দেশি ফল ডেউয়ার যত গুণাগুণ

বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে এক সময় ডেউয়া (স্থানভেদে একে ডেওয়া, ডেউফল, বা বটবেলও বলা হয়) খুবই পরিচিত একটি মৌসুমি ফল ছিল। এটি কেবল খেতে সুস্বাদুই নয়, এর নানা অংশ যেমন পাতা, বাকল, শিকড়, ফল ঔষধি গুণেও সমৃদ্ধ। বর্তমানে অনেক ফলের ভিড়ে এই ফল হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে ডেউয়া ফলের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা জানলে এটিকে খাদ্যতালিকায় রাখতে উৎসাহী হবেন সবাই।
আজকে জানব ডেউয়া ফলের উপকারিতা। জানিয়েছেন ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের সিনিয়র পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী।
তিনি বলেন, যেকোনো মৌসুমি ফলই শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। ডেউয়াও তেমন একটি মৌসুমি ফল। আগে গ্রামে গাছ থেকে ডেউয়া পেড়ে ছোট ছোট টুকরো করে বিক্রি হতো। বাচ্চারা এটি খেয়ে মজা পেত। কেউ কেউ লবণ-মরিচ মিশিয়ে খেতে পছন্দ করেন। আবার শুকনো ডেউয়া ফল চটকে গরম পানিতে ভিজিয়ে শরবতও বানানো হয়। এটি দিয়ে আচারও তৈরি করা হয়।
ডেউয়া ফলের পুষ্টিগুণ
১০০ গ্রাম ডেউয়া ফলের আনুমানিক পুষ্টি উপাদান-
শক্তি (ক্যালরি) ৬০-৭০ ক্যালরি
পানি ৭৫-৮০ গ্রাম
শর্করা (কার্বোহাইড্রেট) ১৫-১৮ গ্রাম
আঁশ ২-৪ গ্রাম
প্রোটিন ১.৫-২.০ গ্রাম
ফ্যাট (চর্বি) ০.২-০.৫ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ৩০-৪৫ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ২০-২৫ মিলিগ্রাম
আয়রন (লোহা) ১-২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ০.৮-১ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ (বিটা ক্যারোটিন) উল্লেখযোগ্য পরিমাণ
এছাড়া এতে ট্যানিন, ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কিছু অ্যালকালয়েড জাতীয় উপাদানও রয়েছে, যা দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
ডেউয়া ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. হজমে সহায়ক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
ডেউয়া ফলে থাকা প্রাকৃতিক আঁশ হজমে সহায়তা করে। এটি অন্ত্রের গতিশীলতা বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য উপকারী, যারা হজম সমস্যা বা অনিয়মিত মলত্যাগের সমস্যায় ভোগেন। ডেউয়া ফলের টকজাতীয় স্বাদ ও আঁশ মলত্যাগ সহজ করে। এটি অন্ত্রে জমে থাকা টক্সিন ও বর্জ্য বের করতে সাহায্য করে, ফলে শরীর থাকে পরিষ্কার ও সতেজ।
২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ফলে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ও ভিটামিন সি দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই উপাদানগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সর্দি-কাশি, সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি দেহে ফ্রি র্যাডিক্যালের প্রভাব কমায় এবং বার্ধক্য রোধে সাহায্য করে। এটি ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে বলেও গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
৩. রক্তশূন্যতা রোধে সহায়ক
ডেউয়া ফলে উচ্চমাত্রার আয়রন (লোহা) রয়েছে, যা হিমোগ্লোবিন তৈরি ও রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়ক। বিশেষ করে নারীরা যারা মাসিকের কারণে নিয়মিত রক্ত হারান, তাদের জন্য এটি কার্যকর।
৪. ত্বক ও চুলের যত্নে কার্যকর
ভিটামিন এ ও সি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়। একইসঙ্গে এর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পড়া কমায়।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
কম ক্যালরি ও উচ্চ আঁশযুক্ত হওয়ায় ডেউয়া ফল খাওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, অতিরিক্ত খাওয়া রোধ করে।
৬. দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
ডেউয়া ফল প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানে ভরপুর, যা মুখের জীবাণু ধ্বংস করে, দাঁতের ব্যথা ও মুখের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে।
৭. শক্তি সরবরাহ করে
প্রাকৃতিক শর্করা ও কিছু পরিমাণ ভিটামিন ডেউয়া ফলে থাকে, যা দ্রুত শক্তি দেয়। যারা গ্রীষ্মকালে দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভব করেন, তাদের জন্য এটি উপকারী।
সতর্কতা
যদিও ডেউয়া ফল সাধারণত নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত খেলে কিছু ক্ষেত্রে হালকা পেটের সমস্যা হতে পারে। যাদের গ্যাসের সমস্যা হওয়ার প্রবণতা আছে, তারা খালি পেটে এটি না খাওয়াই ভালো।
Comments