অক্টোবরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ

করোনা মহামারির প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতির চাকা পুরোদমে সচল হওয়ায় অক্টোবরে দেশের বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা গত ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

করোনা মহামারির প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতির চাকা পুরোদমে সচল হওয়ায় অক্টোবরে দেশের বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা গত ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ব্যাংকাররা বলছেন, মূলত সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের নিয়ন্ত্রণ উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে উৎসাহিত করেছে। যে কারণে ঋণের এই প্রবৃদ্ধি।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর সেবা ও পণ্যের চাহিদা কমে আসার পরিপ্রেক্ষিতে ঋণের প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়ে।আগের বছরের সেপ্টেম্বরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। কিন্তু চলতি বছরের অক্টোবরের আগে তা প্রায় ৮ শতাংশ বা এর আশপাশে ছিল।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিনের ভাষ্য, দেশ ও দেশের বাইরে মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চলতি মূলধন ও আমদানি অর্থায়নের চাহিদা অনেকাংশে বেড়েছে।

তিনি বলেন, 'এটা ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।'

এর পাশাপাশি সরকার করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ সফলভাবে মোকাবিলা করার পর ব্যবসায়ীরা আস্থা ফিরে পেয়েছেন। তারা এখন ব্যবসা সম্প্রসারণ ও নতুন শিল্প স্থাপনে অর্থায়নের জন্য ঋণ চাচ্ছেন।

এই প্রেক্ষাপটে সামনের দিনগুলোতে ব্যাংকিং খাতে তারল্যের চাপ আরও বাড়তে পারে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি অব্যাহত রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন শিরিন।

তারল্য সংকট কমিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর মধ্যে বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত ৩১ অক্টোবর কল মানি মার্কেটে সুদ হার ছিল ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। নভেম্বরের ১৮ তারিখে তা বেড়ে ৪ দশমিক ৫২ শতাংশে পৌঁছায়। কল মানি মার্কেটের মাধ্যমে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরের কাছ থেকে টাকা ধার করে বা ঋণ দেয়।

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নভেম্বরের শেষ দিকে টাকা তোলা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে কল মানি সুদ হার কমে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশে নেমে আসে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, প্রণোদনা তহবিল নেওয়া কিছু ঋণগ্রহীতা এখন ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না।

তাই খেলাপি হওয়া থেকে রক্ষা করতে ব্যাংকগুলো এখন ঋণ নবায়ন করতে শুরু করেছে, যা ব্যাংকিং খাতে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছে বলে জানান মাহবুবুর রহমান।

তবে তিনি বলেন, ঋণের চাহিদা বাড়ছে।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক জানান, আমদানি সম্পন্ন করতে ব্যবসায়ীরা যে বিদেশি ঋণ নেন, তা পরিশোধের জন্য করোনা মহামারির চূড়ান্ত পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময় বাড়িয়েছিল।

তিনি বলেন, ওই ঋণগুলো এখন পরিশোধের সময় হওয়ায় ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে।

তা ছাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় খুলে যাওয়ার বিষয়টিও ঋণের প্রবাহ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেন এমরানুল হক।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তারা তাদের কার্যক্রম পুনরায় চালু করেছেন। তারা এখন ব্যাংক ঋণের জন্য আবেদন করছেন।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন দেশে ছড়িয়ে পড়লে ঋণের প্রবৃদ্ধি আবার ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন এমরানুল হক।

এদিকে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী ঋণ প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হওয়ার পেছনে আমদানি অর্থায়নের বিষয়টিকেও সামনে আনেন। জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে আমদানি ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটা ৫১ শতাংশ বেশি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিশ্ববাজারে দ্রুত পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াই এর বড় কারণ।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম ধারণা করছেন, আগামী দিনগুলোতে ঋণের প্রবৃদ্ধি তীব্রভাবে বাড়বে। কারণ উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য মরিয়া হয়ে তহবিল খুঁজছেন।

তিনি বলেন, 'এতে ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ তৈরি হবে।' তাই এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান শামস-উল ইসলাম।

চলতি অর্থবছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেসরকারি খাতে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। একই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গত অর্থবছরে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমে আসে।

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments