চট্টগ্রামের ফুসফুসে কেন আঘাত
চারদিকে শতবর্ষী প্রাচীন বৃক্ষ, ভরপুর জীববৈচিত্র্য, পাহাড়, আর ব্রিটিশ আমলের স্মৃতিঘেরা সিআরবি এলাকা। যাকে চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ বলা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে সেখানে একটি হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করে এই ‘ফুসফুস’ ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে।
সিআরবি এলাকা শুধু তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয় ঐতিহাসিক কারণেও এর গুরুত্ব তাৎপর্যপূর্ণ।
সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) হলো চট্টগ্রামের অবশিষ্ট কয়েকটি দালানের মধ্যে একটি যা চট্টগ্রামে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের দুশ বছরের ইতিহাসের কথা বলে।
১৮৭২ সালে তৎকালীন আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের সদরদপ্তর হিসেবে ভবনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহীরা সিআরবি এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছিল।
সিআরবি এলাকার শিরীষতলা চট্টগ্রামের একটি মুক্তমঞ্চ, যেখানে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ, ফাল্গুন, রবীন্দ্র, নজরুল জয়ন্তীসহ বাংলার ঐতিহ্যগত উৎসবগুলো সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়।
সিআরবি চট্টগ্রামের মানুষের কাছে একটি মিলনকেন্দ্রের নাম।
গত কয়েক বছর ধরে ডিসি হিলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় শিরীষতলা হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক চর্চার একমাত্র স্থান।
এখানে আছে শত বছরের অধিক প্রাচীন রেইনট্রি, গর্জনসহ অনেক বৃক্ষ।
প্রবীণ, নবীন আর শিশুদের প্রকৃতির সান্নিধ্যে গিয়ে গভীরভাবে প্রকৃতিকে উপলব্ধি করার একমাত্র আশ্রয়স্থলের নাম, সিআরবি।
সিআরবি হলো চট্টগ্রামের একটি হেরিটেইজ যেটি পুরো বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম এক নান্দনিক স্থান।
সিআরবিতে পিপিপির আওতায় প্রস্তাবিত ১০০ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ, ৫০ আসনের নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নিঃসন্দেহে সেখানকার প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়বে।
হাসপাতাল নির্মিত হলে শতবর্ষী বৃক্ষসহ অনেক গাছ কাটা পড়বে। প্রকৃতির এমন নৈসর্গিক স্থানে হাসপাতালের বিষাক্ত বর্জ্যের স্তুপ তৈরি হবে।
প্রকৃতি এবং ঐতিহ্য ধ্বংস করে বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করার এমন পরিকল্পনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
আমাদের সবার মনে রাখা উচিত যে সিআরবি হলো চট্টগ্রামের ফুসফুস।
জীবন ও প্রকৃতিতে পরিপূর্ণ এমন একটি সামাজিক, প্রাকৃতিক এবং ঐতিহাসিক জায়গায় কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ করার পরিকল্পনা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ঐতিহ্য আর প্রকৃতি ঘেরা নান্দনিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সিআরবি ধ্বংসের পরিকল্পনাকারীদের শুভ চিন্তার উদয় হোক।
Comments