সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগে বিলম্ব কেন?

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের জন্য আইন প্রণয়ন এখন অপরিহার্য বলে প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের সঙ্গে আমরা কোনো দ্বিধা ছাড়াই সম্পূর্ণভাবে একমত। আমাদের সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদেও এমন একটি আইন থাকা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী অতীতে আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে, সরকার এজন্য একটি আইন প্রণয়ন করবে। তবে হতাশাজনক বিষয় হলো আইনটি এখনো করা হয়নি।
যে দেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছে, সে দেশে সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের জন্য আইন না থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রধান বিচারপতি যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, এ ধরনের আইনের অনুপস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে জনগণের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি থেকে যায়। কীভাবে এবং কীসের ভিত্তিতে বিচারপতিদের সর্বোচ্চ আদালতে নিয়োগ দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করে এমন একটি আইন থাকলে প্রক্রিয়াটিকে আরও স্বচ্ছ করে তুলবে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কার্যকরভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়াটিকে দ্রুততর করতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া, বেশ কয়েকজন বিচারপতি অবসরে গেছেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের বিপরীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিয়োগ না দেওয়ায় হাইকোর্টে এখন ৯১ জন বিচারপতি রয়েছেন। তবে ২০১২ সালে ছিলেন ১০১ জন। বর্তমানে আপিল বিভাগে মাত্র ৫ জন বিচারপতি রয়েছেন। আপিল এবং হাইকোর্ট উভয় বিভাগে অসংখ্য মামলা জমা হয়ে আছে। আইনি ও সাংবিধানিক বিষয়ে গবেষণা পরিচালনাকারী সংস্থা 'ল ল্যাব'র তথ্যানুসারে, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ২২৫টি এবং হাইকোর্টে ছিল ৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৬৩টি। তার মানে দাঁড়ায়, আপিল বিভাগে প্রত্যেক বিচারপতির কাছে ৩ হাজার ৪৫টি এবং হাইকোর্টের প্রত্যেক বিচারপতির কাছে ৪ হাজার ৯২৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
একজন বিচারপতির কাছে এতো সংখ্যক মামলার নিষ্পত্তি আশা করা নিছক অযৌক্তিক। তা ছাড়া, মামলার সংখ্যা যতই বাড়ছে, বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তিও ততো বাড়ছে। প্রধান বিচারপতি সারাদেশের সব স্তরের আদালতে বিচারকের সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগের মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত। আমরা আহ্বান জানাই, সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের জন্য একটি আইন প্রণয়নের জন্য জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
অনুবাদ করেছেন সুমন আলী
Comments