শাউট

টিউশনি শুরুর আগে যে বিষয়গুলো মনে রাখা জরুরি

বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্নাতক শিক্ষার্থীর অর্থ উপার্জনের মূল উৎস অন্য কোনো শিক্ষার্থীকে পড়ানো বা টিউশনি করা। করোনা মহামারির পর অনলাইন টিউশন বেড়ে গেছে, সেইসঙ্গে বেড়েছে টিউশনির চাহিদাও।

বিপরীত দিকে, টিউশনি করা বেশিরভাগ স্নাতক শিক্ষার্থীর জন্য এটি ধরনের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। একটা নির্দিষ্ট সময়ে এটি মানসিক চাপও তৈরি করতে পারে।

সেমিস্টারের শুরুতে কয়েক ঘণ্টা সময় টিউশনি করে কিছু অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করা তুলনামূলক সহজ। এই সময়ে একাডেমিক চাপও কিছুটা কম থাকে। ক্লাসের পরে টিউশনির জন্য কয়েক ঘণ্টা সময় দিতে কোনো সমস্যা হয় না।

কিন্তু টিউশনির সঙ্গে সময় মিলিয়ে চলতে গিয়ে এক সময় দেখা যায়, নিজের আর কোনো স্বাধীনতা নেই। টিউশনির সময়সূচির সঙ্গে মিলিয়ে সারাদিনের বাকি কাজের সময় বের করতে হয়। দেখা যায় অন্যান্য পরিকল্পনা, বন্ধুদের সময় দেওয়া, নতুন কিছু করার প্রচেষ্টা, নতুন কিছু শেখা বা দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য কাজের জন্য সময় ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

সবচেয়ে কঠিন সময় আসে সেমিস্টার শেষের দিকে চলে এলে। ল্যাব প্রোজেক্ট, প্রেজেন্টেশন, ক্লাস টেস্ট, কুইজ শুরু হওয়ার পর টিউশনির জন্য শুধু আড্ডা ছাড়লেই হয় না, এর প্রভাব পড়তে শুরু করে একাডেমিক দিকেও। তখন পরিস্থিতি দমবন্ধকর হয়ে যায়, কারণ একাডেমিক চাপের মধ্যেও টিউশনির জন্য সময় বের করতেই হয়।

বিষয়টি আরও করুণ হয়ে ওঠে, যখন নিজের একাডেমিক চাপের মধ্যে আপনি যে শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন তারও পরীক্ষা চলে আসে। তখন নিজের পড়াশুনার সময় থেকে সময় বের করে হলেও ওই শিক্ষার্থীকে বাড়তি সময় দিতে বাধ্য হতে হয়।

একাডেমিক ও টিউশনির জগতে ভারসাম্য রাখতে অবসর, বিনোদন বা সৃজনশীল কাজে আর সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না। ফলে, ক্রমাগত চিন্তা ও ক্লান্তি ঘিরে ধরে। তখন মনে হয়, খুব অল্প কিছু পাওয়ার জন্য হয়তো অনেক বেশি কিছু ত্যাগ করতে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সেমিস্টারের চাপ সামলাতে ঘুম কমাতে হবে, যা বড় প্রভাব ফেলবে শরীরের ওপর।

সাধারণভাবে চিন্তা করলে একটি বা দুটি টিউশনি করালে কোনো চাপ তৈরি হওয়ার কথা না। কিন্তু ঢাকার ট্রাফিকের হিসেব এর সঙ্গে যোগ করলে বিষয়টি আর সহজ থাকে না।

কর্মদিবসে লোকাল বাস বা রিকশাযোগে টিউশনে গেলে, যাওয়া ও আসায় যে সময় যাবে, তা টিউশনির জন্য দেওয়া সময়ের প্রায় সমান হয়ে যায়। যত সময়টুকু আপনি শিক্ষার্থীকে পড়ানোর জন্য দেন, অন্তত একই পরিমাণ সময় দিতে হয় যাতায়াতের জন্য।

শুধু তাই নয়, দিনের একটি দীর্ঘ সময় টিউশনি করার পর মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। কারণ, ক্রমাগত মস্তিষ্ককে চাপে রাখতে হয়, শিক্ষার্থীদের পড়া বুঝাতে হয়, অনুশীলনের সমস্যা সমাধান করতে হয়। এর ফলে, নতুন কোনো বিষয়ে মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে, নতুন দক্ষতা অর্জন কঠিন হয়ে পড়ে।

এর প্রভাব পড়ে সামাজিক জীবনেও। কারণ, কাছের মানুষদের যথেষ্ট সময় দেওয়া সম্ভব হয় না।

অনেক শিক্ষার্থীর জন্য টিউশনিই পড়াশুনার খরচ যোগানোর একমাত্র উপায়। এমনকি, অনেকের পরিবারও তাদের টিউশনির আয়ের ওপর নির্ভরশীল। তাই শত চাপের মধ্যেও টিউশনি ছেড়ে দেওয়ার কথা তারা ভাবতেও পারেন না।

আবার অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি করেন আর্থিক স্বাধীনতার জন্য। একবার উপার্জন করতে শুরু করলে নিজের খরচের জন্য পরিবারের পাঠানো টাকার ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমে আসে। টিউশনি বাদ দেওয়ার অর্থ, হাত খরচের জন্য জবাবদিহি করা এবং আর্থিক স্বাধীনতা হারানো।

সব বাস্তবতার মধ্যেও টিউশনি শুরু করার আগে এর সময়সহ সার্বিক দিক নিয়ে চিন্তা করা উচিত। সবকিছু ছেড়ে দিয়ে কেবল টিউশনি ও পড়াশুনায় সময় দিলে জীবনের ভারসাম্য হারিয়ে যেতে পারে। যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ওপর।

অনুবাদ করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia returns home from London

Khaleda Zia, accompanied by her two daughters-in-law Zubaida Rahman and Syeda Sharmila Rahman, is now on way to her Gulshan residence

1h ago