পরিবেশ অধিদপ্তর দুর্নীতিতে দূষিত?

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নতুন এক প্রতিবেদনে পরিবেশ অধিদপ্তরকে যে পরিমাণ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর হস্তক্ষেপ ছাড়া দেশের পরিবেশ কেন এত দ্রুত দূষিত হচ্ছে— তার একটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী সেবা দেওয়ার পরিবর্তে ঘুষ নিয়ে কারখানা মালিকদের প্রয়োজনীয় সনদ দিচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এটি অধিদপ্তরের ওপর অর্পিত দায়িত্বের চরম লঙ্ঘন এবং পুরোপুরি অপরাধমূলক একটি কাজ।

গবেষণায় পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, তত্ত্বাবধান ও সুরক্ষার জন্য দেশের একমাত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অনিয়ম, দুর্নীতি ও অদক্ষতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই বাস্তবতায় ঢাকা কেন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর একটি, তা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু আছে কি?

টিআইবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কারখানা স্থাপনের জন্য সাইট ক্লিয়ারেন্স ও পরিবেশগত ছাড়পত্র পেতে আগ্রহী পক্ষগুলোকে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ১ লাখ ৮ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা পর্যন্ত মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী এই সনদপত্রগুলো থাকা ব্যবসা ও অন্যান্য কাজের জন্য বাধ্যতামূলক। 

বাংলাদেশে কারখানাগুলোকে দূষণের মাত্রা অনুযায়ী সবুজ, কমলা ও লাল হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। যেসব কারখানাকে লাল হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, সেগুলো সবচেয়ে বেশি মাত্রার দূষণকারী। কমলা ও লাল হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে ৫৭ শতাংশ পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা জমা না দিলেও, পরিবেশ অধিদপ্তর এগুলোকে পরিবেশগত ছাড়পত্র দিয়েছে। কিন্তু ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য এই পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাধ্যতামূলক।

এসব ঘটনা দৈবক্রমে ঘটেছে— তা বলার কোনো উপায় নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা স্পষ্টতই বিভিন্ন অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণের সঙ্গে জড়িত। সেই কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

দূষণকারীদের জরিমানা বাতিল এবং তাদের অকার্যকর বর্জ্য শোধনাগার পরিচালনা করার অনুমোদন দেওয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দূষণকারীদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন, টিআইবি সেই প্রমাণ পেয়েছে বলে জানা গেছে। টিআইবি যদি এত বড় ধরনের দুর্নীতি উদঘাটন করতে পারে, তাহলে সরকারের উদঘাটনের কাজটি করতে বাধা কোথায় ছিল— তা ভাবছি আমরা।

এসব অনিয়ম পরিবেশ অধিদপ্তরে ঘটলেও ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশ ও জনগণের। এমনকি গত কপ সম্মেলনের সময়ও বাংলাদেশকে আমাদের গ্রহ ও এর বাসিন্দাদের স্বার্থে পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বে নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে দেখা হয়েছিল। কিন্তু নিজেদের মাটিতে এমন অনিয়ম ঘটলে বিশ্বজুড়ে অন্যদের পরামর্শ দেওয়ার কোন অধিকার থাকছে আমাদের?

টিআইবির উদ্ঘাটনগুলো এতটাই ভয়াবহ যে, আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান না জানিয়ে পারছি না। সরকারের উচিত অবিলম্বে প্রতিবেদনে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত শুরু করা, প্রতিবেদনে থাকা প্রমাণগুলো যত্ন নিয়ে বিশ্লেষণ করা এবং অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে নিজেরা তদন্ত করা। কোনো কর্মকর্তা বা প্রভাবশালী ব্যক্তির এ সংক্রান্ত যেকোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। পাশাপাশি, এখন থেকে পরিবেশ সংক্রান্ত সব আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। 

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh bank reform plan 2025

Inside the 3-year plan to fix banks

Bangladesh has committed to a sweeping overhaul of its troubled financial sector, outlining a detailed three-year roadmap as part of its latest agreement with the International Monetary Fund.

10h ago