ধুন্দল কেন খাদ্যতালিকায় রাখবেন

আমাদের আশপাশে এমন অনেক সহজলভ্য সবজি আছে, যেগুলো নীরবে-নিভৃতে শরীরের জন্য কাজ করে যাচ্ছে চিকিৎসকের মতো। ধুন্দল ঠিক তেমনই একটি সবজি। সবুজ রঙের ধুন্দল সবজির সঙ্গে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত। এই সবজি সারা বছরই পাওয়া যায়। মাছ রান্না বা ভাজি যা-ই বলুন এই সবজির তরকারি খুবই সুস্বাদু।
চলুন আজকে জেনে নিই ধুন্দলের উপকারিতা। এ বিষয়ে জানিয়েছেন লাইফ ট্রাস্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং জেনেরিক হেলথ কেয়ার সেন্টারের পুষ্টিবিদ মাহিনুর ফেরদৌস।
তিনি বলেন, আধুনিক যুগে সুস্থ থাকতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে প্রাকৃতিক, সহজ ও পুষ্টিকর খাবারের দিকে। সব ধরনের শাকসবজিই শরীরের জন্য ভীষণ উপকারি। শাকসবজি শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ করে। ধুন্দলও এমন একটি উপকারি সবজি। এটি শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, হজমশক্তি বাড়ানো, ত্বক ও চুলের যত্ন, রোগপ্রতিরোধ ইত্যাদি অনেক কাজ করে।
ধুন্দলের পুষ্টি উপাদান
প্রতি ১০০ গ্রাম ধুন্দল সবজিতে পাওয়া যায়-
জলীয় অংশ: ৯৩-৯৫%
শক্তি: ১৪–২০ কিলোক্যালোরি
কার্বোহাইড্রেট: ৩.০ গ্রাম
প্রোটিন: ০.৬ গ্রাম
ফ্যাট: ০.১ গ্রাম
আঁশ (ফাইবার): ০.৮ গ্রাম
ভিটামিন সি: ১০–১৩ মি.গ্রা
বিটা ক্যারোটিন (ভিটামিন এ এর উৎস): ১০০–১৫০ মাইক্রোগ্রাম
ক্যালসিয়াম: ২০–২৫ মি.গ্রা
লোহা: ০.৩ মি.গ্রা
পটাশিয়াম: প্রায় ২০০ মি.গ্রা
এছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
ধুন্দল খেলে কী উপকার
১. হজমে সহায়ক
ধুন্দল অত্যন্ত সহজপাচ্য একটি সবজি। যারা হজমে সমস্যা ভোগেন বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কষ্ট পান, তাদের জন্য এটি দারুণ উপকারী। ধুন্দলের ফাইবার অন্ত্রের গতি স্বাভাবিক রাখে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
২. ওজন কমাতে সহায়তা করে
যেহেতু ধুন্দলে ক্যালোরি ও চর্বির পরিমাণ খুবই কম, তাই এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। যারা ওজন কমাতে চান বা স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলেন, তাদের খাদ্যতালিকায় ধুন্দল অবশ্যই রাখা উচিত।
৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
ধুন্দলের শর্করা রক্তে ধীরে মেশে, ফলে এটি রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা বাড়ায় না হঠাৎ করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি নিরাপদ একটি খাবার।
৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
ধুন্দলে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। এটি হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।
৫. দেহের জলীয় ভারসাম্য বজায় রাখে
ধুন্দলের ৯০ ভাগের বেশি অংশই পানি। তাই এটি দেহে পানিশূন্যতা রোধে সাহায্য করে। বিশেষ করে গরমের সময় বা প্রচণ্ড ঘামের ফলে যারা দুর্বল হয়ে পড়েন, তাদের জন্য ধুন্দল এক প্রাকৃতিক পানিশক্তি পুনরুদ্ধারকারী খাবার।
৬. ত্বক ও চুলের যত্নে সহায়ক
ধুন্দলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের কোষ সজীব রাখে। ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বার্ধক্যজনিত রেখা প্রতিরোধ করে। একইসঙ্গে এটি চুলের গোড়াও মজবুত রাখে।
৭. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ধুন্দলে থাকা ভিটামিন সি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। সর্দি-কাশি, সংক্রমণ ও সাধারণ ঠান্ডা প্রতিরোধে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৮. লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায়
ধুন্দলের ডিটক্সিফাইং (বিষাক্ত পদার্থ দূর করার) গুণ রয়েছে। এটি দেহের দূষিত পদার্থ মল ও ঘামের মাধ্যমে বের করে দিতে সাহায্য করে। ফলে লিভার ও কিডনি সুস্থ থাকে।
৯. বাত ও জয়েন্ট ব্যথায় আরাম দেয়
লোকজ চিকিৎসায় ধুন্দলের পাতা, শিকড় ও রস ব্যবহার করা হয় অস্থিসন্ধির ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে। গরমে সেঁক বা সরাসরি প্রয়োগে ব্যথা উপশমের প্রমাণ রয়েছে বহু বছর ধরে।
১০. গরমে শরীর ঠান্ডা রাখে
গ্রীষ্মকালে ধুন্দল খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে, ক্লান্তি কমে এবং হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা কমে যায়। এতে ঘামের মাধ্যমে লবণ-পানির ভারসাম্য রক্ষা হয়।
ধুন্দলের রান্না ও ব্যবহার
ধুন্দল সাধারণত রান্নায় ব্যবহার হয় নানাভাবে। যেমন- ধুন্দল ভাজি, ধুন্দল দিয়ে মসুর ডাল, ধুন্দল চিংড়ি, ধুন্দল-পেঁয়াজের ভর্তা, ধুন্দল দিয়ে সবজি খিচুড়ি বা স্যুপ। তবে রান্নার সময় অতিরিক্ত তেল-মশলা ব্যবহার করলে বা অনেক সময় ধরে রান্না করলে পুষ্টিগুণ কমে যেতো পারে।
সতর্কতা
যদিও ধুন্দল নিরাপদ সবজি, তারপরও যাদের পেটে গ্যাসের সমস্যা বা অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি রয়েছে, তাদের এটি সেদ্ধ করে বা ডালের সঙ্গে খাওয়াই উত্তম। কাঁচা বা বেশি তেল-মসলা দিয়ে রান্না করা ধুন্দল হজমে সমস্যা করতে পারে।
Comments