নিখোঁজদের পরিবারকে হয়রানি বন্ধ করুন

পুলিশ যেভাবে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে হয়রানি করেছে, তাতে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।

পুলিশ যেভাবে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে হয়রানি করেছে, তাতে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকটি পরিবার অভিযোগ করেছে, নিখোঁজ স্বজনদের সম্পর্কে তথ্য গোপন করে ইচ্ছাকৃতভাবে কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করেছেন 'স্বীকার করে' আগে থেকে লেখা বিবৃতিতে সই করতে পুলিশ তাদেরকে বাধ্য করেছে।

নিখোঁজদের পরিবারগুলোর প্ল্যাটফর্ম 'মায়ের ডাকে'র তথ্য মতে, পুলিশ সম্প্রতি অন্তত ১০ পরিবারে গিয়েছে এবং তাদের সাধারণ ডায়েরির (জিডি) বিবরণ পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কয়েকটি পরিবার ওই বিবৃতিতে সই করা এড়াতে সক্ষম হলেও চাপের কাছে হার মানতে হয়েছে বাকিদের।

তাদের দাবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেদের ওপর থেকে দোষ সরাতে এটি করছে। যদিও পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা তাদের তদন্তের অংশ হিসেবে পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করে তথ্য 'আপডেট' করতে চেয়েছিল।

কীভাবে সাদা পোশাকের কর্মকর্তারা 'অনেক ভুক্তভোগীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন', তা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে। কিন্তু, কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার যথেষ্ট পরিস্থিতিগত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীদের পরিবার মামলা করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

এই পরিবারগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জিডি করতে পেরেছে। এখন তারা তাদের দাবিও প্রত্যাহার করতে বাধ্য হচ্ছে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের কিছু ঘটনা বহু বছর আগের। তাহলে হঠাৎ করে কী কারণে পুলিশ পরিবারগুলোর ওপর চাপ দিতে শুরু করল?

আমরা মনে করছি, সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক চাপের সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। স্পষ্টতই আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ভুল পদ্ধতিতে নিজেদের বিতর্কমুক্ত রাখার চেষ্টা করছে। খুঁজে বের করার পরিবর্তে তারা 'নিখোঁজ'দের ও তাদের পরিবারগুলোকে আরও দুর্ভোগে ফেলছে।

এখানে প্রশ্ন হলো, পুলিশ যদি সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা না দিয়ে ভয় দেখিয়ে কিছু করতে বাধ্য করে, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? কেন আমরা দেশ হিসেবে এখনো এমন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি, যা ক্ষতিগ্রস্তদের ভয় দেখানোর পরিবর্তে তাদের সুরক্ষা দেবে?

বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার রাষ্ট্রের কাছে সুরক্ষা চাচ্ছে। এটি তাদের প্রাপ্য। কিন্তু, সুরক্ষার পরিবর্তে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছে।

পরিবারগুলো চায়, তাদের দুর্দশাকে রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিক। এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে নিখোঁজ হওয়ার দাবি অস্বীকার করে বলেছেন, ভুক্তভোগীরা নিজের ইচ্ছায় পালিয়ে গেছেন। যদি সত্যিই এটি হয়ে থাকে, তাহলে তা প্রমাণের ভার রাষ্ট্রের ওপর বর্তায়; ভুক্তভোগীদের ওপর নয়।

আমরা সরকারের প্রতি এই বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে নিতে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এসব পরিবারকে হয়রানি করা বন্ধ করতে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও সঠিক তদন্তের মাধ্যমে নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর এমন জবরদস্তি ও স্বেচ্ছাচারপূর্ণ আচরণ নিন্দনীয়। এতে দেশের ভাবমূর্তিই কেবল ক্ষুণ্ণ হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Beyond Dollar: Bangladesh to seek over 36b yuan in Chinese loans

Bangladesh is going to seek more than 36 billion yuan, equivalent to $5 billion, as soft loans from China to reduce pressure on its dollar reserves.

10h ago