অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা ফৌজদারি অপরাধ

বলা হয়, যখন কেউ নিরাপত্তা নিয়ে খেলে, নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে এবং নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ না করে তাড়াহুড়ো করে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করে, দুর্ঘটনা তখনই ঘটে।
এমভি অভিযান-১০ এর সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে এ সব মূর্খতাপূর্ণ কাজ প্রকাশিত হয়েছে, যেগুলোয় স্থলপথের পরিবহন খাতও জর্জরিত হয়ে আছে। এমন ট্র্যাজেডির যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে লক্ষ্যে সমস্যাগুলো স্পষ্টভাবে ও জরুরিভিত্তিতে সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দেখে আমরা অবাক হচ্ছি।
আমরা আবারও বলছি, অগ্নিকাণ্ডে ৪১ জনের প্রাণ হারানোর ঘটনাটি 'দুর্ঘটনা' নয়, হত্যাকাণ্ড। লঞ্চটির মালিক অনুমোদিত ইঞ্জিনের চেয়ে আরও শক্তিশালী ইঞ্জিন ব্যবহার করেছিলেন। এটিই একমাত্র লঙ্ঘিত নিয়ম নয়।
লঞ্চের ক্রুরা প্রশিক্ষিত ছিলেন না। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ছিল, তবে সেগুলো কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা কেউ জানতেন না। এই ধরনের নিয়ম লঙ্ঘন ব্যতিক্রম কিছু নয়, বরং এগুলোই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুর্ঘটনা ঘটার পর এসব উন্মোচিত হয়। নদীপথ, সড়ক বা রেল—পরিবহন খাতের পুরোটা জুড়েই এ অবস্থা।
নদীপথের সাম্প্রতিক এই দুর্ঘটনায় যে কোনো প্রশাসনের লজ্জিত হওয়া উচিত। হতাহতের ঘটনা সহজেই এড়ানোর বিষয়ে তাদের সচেতন হওয়া উচিত।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের অভাব বিষয়ে কথা উঠলে আমরা প্রায়ই 'জনবলের অভাব' থাকার কথা শুনি। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, বিআইডব্লিউটিসির জাহাজগুলো পর্যন্ত ফিটনেস সনদ ছাড়াই চলাচল করছে।
গত অক্টোবরে পাটুরিয়া ঘাটে 'শাহ আমানত' ফেরি ডুবে যাওয়ার পর এই ভয়ঙ্কর সত্যটি উন্মোচিত হয়। ফেরিটি দীর্ঘদিন অচল হয়ে পড়েছিল। এর কর্মক্ষমতা শেষ হয়ে গিয়েছিল। অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের উচিত প্রথমে নিজেদের বিষয়গুলো ঠিক করা।
পরিতাপের বিষয়, ঘন ঘন ঘটতে থাকা এই ধরনের প্রতিটি ট্র্যাজেডির পর যথারীতি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে এবং তারপর আর কিছুই ঘটে না।
২০২০ সালের ২৯ জুন এমভি ময়ূর দুর্ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি লঞ্চ মাস্টার ও চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে লঞ্চগুলোয় আধুনিক প্রযুক্তি স্থাপনসহ ১৬টি সুপারিশ করেছিল।
সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা থেকে বোঝা যায়, সেগুলোর কিছুই করা হয়নি। প্রশ্ন হলো: কেন?
পরিবহন খাত সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকার প্রাথমিক কারণগুলো হলো—সুপারিশগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয় না, দায়ীদের জবাবদিহি করতে বাধ্য করা হয় না, তদারকির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের দায়িত্ব পালন না করার জন্য দায়ী করা হয় না। এসব বিষয়ের সুরাহা না হলে সড়ক, রেল ও নৌপথের যাত্রীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যেই থাকবে।
অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম
Comments