পবিপ্রবিতে নিয়োগে অনিয়ম: ভিসিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

পটুয়াখালী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে গত মঙ্গলবার মামলা হয়েছে
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: স্টার

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে উপাচার্যসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।

পটুয়াখালী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে গত মঙ্গলবার মামলাটি করেন সেকশন অফিসার পদে এক আবেদনকারী ইসরাত জাহান অনি। আদালত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সমন বা কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী হুমায়ূন কবির বাদশা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন–বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রিজেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত,  রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু, ট্রেজারার অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান।

এর আগে একই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয় এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তদন্ত করছে।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর সেকশন অফিসার পদে একজন ও ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর তিন জনসহ অন্যান্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পবিপ্রবি'র রেজিস্ট্রারের দপ্তর। সেকশন অফিসার পদের জন্য ইসরাত জাহান অনি (মামলার বাদী) আবেদন করেন। ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর বাদীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হলে তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সাক্ষাৎকার দেন।

তার অভিযোগ, পবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের গঠিত নিয়োগ বাছাই কমিটি প্রকৃত মেধাবীদের বাছাই না করে স্বজনপ্রীতি করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের ছেলে শাওন চন্দ্র সামন্ত তনু, উপ-রেজিস্ট্রার জসিম উদ্দিন বাদলের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা, পবিপ্রবি কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি সাইদুর রহমান জুয়েলের ভাই মো. আরিফুর রহমান পিয়েল, পবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেকের ভাই মো. হাফিজুর রহমান, দুমকি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালামের ছেলে তানভীর হাসান স্বাধীন ও জেলা যুবলীগের সম্পাদকের স্ত্রী তাকছিনা নাজনীনকে সুপারিশ করে। পরবর্তীতে ২ ডিসেম্বর  রিজেন্ট বোর্ডের সভায় উপস্থাপনের মাধ্যমে তাদের চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয় এবং সেকশন অফিসার পদে বিজ্ঞপ্তিতে ৪ জন নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও বাছাই বোর্ড ৬ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে।

মামলায় আরও বলা হয়, সেকশন অফিসারসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম ও টাকা লেনদেনের গুঞ্জন রয়েছে। এ প্রক্রিয়ার কারণে মামলার বাদী ইসরাত জাহান অনি উপযুক্ত প্রার্থী হয়েও নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন। এজাহারে সেকশন অফিসারসহ অন্যান্য পদের নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পবিপ্রবির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বসু  বলেন, 'মামলা হয়েছে কি না বলতে পারব না, এখনো কোনো কাগজপত্র পাইনি।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, 'রেজিস্ট্রার সাহেবের কাছে শুনেছি মামলা হয়েছে, তবে এখনো মামলার কোনো কাগজ পাইনি। মামলা হলে অবশ্যই দাপ্তরিকভাবে মোকাবিলা করা হবে।'

এর আগে ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর পবিপ্রবিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে উপাচার্যের ছেলেসহ ৫৮ জনকে নিয়োগের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ জানুয়ারি ইউজিসি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিতে ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামানকে আহ্বায়ক ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম শেখকে সদস্যসচিব এবং অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপ পরিচালক মো. আব্দুল আলিমকে সদস্য করা হয়েছে।

Comments