সারাদিন না পড়েও ভালো ফলাফলের উপায়

ছবি: ফ্রিপিক

পরীক্ষায় ভালো ফল পেতে সারাদিন টেবিলে বসে পড়তে হবে এমন কোনো মানে নেই। এটি অভিভাবককে খুশি করতে কাজে আসতে পারে, মনোযোগ ধরে রাখতে নয়। এজন্য পাঁচটি টিপস জানলে অল্প সময়ে বেশি পড়া সম্ভব হতে পারে। 

চলুন জেনে নিই পরীক্ষার আগে কীভাবে পড়বেন।  

সম্ভাব্য লক্ষ্য নির্ধারণ

পড়তে বসার পেছনে সবচেয়ে কার্যকর উৎসাহ হিসেবে কাজ করবে আপনার লক্ষ্য। অধ্যয়নের পুরো সময়জুড়ে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য বাস্তব ও স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ জরুরি। এজন্য পড়া শুরুর আগে কী জানা প্রয়োজন, কেন প্রয়োজন, জানলে কী ফল পাবেন এবং না জানা থাকলে কী পেতে ব্যর্থ হবেন, তা আগে থেকেই চিন্তা করে নিন। নির্দিষ্ট ও পরিমাপযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারলে অধ্যয়নের জন্য দিকনির্দেশনা যেমন পাওয়া যায়, তেমনি অনুপ্রেরণাও উৎসাহ দেয়। ঠিক যেমন: দুই ঘণ্টার মধ্যে তিন পৃষ্ঠা নোট করবেন এবং অ্যাসাইনমেন্টের পরিকল্পনা সাজাবেন এমন ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন সময়ভেদে। এতে সময় অপচয় হ্রাস পাবে। আপনার পড়াও সময়মত এগিয়ে থাকবে। 

সক্রিয় অধ্যয়ন কৌশল ব্যবহার  

সক্রিয় অধ্যয়ন বা অ্যাক্টিভ স্টাডি তথ্য মনে রাখার জন্য বেশি উপযোগী। এর মাধ্যমে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে, নোট লিখে কিংবা মক টেস্ট দেওয়ার মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর আয়ত্ত করা যেতে পারে। নিষ্ক্রিয় অধ্যয়ন বা প্যাসিভ স্টাডিতে শুধু পড়া বা লিখার মাধ্যমে তথ্য মনে রাখলে চাপ বেড়ে যায়। ফলে পড়তে বসলেই ঘুম চলে আসার সমস্যা দেখা যায়। এজন্য সক্রিয় অধ্যয়ন পদ্ধতি অনুসরণ করলে কোনো বিষয় গভীরভাবে বুঝতে ও ধারণ করতে সহজ হয়। এটি সামারাইজিং, প্যারাফ্রেজিং বা ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য মনে রাখাকে উৎসাহিত করে। ফলে স্মৃতিশক্তির দুর্বলতাও কমে। 

কর্নেল নোট-টেকিং সিস্টেম ব্যবহার 

পড়ার সময় নোট করা প্রয়োজন কেন বা নোট করলে কী উপকার হয়? অনেকেই উত্তর দেবেন, অনেক তথ্য থেকে প্রয়োজনীয় বিষয় আলাদা করে টুকে রাখলে পরীক্ষার আগে চোখ বুলিয়ে নেওয়া সহজ হয়। হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক। তবে ল্যাপটপে বা কম্পিউটারে টাইপ করলে সেটিকে ঠিক নোট করা বোঝায় না। কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে, ল্যাপটপে নোট নেওয়ার চেয়ে হাতে লিখে নোট করা বেশি কার্যকর। আর 
নোট লেখার একটি কার্যকর পদ্ধতি হলো কর্নেল নোট-টেকিং সিস্টেম। অধ্যাপক ওয়াল্টার পাউক নোট লেখার পদ্ধতিকে সংকেত, নোট ও সারাংশ বিভাগে ভাগ করেছেন। বিস্তারিত বলতে গেলে- 

কর্নেল নোট-টেকিং সিস্টেম। ছবি: কর্নেল ইউনিভার্সিটি

কিউ/প্রশ্ন কলাম: প্রথমে প্রয়োজনীয় তথ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত কীওয়ার্ড, প্রশ্ন লিখে রাখতে হবে কলাম অনুসারে। যখন নোটের রিভিউ লিখবেন তখন এই সংকেতগুলো কাজে আসবে। যেমন, বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ে নোট করার সময় এটির কারণ, ক্ষতি, সমাধান পয়েন্ট করে নিতে পারেন। 

নোট কলাম: নোট কলামে পড়ার মূল বিষয়বস্তু লিখতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, ব্যাখ্যা, উদাহরণ ও বিশদ বিবরণ লেখার সময় সংক্ষিপ্ত রূপ ও প্রতীক ব্যবহার করতে হবে।

সারাংশ: নোট সম্পন্ন করার জন্য পুরো বিষয়বস্তুর একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ তৈরি করতে পৃষ্ঠার নিচে সারাংশ বিভাগ রাখতে হবে। এটি পুরো পদ্ধতির প্রধান গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অংশে সব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা থাকবে।  

এই নোট লেখার পদ্ধতি আপনার অধ্যয়নের বিষয়গুলো বুঝতে ও ধারণ করতে সাহায্য করবে।

পোমোডোরো কৌশল অনুসরণ

আপনার অধ্যয়নের সময় ছোট ছোট খণ্ডে বিভক্ত করে এবং বিরতি নিয়ে পড়ার জন্য উৎসাহিত করবে পোমোডোরো কৌশল। এই পদ্ধতি সময় অপচয় কমায় এবং মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। এর জন্য অ্যাপ বা টেবিল ঘড়ি ব্যবহার করতে পারেন। মূলত একটানা পড়লে একঘেয়েমি চলে আসে বিধায় বিরতি নিয়ে পড়লে বেশি উপকার পাওয়া যায়, এটিই প্রমাণ করাই পোমোডোরোর উদ্দেশ্য। এই কৌশলটির প্রভাব কতটা উপকারী তা জানতে নিজেই চেষ্টা করতে পারেন।  

অধ্যয়ন সেশন বৃদ্ধি করা 

অধ্যয়নের সেশন নির্দিষ্ট সময় থেকে বাড়িয়ে নিলে দীর্ঘমেয়াদে পড়া মনে থাকে। অধ্যাপক নেট কর্নেল স্পেসিং ও ম্যাসিং দুটি অধ্যয়ন কৌশলের মধ্যে কোনটি কার্যকর তা জানার জন্য একটি জরিপ করেছেন। যেখানে তিনি দেখতে পান স্পেসিং অধ্যয়ন পদ্ধতি অনুসরণকারী ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী বেশি তথ্য ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে এবং ম্যাসিং অধ্যয়ন পদ্ধতি অনুসরণকারী ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী একই ফলাফল অর্জন করেছে। শেষ সময়ে পড়ে পরীক্ষায় পাশ করা যেতে পারে, কিন্তু পরে সেটি মনে রাখা যায় না। 

স্পেসিং অধ্যয়ন পদ্ধতিতে প্রতিদিন প্রতিটি বিষয়ে অল্প সময়ের জন্য হলেও পড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিটি আরও গভীরভাবে তথ্য জানতে ও মনে রাখতে সাহায্য করে এবং পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা যায়। 

সর্বোপরি আপনি কতক্ষণ পড়লেন তা জরুরি নয়, বরং কতটা ভালোভাবে পড়লেন সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। উপর্যুক্ত কৌশল অনুশীলনের মাধ্যমে সারাদিন না পড়েই ভালো ফলাফল করা সম্ভব। 

Comments

The Daily Star  | English
Global fashion brands are reaping triple-digit profits on Bangladeshi garments

Fast fashion, fat margins: How retailers cash in on low-cost RMG

Global fashion brands are reaping triple-digit profits on Bangladeshi garments, buying at $3 and selling for three to four times more. Yet, they continue to pressure factories to cut prices further.

12h ago