নারায়ণগঞ্জ

ছাত্রদলের ৪ নেতাকর্মীকে পেটাল ছাত্রলীগ, ছবি তোলায় সাংবাদিককেও মারধর

মারধরে আহত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় ছাত্রদলের ৪ নেতাকর্মীকে দুই দফায় বেধড়ক পিটিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে একজন গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ছাত্রদলের অভিযোগ, শুক্রবার রাত ৮টায় কলেজ রোড এলাকায় মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন নেতাকর্মী মারধরে অংশ নেন।

মারধরে আহত হয়েছেন মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম রাজীব, মহানগরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি মো. অনিক, রাজীবের ভাই মো. কাজল ও ছাত্রদল কর্মী মো. সোহাগ হোসেন।

এ ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল জাগো নিউজের জেলা প্রতিনিধি মোবাস্বির শ্রাবণও মারধরের শিকার হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রদল সূত্র জানায়, কলেজরোড দিয়ে যাওয়ার সময় প্রথমে ছাত্রদল নেতা অনিক ও ছাত্রদলের কর্মী সোহাগকে মারধর করেন হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও তার লোকজন। পরে কলেজরোড মোড়ে রূপায়ন টাওয়ারের নিচে চায়ের দোকানের সামনে দ্বিতীয় দফায় আজিজুল ইসলাম রাজীব ও তার ভাই কাজলকে মারধর করা হয়। তাদের মারতে মারতে পাশে জেলা পরিষদের ডাক বাংলোর ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়েও ছাত্রদলের রাজীব ও কাজলকে বেধড়ক পেটান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

ছাত্রদল নেতাদের অভিযোগ, হাবিবুর রহমান রিয়াদের নেতৃত্বে যুবলীগ কর্মী কাউসার আহম্মেদ, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসমাইল রাফেল, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক অর্থ বিষয়ক সম্পাদক তোফা আহমেদসহ ২০-২৫ জন মারধরে অংশ নেয়। 

ছাত্রদলের ২ নেতাকে মারধরের খবর পেয়ে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনু ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও হেনস্থা করেন ছাত্রলীগের নেতারা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ২ ছাত্রদল নেতাকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর ছাত্রদল নেতা রাজীবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাজীব আমাকে ফোন করে জানায়, তাকে ও তার ভাইকে ডাক বাংলোর ভেতর নিয়ে মারধর করছে হাবিবুর রহমান রিয়াদসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে আমি আনোয়ার ভাই ও কয়েকজন বিএনপি নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে গেলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর চড়াও হয়। আমি রাস্তায় পুলিশের গাড়ি দেখে ডাক দিলে পুলিশ দুজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে সদর মডেল থানায় এবং পরে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়।'

'এর আগে প্রথম দফায় ছাত্রদলের অনিক ও সোহাগকে সরকারি তোলারাম কলেজ গেটের সামনে মারধর করে হাবিবুর রহমান রিয়াদসহ তার অনুসারীরা। রিয়াদ একজন সন্ত্রাসী। তোলারাম কলেজে ছাত্র-ছাত্রী সংসদের কোনো নির্বাচন হয় না। রিয়াদ নিজেকে ভিপি পরিচয় দিয়ে কলেজকে সন্ত্রাসের আস্তানা বানিয়েছে। প্রায় সময় কলেজের ভেতর ও বাইরে ছাত্র-ছাত্রী ও বিরোধীদলীয় ছাত্রনেতাদের তারা টর্চার করে', যোগ করেন এ বিএনপি নেতা।

ঘটনার সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে মারধরের শিকার সাংবাদিক মোবাস্বির শ্রাবণ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘটনাস্থলের ছবি তুললে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। শার্টের কলার চেপে ধরে মারধর করে। আমি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিলেও তারা আমাকে হেনস্থা করে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান রিয়াদ সাংবাদিকদের বলেন, 'ছিনতাইকারীদের স্থানীয় লোকজন পিটুনি দিয়েছে। তারা এখানে প্রায়ই ছিনতাই করে। আজ তাদের হাতেনাতে ধরে এলাকাবাসী ও কলেজের ছাত্ররা মারধর করেছে।'

সাংবাদিকের ওপর চড়াও হওয়ার প্রসঙ্গে রিয়াদ বলেন, 'ভিড়ের ভেতর হয়তো না চিনে ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এই ভুল করেছে। তারপরও সাংবাদিকের ওপর হাত তোলার বিচার আমি করব।'

এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান বলেন, 'মারধর করার পর ছিনতাইকারী বা উত্যক্তকারী বলা ছাত্রলীগের পুরোনো অভ্যাস। যারা মারধর করছে তারা সবাই সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের অনুসারী। তাদের নেতা শামীম ওসমান আমেরিকায় আছেন। সেখানে তিনি বিএনপি সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। ওই ঘটনায় নেতাকে খুশি করতে দফায় দফায় ছাত্রদল নেতাদের মারধর করেছে ছাত্রলীগ।'

এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, 'আমরা এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মামলা করার চেষ্টা করব। কিন্তু মামলা করতে গেলে পুলিশ তো আমাদের মামলা নেয় না।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মারধরের শিকার দুজনকে আহত অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। এ ঘটনাটি তদন্ত করছে পুলিশ। তদন্ত শেষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

2h ago