্বাসকে তখনই বাড়িয়ে তুলবে যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নিজের ক্ষমতার ওপর আস্থা রাখার সক্ষমতা অর্জন হবে।  যেমন: নতুন ভাষা শেখার সময়ও নানা ভুল হয়। তখন নিজেকে গুটিয়ে না নিয়ে ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে। এতে আপনার সীমানা ভেদ হবে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।  

নৈতিকতা 

বিদেশে অধ্যয়ন নেতৃত্বের গুণ বাড়ায়। শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, সততা মেনে চলার জন্য উৎসাহী করে তোলে। নিজের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হতে শেখায়। ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য দক্ষতার বিকাশ ঘটায়। এজন্য নিজের ব্যক্তিত্ব যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে চলতে হবে। অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার সম্মানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আপনার পরিবার ও দেশের নাম। কোনোভাবেই তা নত হতে দেবেন না। 
 

Comments

The Daily Star  | English

Extreme weather events threatening food security

Since May last year, Bangladesh faced more than a dozen extreme weather events -- four cyclones, nine incidents of floods, and multiple spells of heavy rains, heatwaves, and cold waves -- and now they threaten food security..These events not only harmed individual farmers and food security

21m ago